দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী মহামারী করোনা ভাইরাস। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। একইসঙ্গে বাড়ছে মানুষের মাঝে আতঙ্ক। সমগ্রবিশ্ব আজ সে আতঙ্কে প্রকম্পিত। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসটিকে ‘বৈশ্বিক মহামারী’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। কারণ, বিশ্বের প্রায় ১৭৫ টি রাষ্ট্রে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। চীন, জাপান, জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি, আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো সুপার পাওয়ার দাবিদার শক্তিধর উন্নত রাষ্ট্রগুলো যারা নিজেদের প্রযুক্তির উপর বড়াই করত এবং নিজেদের বিজ্ঞানকেই প্রভু তথা সর্বেসর্বা মনে করত তারাও এই ভাইরাস প্রতিরোধে অপারগতা ও ব্যর্থতা স্বীকার করেছে। এই ব্যর্থতার কারণে সমগ্র বিশ্বে আজ এক সংকটপূর্ণ মুহুর্ত বিরাজ করছে। আর পরির্বতন আসছে মানুষের আকিদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনায়। পরিবর্তিত এই বিশ্ব পরিস্থিতিতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সর্বজন এখন এ কথার স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, সকল শক্তি ও ক্ষমতার উর্ধ্বে রয়েছে মহান স্রষ্টা এক আল্লাহর ক্ষমতা। তিনিই মহা পরাক্রমশালী। সকলকে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তাই গোটা বিশ্ববাসী আজ তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। সবার অন্তরে এ বিশ্বাস নাড়া দিচ্ছে আরশে আজীমের মালিক, সমগ্র বিশ্বের একমাত্র অধিপতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাই একমাত্র রক্ষাকারী। তিনি ব্যতীত আর কোনো রক্ষাকারী নেই। এ আতঙ্ক ও ভীতির সঞ্চার যেন সে দিকেই ইঙ্গিত করছে যে, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চাকচিক্যময় মরীচিকার মোহে বিভোর না হয়ে আল্লাহ তাআলার প্রতি পূর্ণ ঈমান আনয়ন করে তাঁর প্রতিটি বিধানাবলীর প্রতি আত্মসমর্পণ করে অন্তত অসীম চিরস্থায়ী জীবন আখিরাতের দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে। কুরআনুল কারীমে সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন।”(সূরা তাগাবুন: ১১)। অন্যত্র তিনি বলেন, “আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই সফলকাম।”(সূরা নূর: ৫২)। অপ্রতিরোধ্য এই ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের কিছু করণীয় নিম্নে তুলে ধরা হলো-
অশ্লীলতা ও পাপাচার বন্ধ করা:
প্রথমত মনে রাখতে হবে যে, যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা ও তাঁর আনুগত্য ত্যাগ করে অন্যায়, অশ্লীলতা, পাপাচার, ভ্রষ্টতা ও অবাধ্যতার পথ বেছে নেয়, তখন আল্লাহর গযব ও আযাব তাদের উপর নেমে আসে। তখন আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত এ আযাব থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোনো জাতির মন্দ চান, তখন তা প্রতিহত করা যায় না। এমতাবস্থায় তিনি ব্যতীত তাদের কোনো অভিভাবকও থাকে না।”(সূরা রা’দ: ১১) হায় আফসোস! আজ বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, সীমাহীন অবাধ্যতা ও পাপাচার। এসব অপরাধের কারণেই আজ গোটা বিশ্বে এ অধঃপতন। কারণ দুনিয়াতে যত বিপর্যয় আসে সব মানুষেরই কৃতকর্মের ফলাফল। আল্লাহ তাআলা বলেন, “মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিণামে তিনি তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।”(সূরা রুম: ৪১)। অর্থাৎ স্থলে, জলে তথা সারা বিশ্বে মানুষের কুকর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। বিপর্যয় বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকান্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনাবলীর প্রাচুর্য, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া ইত্যাদি বিপদ-আপদ বোঝানো হয়েছে। (কুরতুবী) অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।”(সূরা শূরা: ৩০)। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারীর প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)। আজ বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে অশ্লীলতা। প্রকাশ্যে চলছে অশ্লীল সিনেমা ও নৃত্যানুষ্ঠান, নগ্ন ভিডিও প্রদর্শন, মদের আড্ডা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও পতিতালয়। এমনকি বিশ্ববাসী আজ নারী দেহের নগ্ন প্রদর্শনের মতো নিকৃষ্ট অশ্লীল প্রতিযোগিতাও শুরু করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ) এসব অশ্লীলতা ও পাপাচারের কারণেই করোনা ভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী মহামারী আমাদেরকে আক্রান্ত করছে। যেহেতু আমাদের পাপ সর্বত্র ছেয়ে গেছে তাই ভাইরাসও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে, মূলত এই ভাইরাস আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সর্তক সংকেত, যাতে আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাই। তাই এখনই আমাদেরকে সর্তক হতে হবে, সচেতন হতে হবে। সর্বপ্রকার অশ্লীলতা ও পাপাচার চিরতরে বন্ধ করে প্রিয় মালিকের দিকে ফিরে আসতে হবে। তাহলেই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই ধরণের মহামারী থেকে রক্ষা করবেন। নতুবা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো বড় ধরণের শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আমি তাদেরকে বড় শাস্তির আগে ছোট শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাই, যেন তারা ফিরে আসে।”(সূরা সাজদাহ: ২১)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা, যালেম ও অবাধ্যকে অবকাশ দেন। কিন্তু যখন তিনি তাকে পাকড়াও করবেন, তখন তাকে আর ছাড় দিবেন না। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০১৮)
তাওবাহ ও ইস্তিগফার করা:
‘তাওবাহ’ অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। অর্থাৎ সর্বপ্রকার শিরক, কুফর, অবাধ্যতা ও পাপাচার বর্জন করে তা থেকে ঈমান, বিশুদ্ধ আকিদা, আনুগত্য ও নেক আমলের দিকে ফিরে আসা ও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আর ‘ইস্তিগফার’ অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। অর্থাৎ পূর্বের সকল গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। করেনা ভাইরাস সহ সমস্ত মহামারি ও বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য আবশ্যক হচ্ছে আল্লাহর নিকট তাওবাহ ও ইস্তিগফার করা। কারণ, যেহেতু এজাতীয় মহামারীর প্রাদুর্ভাব হলো মানুষকে সতর্ক করা যাতে তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।