পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিডিয়ার দায়িত্ব হলো মানুষকে সচেতন করা। সাংবাদিক সমাজকে বলা হয়, দেশ ও জাতির বিবেক। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যেটি চতুর্থ স্তম্ভ নামে খ্যাত। বাংলাদেশে কতিপয় লোকের দায়িত্বহীনতায় এ সম্মানজনক অঙ্গনটি যারপরনাই কলুষিত হয়ে গেছে। মানুষের মনে এর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা দিন দিনই নেমে আসছে শূন্যের কোঠায়। মানুষ এখন সাংবাদিক না বলে, বলে সাংঘাতিক। যেমন কিছু লোকের জন্য রাজনীতিকে মানুষ বিশেষ অর্থে ‘পলিটিক্স’ বলে। আগে হলুদ সাংবাদিকতা একটি গালি ছিল, বদনামের বিষয় ছিল।
বর্তমানে মনে হয়, এটি অনেক সাংবাদিকের জন্য কোনো গালি বা বদনাম নয়। এটিই তাদের মূলনীতি। তাদের গলার মালা। গ্রামবাংলার এককান কাটা লোকের সেই গল্পের মতো। প্রথম যে এককান মাফলার বা রুমালে ঢেকে রাস্তার পাশ দিয়ে চলত, এরপর যখন আরো অপকর্মের ফলে মানুষ তার দ্বিতীয় কানটিও কেটে দেয়, তখন সে মাফলার বা রুমাল ফেলে দিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা শুরু করে। বলে দুই কানকাটা হলে মানুষের আর লজ্জার কিছু থাকে না। এককথায় তখন সে নাথিং টু হাইড হয়ে যায়। বাংলাদেশেও কিছু মিডিয়া তো অবশ্যই এমন হয়ে গেছে। বিবেচনা করলে কিছু না বরং অনেক মিডিয়াই এমন হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন জনপ্রিয় বড় আলেমের জানাজায় কেউ কিছু বোঝার আগেই অনভিপ্রেতভাবে অনেক লোক লকডাউন ভেঙে এসে যায়। এ আগমন নিন্দনীয় ভুল ও বর্জনীয়। তবে বাস্তবতা এই যে, এ জন্য কেউ দায়ী নয়। দায়ী হলে মানুষের অসচেতনতা দায়ী। আর কিছু দায় সরকারের। এর বেশি এ ঘটনাকে নিয়ে রশি পাকানোর কোনো সুযোগই নেই।
কারণ, প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিনে মানুষের সাথে কথা বলে যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন সেখানে একটি কথা স্পষ্ট হয়েছে যে মানুষ জনসমাগম নিষিদ্ধ জেনেই এক দুইজন করে জানাজায় এসেছে। ভেবেছে, বেশি লোক হবে না, সামান্য ক’জনের মধ্যে আমরা দু’একজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শরিক হব। এমন চিন্তা করে দু’একজন করে আগত মানুষগুলোই একসময় অনেক হয়ে গেছে। এ হচ্ছে আসল বাস্তবতা।
কিছু মিডিয়া জনসমাগমে কী কী ক্ষতি হতে পারে কিংবা জনগণকে কীভাবে থাকতে হবে এসব বলার চেয়ে ইসলাম ও মুসলমান সংশ্লিষ্ট এই জানাজার অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটিকে নিয়ে অহেতুক ত্যানা পেচিয়েই চলেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটি কেউই সঠিক বলছেন না। সবাই এটিকে একটি অনভিপ্রেত ঘটনা বলে এর দায় কারো কাঁধে না চাপিয়ে এমন বিষয় ভবিষ্যতে এড়িয়ে চলার কথা বলছেন এবং জনসচেতনতা তৈরি করছেন।
কিন্তু কিছু একচোখা মিডিয়া দেশের আর কোনো বিষয় চোখে না দেখে এই একটি দুর্ঘটনাকে নিয়ে ঘোঁট পাকিয়েই চলেছে। যেন তারা এদেশের ৯২ ভাগ মানুষের ধর্মীয় বিষয়কে নিয়ে তাদের অন্তরের ভেতর লুকানো ক্ষোভ ও জেদ মিটানোর একটি মহা সুযোগ হাতে পেয়েছে। বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক বিকৃত চিন্তার মানুষের মতো এই সর্বসম্মত দুর্ঘটনাটিকে যেন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে।
