Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোজার বাজারে কারসাজি

চাহিদার অতিরিক্ত এক লাখ ৬০ হাজার টন নিত্যপণ্য আমদানি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫১ পিএম

খুচরা দোকানে যথেচ্ছ মুনাফা লুট

 

করোনা মহাদুর্যোগ। তবুও বেপরোয়া অতি মুনাফালোভী চক্র। এদের ফন্দি-কারসাজিতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে রোজার বাজারে। মাহে রমজান শুরু হচ্ছে মাত্র ৪ দিন পর। গতকাল করোনা সতর্কতার মাঝেও সর্বত্র রোজার নিত্যপণ্য কেনা-বেচার ব্যস্ততা চোখে পড়ে। দেশের আমদানি নিত্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের চাক্তাই খাতুনগঞ্জে মালামাল ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহনে ধুম পড়ে দিনভর। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট বাংলাবাজার লাইটারেজ ঘাটগুলো দিয়ে নিত্যপণ্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। 

রোজার খাদ্যসামগ্রী ও ভোগ্যপণ্য বেচাকেনার উপযুক্ত সময়েই খুচরা দোকানিরা ইচ্ছেমতো মুনাফা লুটছে। গতকাল বাজারদর অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক উঁচুতে ছিল চাল, মসুরসহ সবরকম ডাল, ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল, গুঁড়োদুধ, বেসন, পেঁয়াজ-রসুন, খেজুর, আদাসহ হরেক মসলাপাতির। আবার একে দোকানে যে যার মর্জিমাফিক দাম আদায় করছে। তবে পাইকারি বাজারদর মোটামুটি স্থিতিশীল। বিশ্ববাজারেও দাম কম থাকায় আগেই খালাস হয় বেশিরভাগ নিত্যপণ্য। রমজানে দেশে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত এক লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে।
করোনা কারণে শাটডাউনে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধের আগেই সারাদেশে সরবরাহ ও বাজারজাত হয়ে গেছে বেশিরভাগ নিত্যপণ্য। চট্টগ্রাম বন্দরজটে পড়েছে আংশিক নিত্যপণ্য। তাও পুরো রোজার মাসজুড়ে ডেলিভারি, পরিবহন ও সরবরাহের বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ অবস্থায় চিটাগাং চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো একবাক্যে বলে আসছে, রোজায় কোনো নিত্যপণ্যের ঘাটতি নেই বরং মজুদ পর্যাপ্ত এমনকি বাড়তি। বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণও নেই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের তরফ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত মাস সপ্তাহ পর্যন্ত পূর্ববর্তী আড়াই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চিনি, ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল, খেজুরসহ রোজায় অধিক চাহিদা রয়েছে এমন সব নিত্যপণ্য খালাস হয়েছে প্রায় ২১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এক লাখ টন বেশি। রোজার চাহিদার চেয়ে এক লাখ ৬০ হাজার টন বাড়তি। বন্দরে খালাস, ডেলিভারি পরিবহনের অপেক্ষায় এখনও আছে প্রায় ৫ লাখ টন নিত্য ও খাদ্যপণ্য বোঝাই ১২টি জাহাজ। আগামী ২ সপ্তাহে আসবে আরও অন্তত ১০টি জাহাজ।
চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যেও প্রচুর নিত্যপণ্য দেশে আমদানি হয়েছে। সরবরাহ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রোজায় সঙ্কটের কারণ নেই।
চট্টগ্রাম বন্দর-শিপিং সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চে ভোজ্যতেল এসেছে ২ লাখ ৫০ হাজার মে. টন। যা আগের বছর ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার টন। চিনি তৈরির কাঁচামাল (র-সুগার) এসেছে ৪ লাখ ৫২ হাজার টন। গতবার ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার টন। এবার গম এসেছে ৬ লাখ ১৭ হাজার টন। গতবছর ছিল এলেও ৫ লাখ ৪৬ হাজার টন।
পর্যাপ্ত আমদানি ও মজুত থাকায় চিনি, ছোলা, ভোজ্যতেল, তরলদুধ, গুঁড়োদুধ, মসুরসহ বিভিন্ন ডাল, খেজুর, আদা-রসুনের বাজারদর যেখানে থাকার কথা, তা অনেক ছাড়িয়ে গেছে। আমদানি নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর পরিশোধ করে খালাসের পর (সিএন্ডএফ, গুদামভাড়াসহ যাবতীয় খরচ মিটিয়ে) মূল্য দাঁড়ায় প্রতিকেজি গুঁড়োদুধ ৩২৫ টাকা, ছোলা ৫৭ টাকা, মসুর ডাল ৪৬ টাকা, খেজুর ৬৬ থেকে ১২৫ টাকা, চিনি ৫১ টাকা, ভোজ্যতেল লিটার ৮৩ টাকা, রসুন ৮৫ টাকা, আদা ৮৮ টাকা।
অন্যদিকে রোজার প্রাক্কালে গতকালের খুচরা বাজারে সেই চিনি বেচাকেনা হয় কেজি ৬৫-৬৮ টাকা, ছোলা ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, মসুর ডাল (দেশি) ১৪০ ও (মোটা) ৯০ টাকা, ছোলার ডাল ৮৫-৯৫ টাকা, মটর ডাল ৫০-৬০ টাকা, সয়াবিন তেল (বিভিন্ন ব্রান্ড) লিটার প্যাক ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং ৫ লিটারের প্যাক ৫৩০ থেকে ৫৬৫ টাকা, খেসারি ডাল ৭০ থেকে ৯০ টাকা, খেজুর ১৫০-২শ’ থেকে ৫শ’-৮শ’ হাজার টাকা। পেঁয়াজের দাম কয়েক দফায় বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, রসুন ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা, আদা ২শ’৫০ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। সাবান, টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশকের দাম দোকানিরা যথেচ্ছ আদায় করছে। সবধরনের চালের দাম গত ৩/৪ দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে কেজিপ্রতি মানভেদে এক থেকে ৪ টাকা। বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে দেড়শ’ টাকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