Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গণস্বাস্থের কিট অনুমোদন নিয়ে জটিলতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ৮:১৯ পিএম

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে কিট উদ্ভাবন করেছে, সেটা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর নেয়নি উল্লেখ করে কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ব্যবসায়িক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের কিট গ্রহণ করেনি। আমরা জনগণের স্বার্থে শুধু সরকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কিটটি কার্যকর কিনা, তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে প্রতি পদে পদে পায়ে শিকল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ কথা বলেন। এর আগে গত শনিবার একই জায়গায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ হস্তান্তর করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমন্ত্রণ জানানোর পরও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত এ কিট গ্রহণের জন্য যায়নি সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান। পরদিনই এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যালয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন এটি জমা দিতে যান। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর তা গ্রহণ করেনি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজনের একজনকে ওষুধ প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জমা নেবেন না। আমরা গিয়েছিলাম, তারা জমা নেননি। প্রথমে বলেন যে সিআরও নিয়ে আসেন। তারপরে বলেন, এটা আপনারা ভেরিফিকেশন করে আনেন সিআরও থেকে। সিআরও হলো চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ওখানে পয়সা দিতে হবে। কত খরচ লাগবে, তা উনারা (সিআরও) বাজেট দেবেন। পরে আইসিডিডিআরবি থেকে ভেরিফিকেশন করিয়ে আনার কথা বলেন। আইসিডিডিআরবি লকডাউন থাকায় তারা বিএসএমএমইউ, আইইডিসিআর কিংবা আর্মি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি থেকে কার্যকারিতা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখার প্রস্তাব দিলেও তা মানা হয়নি।
তিনি বলেন, জাতির এ দুর্যোগের সময় যুগান্তকারী আবিষ্কার এ কিট কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যেখানে ইরানে এ ধরনের কিট প্রতিদিন ১০ লাখ তৈরি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে তারা কিট জমাই রাখেননি। যে কোনো ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষাতে আপত্তি নেই। কিন্তু জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তারা এখন বাজেট ঠিক করবেন, তারপর সিআরও’র মাধ্যমে রিপোর্ট নেবেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে, কিভাবে তারা ব্যবসায়িক স্বার্থকে রক্ষা করছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর অনৈতিক কাজ করছে, দেশের ক্ষতি করছে। তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে রেখে চলেন, তাতে তাদের লেনদেনে সুবিধা হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ প্রধান বলেন, প্রথমে আমাদের বললো, অনুমোদন নেই দেখে আমরা আসতে পারব না। আমরা তো আপনাদের হাতে দিতে চাই, যাতে আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমাদের গতকাল বলা হলো, তারা আসবেন না। ঠিক আছে, আজকে আমরা গেলাম। আজকে গণস্বাস্থ্যের ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন গেলেন। তারপরও দেখেন, কেমন আমলাতান্ত্রিকতা। দুজনকে ঢুকতে দেবে, আরেকজনকে দেবে না। অথচ বাইরের তিনজন লোককে ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন। তাদের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট লোকদের ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন। ফিরোজ, তিনি হেড অব এ ডিপার্টমেন্ট অব নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পদমর্যাদায় ওই ডিজি সাহেবের সমতুল্য তিনি। এ জাতীয় লোককে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি যুক্তিতর্কে হেরে যাওয়ার ভয়ে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানীরা জনস্বার্থে এটি আবিষ্কার করেছেন। এটি ব্যবহারে যত দেরি হবে জনগণের ক্ষতি ততো বেশি হবে। এ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের গুরুত্ব আমরা ওষুধ প্রশাসনকে বোঝাতে পারছি না। সিআরও নামের এজেন্টকে পরীক্ষার জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। আমরা চাই এটির মূল্য ২৫০ থেকে ২০০ টাকা নামাতে, আর তারা ব্যবসায়িক স্বার্থে নানা অজুহাতে ৫০০ টাকা দাম করতে চায়। ওষুধ প্রশাসন থেকে বলা হয়, দাম বাড়লে বাড়বে। এটা কি জনস্বার্থের কথা হলো? আমার ধারণা একটা শ্রেণী সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