কেন বলছি, এক টিভি উপস্থাপক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন রাজনৈতিক দায়িত্বশীল আলেমকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলে তিনি খুব সুন্দর করে তাদের বাস্তব অবস্থাটি তুলে ধরেন। আর এটিকে এই টিভি সাংবাদিকবিদ্বেষ ঘৃণা ও অভব্য আচরণ আর মুখভঙ্গি নিয়ে এই আলেমকে রীতিমতো ধমকাচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত অন্য অতিথিরা এতে বিরক্ত ও বিস্মিত হয়ে যান। একজন দর্শক এর ভিডিও ক্লিপ আমাদেরকে পাঠিয়ে নিচে ক্যাপশন দেন, আমাদের এলাকার কুকুরও এই উপস্থাপকের চেয়ে সুন্দর করে কথা বলে। আমরা এসব দেখে খুবই কষ্ট অনুভব করি। সত্যিই আজ সাংবাদিকতা সাধারণ মানুষের চোখে কোথায় নেমে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যার জানাজা নিয়ে এত কথা তার সন্তান মিডিয়াকে জানান, আমার আব্বা মাওলানা আনসারী দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। কর্মময় জীবনে তার অবদান ও সাধনার ফলে তার জানাজায় লাখ লাখ লোক সমবেত হওয়ারই কথা। লকডাউনের জন্য আমরা তার লাশ শহরের বাসায় রাখিনি। কারণ এখানে হাজার হাজার মানুষ রাতভর ভিড় করবে। আব্বাকে নিয়ে গেছি বিচ্ছিন্ন মাঠে, আমাদের মাদরাসায়।
যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় তার জানাজা শহরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে হওয়ার কথা। মাদরাসায় ছুটি থাকায় দু’ তিনজন মানুষ অবস্থান করে। আর আমরা আত্মীয়-স্বজন দশ-বারোজন মিলে ভেবেছিলাম রাতেই দাফন করব। কিন্তু মাগরিবের আগে মৃত্যুবরণকারী একজন জননন্দিত বড় আলেমকে মাত্র তিন ঘণ্টার মাথায় দাফন করার পক্ষে মন সায় দেয়নি। তাছাড়া, তার মৃত্যু তো করোনায় হয়নি। স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এরপর যেখানে দাফন হবে সেখানে সংক্ষিপ্ত জানাজা সেরে তাকে বেলা ১০টায় দাফন করব এই ছিল আমাদের পরিকল্পনা।
এসবই প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রেখে আমরা করেছি। সারাটা সময় মাদরাসা থেকে মাইকিং করেছি, হুজুরের জন্য আপনারা বাড়িতে বসে দোয়া করুন। সংলগ্ন বাড়ি-ঘর বা গ্রাম থেকে দয়া করে কেউ জানাজায় আসবেন না। এখানে কেবল পরিবারের লোকজন ও সেবাকর্মীরা জানাজা আদায় করে নিব। এরপর বেলা ১০টার আগে আগে আমরা জানাজা পড়ার প্রস্তুতি নিতেই অকল্পনীয়ভাবে চারদিক থেকে লোকজনের ঢল নেমে যায়। আমাদের তখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন ইত্যাদি মাইকে বলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। যদি লোকজনের উপস্থিতি আমরা কামনা করতাম তাইলে জানাজার সময় দেয়া হতো বাদজোহর।
সরাইল থানার ওসি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ কর্মকর্তারা একই কথা বলেছেন। সব মানুষকে তাদের যাত্রা শুরুর স্থানে কিংবা পথে পথে দায়িত্বশীলরা বাধা দিলে এমন সমাগম হতো না। যেসব মানুষ নিয়ম মেনে বাঁধা পেয়ে মসজিদে যাচ্ছে না তারা বাঁধা পেলে জানাজায় যে আসত না তা ছোট শিশুও বোঝে। এখানে অনভিপ্রেত ঘটনাটি নিয়ে আসলেই সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায় দেয়ার উপায় নেই। শুরুতেই বলেছি এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি আর দায় যদি চাপাতে হয় তাহলে গণঅসচেতনতা এবং সরকারের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার ওপর চাপাতে হয়। গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব থানা আর আশপাশের পাঁচ-ছয়টি জেলার প্রশাসন ও পুলিশ সচেতন ছিল না বলেই দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ এত পথ পাড়ি দিয়ে আসতে পেরেছে।
