দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
অজু আরবী শব্দ। এর অর্থ সুন্দর, পরিস্কার ও স্বচ্ছ। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে পাঁচবার অজু করতে হয়। ভাইরাস একটি সংক্রামিত ব্যাধি। যে কোন ধরনের সংক্রামিত রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধে সচেতনতা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই। সংক্রামিত রোগ-ব্যাধি যে সকল অঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায় তা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অজুর মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অজুর মধ্যে পার্থিব ও পরলৌকিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অজুর পানি শুধু বাহ্যিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতই করে না, মানুষের দেহ ও মনের প্রশান্তি বৃদ্ধি করে। তাই নামাজে দন্ডায়মান হওয়ার পূর্বে অজু করার জন্য কুরআনে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।’ (সূরা মায়িদাহ:৬)।
অজু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। অজুর ফরজ চারটি। ১. মুখমন্ডল ধোয়া, ২. উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত ধোয়া, ৩. মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করা, ৪. উভয় পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধোয়। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানব দেহের যে সকল অঙ্গ গুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। আল্লাহতায়ালা বহু পূর্বে মহানবী (সা) এর মাধ্যমে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোন মুমিন অথবা মুসলিম বান্দা অজু করে এবং মুখমন্ডল ধোয়, তার মুখমন্ডল হতে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার দুই হাত ধোয়, তার দুই হাতে কৃত সকল গোনাহ তার হাত হতে পানির সাথে অথবা পানি অবশিষ্ট বিন্দুর সাথে দূরীভ‚ত হয়ে যায়। এরপর সে সকল গোনাহ হতে পবিত্র হয়ে যায়।’ (জামে তিরমিজি:০২)।
মৃত্যু চিরন্তন সত্য। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহন করতে হবে। তবে যদি কেউ অজুর সহিত মৃত্যু বরন করে। হাশরের মাঠে ঐ ব্যক্তির হাত, পা ও মুখমন্ডলের মধ্যে নূর চমকাতে থাকবে। হযরত আবূ হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূল (সা) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতকে ডাকা হবে, তখন অজুর প্রভাবে তাদের হাত, পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল ও আলোকোদ্ভাসিত হবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে যেন তার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নেয়।’ (বোখারি:১৩৬)। জনৈক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! হযরত নূহ (আ) থেকে শুরু করে আপনি পর্যন্ত এতো অসংখ্য উম্মতের মধ্যে আপনার উম্মতকে (কিয়ামতের দিন) কিভাবে চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, ‘অজুর নিশানার কারণে তাদের হাত, পা চমকাতে থাকবে। অন্য কোনো নবীর উম্মত এরূপ হবে না। আমি তাদেরকে চিনব এজন্য যে, তাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে।এজন্যও যে, তাদের সামনে তাদের সন্তানেরা দৌড়াতে থাকবে।’ (আহমাদ, মিশকাত-৪০পৃ.)। অজুর শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠকারী ব্যক্তির জন্য আরো সু-সংবাদ রয়েছে। অজু শেষ করে যে ব্যক্তি কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেয়া হয়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সকল নিয়ম কানুনসহ উত্তমরূপে অজু করবে। এরপর ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’ পাঠ করবে, তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম-তিরমিজি ও মিশকাত,পৃ.নং ৩৯)। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অজুর উপর আমল করার জন্য আল্লাহতায়ালা তৌফিক দান করুক। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।