তিনি বলেন, গত ১২ এপ্রিল কিটের যথার্থতা প্রমাণের জন্য সরকারের কাছে রক্ত চেয়েছি। কিন্তু পেয়েছি ২২ এপ্রিল, তাও আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপের পর। আমার মতো লোক ২৫ বার ফোন করেছি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকের উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আপনাদের সকল ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে দেবো, তবে ঘুষ দেবো না। গণস্বাস্থ্যের ৪৮ বছরে কাউকে ঘুষ দেইনি, এতে প্রোডাক্ট বাজারে আসুক না আসুক, আমরা ঘুষ দেইনি, দেবো না। এই দুর্নীতির অংশীদার হইনি, হবো না। আমরা আন্দোলন করে যাবো।
এ প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, প্রথামিকভাবে অনুমোদিত এ ধরনের পণ্য চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একটি পাথওয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এভাবে কিট এনে অনুমোদন করা যায় না। তিনি বলেন, এই কিটটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটি তৃতীয় পক্ষের কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। এক্ষেত্রে আইসিডিডিআরবি এ ধরনের কাজ করে থাকে। তৃতীয় পক্ষের মতামতের পর সেটি পাঠানো হবে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-বিএমআরসিতে। সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে আসার পর ওষুধ প্রশাসন অদিধফতরের একটি ১২ সদস্যের রিভিউ কমিটি আছে, সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ অনুমোদ প্রদান করবে। এই সুনির্দিস্ট প্রটোকল না মানলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া সম্ভব নয়।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৩৯ পিএম says : 0
    গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যে কিট উদ্ভাবন করেছে সেটা কিভাবে অনুমোদন নিতে হবে এটা অবশ্যই কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভালভাবেই জানেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বহুদিন ধরেই এই কিট উদ্ভাবন করেছে এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে এটা নিয়ে আলোচনাও করেছে। জাফ্রুল্লাহ চৌধুরী ভাল ভাবেই জানেন যে, সরকার তাঁকে কোন রকম আইনের বাহিরে সহযোগিতা করবে না কাজেই তাঁকে সকল বিষয়ই দেশের আইন অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে। এই কিট সিআরও থেকে ভেরিফিকেশন করে আনতে হবে, পরে আইসিডিডিআরবি থেকে ভেরিফিকেশন করিয়ে আনার কথা আগেই গণস্বাস্থ কেন্দ্রকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন গণস্বাস্থ বলছে আইসিডিডিআরবি লকডাউন থাকায় তারা বিএসএমএমইউ, আইইডিসিআর কিংবা আর্মি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি থেকে কার্যকারিতা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখার প্রস্তাব দিলেও সেটা সরকার মানেনি। এখানে বিষয়টা হচ্ছে সরকার তার নির্ধারিত একটা কাঠামোর মধ্যেই চলে এর বাইরে যেতে পারেনা। কিন্তু জাফ্রুল্লা সাহেব যেহেতু পাকিস্তান দরদী বিএনপি দলের একজন বুদ্ধিজীবী হিসাবে নিজেকে সবসময় পরিচিত রাখতে চান তাই তিনি সবসময়ই নিয়মের বাহিরে চলে সরকারকে নিচা দেখাবার সুযোগ ছাড়েন না। এই কিট জনস্বার্থেই আবিস্কৃত এটা মানতেই হবে। একারনেই তিনি চাচ্ছেন সরকার যেন তার কাছে নতজানু হয়ে তাঁকে সেপু সেপু করে সবকাজ করে দেয়। একজন বিবেকবান বিরোধী দলের লোককে কখনই আশাকরা উচিৎ নয় যে, সরকার তার জন্যে নিয়মের বাহিরে কিছু করবে......... এখানে যে বিশদ্গার জাফরুল্লাহ চৌধুরী করেছেন এটা করে তিনি জনগণকে বিভ্রান্তই করতে পারবেন কিন্তু কোন ফল হবে না। কারন দেশের জনগণ এখন ভাল ভাবেই জানেন বিএনপির সমর্থকেরা দেশের জন্যে নিজেদেরকে উৎসর্গ করবেন না। কাজেই জনগণ বিএনপির সমর্থকদের চেচা মেচির কোন মূল্যই দেয় না বা দিবে না। আল্লাহ্‌ আমাদের দেশকে ’৭১ সালে পাকিদের হাত থেকে উদ্ধার করে স্বাধীন করেছিলেন তাই আল্লাহ্‌ চান আমাদের দেশ পাকি মুক্ত থাকুক। আল্লাহ্‌ সবকিছুই ভাল জানেন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গনস্বাস্থ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