এই সমাগমের প্রভাব করোনার উপর কতটুকু পড়ে তা সময়ই বলে দেবে। যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে সেটা আর ফেরানোর ক্ষমতা কারো নেই। তবে ক্ষতি বৃদ্ধি ও বিস্তার অবশ্যই রোধ করা যায়। এ নিয়ে এসব মিডিয়া কী বলছে বা করছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা তো মনে হয় এই জানাজাটিকে পেয়ে বসেছে। একজন আলেমের জানাজা হওয়ায় তাদের শরীরে অন্যরকম একটা ভাব দেখা দিয়েছে। নাক মুখ চেহারা তথা বডি লেঙ্গুয়েজে বোঝা যায়, যেন তারা বলছে, ‘পাইছি একখান ইস্যু। দেখাইয়া ছাড়মু।’
এক টিভি চ্যানেল এই মাওলানার দলের মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক ও জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমানের জাল ফোনালাপ প্রচার করে বলতে চেয়েছে, এই জানাজা নাকি খেলাফত মজলিস ও জামায়াতের যৌথ উদ্যোগে একটি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র। মুফতি মাহফুজুল হক টিভি চ্যানেলটিকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই জাল ফোনালাপ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। রেকর্ডটির উচ্চারণ ভাষা বিষয়বস্তু তথ্য ও কণ্ঠস্বর সবই যে মিথ্যা এবং একশ ভাব জালিয়াতি তা সবার সামনে মুহূর্তেই স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই টিভিওয়ালারা তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে সেটি গায়েব করে দেয়। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে এর রহস্য খুঁজে বের করা মোটেও কঠিন নয়।
যেকোনো অযৌক্তিক বিষয়ের সমালোচনা এবং সংশোধনের উদ্দেশে সমাজের প্রতিটি অসঙ্গতি সমানভাবে তুলে ধরাই মিডিয়ার কাজ। গার্মেন্টকর্মীদের অহেতুক আনা-নেয়া, বাজার, ত্রাণ বিতরণ, মন্ত্রীনেতাদের জানাজা, সামাজিক রাজনৈতিক সমাবেশ সব নিয়ে সমান সোচ্চার থাকলে মানুষ মিডিয়াকে একচোখা বলত না। কিন্তু অন্য সময় কিছু অথবা সম্পূর্ণ নীরব থেকে কেবল মসজিদ মোনাজাত জানাজা ইত্যাদি নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি মানুষ খোলা চোখেও দেখতে পায়।
তাদের অজান্তেই এসব একদেশদর্শিতা মানুষ ঘৃণা করে। এসব সাংবাদিক ও তাদের সিন্ডিকেটভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের মানুষ অন্তর থেকে অভিশাপ দেয়। অনেকে করুণা করে। বলে এরা তো নিজের বিবেক হয় বিক্রি করেছে অথবা কারো কাছে বন্ধক রেখেছে। ইসলাম ও মুসলামানের যেকোনো উপায়ে বিরোধিতা ও বদনাম করাই তাদের ডিউটি। তাছাড়া, এই করোনাকালে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এবং সংসদে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হওয়ায়, মানুষকে নামাজ ও বেশি বেশি দোয়ার আহŸান করায় এসব নাস্তিক্যবাদী ইসলামৎবিদ্বেষী লোকগুলোর আঁতে ঘাঁ লাগাও স্বাভাবিক। তাদের দেশি-বিদেশি মুরব্বীরাও এসব কারণে কম মনোকষ্টে ভুগছেন বলে মনে হয় না।
এসব জ্বালা-যন্ত্রণা থেকেও কিছু মিডিয়া এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তাছাড়া, একাধারে ইসলামবিরোধী গণচেতনা ও মনোভাব তৈরির এত মেহনত কীভাবে বৃথা যাচ্ছে, একজন ধর্মীয় নেতার জানাজায় আহŸান ও প্রচার ছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ এমন অবুঝের মতো এভাবে ছুটে আসে। এদেশে তাহলে এত খরচাপাতি করে অসংখ্য চ্যানেল ও সংবাদপত্রে বছরের পর বছর অপরিমেয় হিংসাবিদ্বেষ ও বিষ ছড়িয়ে আখেরে কী অর্জনটা তারা করতে পেরেছেন?
এত পয়সার হিসাব তারা কী করে চুকাবেন বা মুরব্বীদের কী বলে বোঝাবেন এসব চিন্তা যখন একবারে মাথায় এসে ভিড় করে তখন কি আর মাথা ঠিক থাকে। সেই আদি বাংলার লোককথার মতো হয়ে যায়। গরু হারিয়ে যে কৃষক নিজের ছেলেকে ভাই বলে ডাকছিল তখন স্ত্রী তাকে এ বিষয়টি সংশোধন করতে বললে কৃষক বলেছিল, ‘গরু হারালে এমনই হয়রে মা।’ কানকাটা মিডিয়ার মনে হয় আজ একই দশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।