পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার, বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে গণপরিবহনও। পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় অনেক পোশাক শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে কারখানা খোলার ঘোষণা দিয়ে অসংখ্য পোশাক শ্রমিক ঢাকায় আসেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকেই পায়ে হেঁটেই ফিরেছেন কর্মস্থলে। তবে এভাবে শ্রমিকদের ডেকে আনা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে যোগ দেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশব্যাপী চলমান কার্যক্রমে সমন্বয় করতে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহ ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলার মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপারভাইজারকে দিয়ে শ্রমিকদের ফোন করানো হলো। এভাবে শ্রমিকদের ডেকে আনা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছে। অনেক বাবা তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। গাড়িঘোড়া বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা যেমন করা হবে, নেয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। গাজীপুরে শিল্প-কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লকডাউন নিশ্চিত করে সীমিত পর্যায়ে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সেটি কীভাবে করা যায় নিশ্চিত করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এসব সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না, সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনেই গার্মেন্টস খুলতে হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গার্মেন্টস কারখানা যদি খুলতে হয় তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনেই খুলতে হবে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘বিজেএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক ২৫ এপ্রিলের পর চিঠি দিয়ে কিছু কারখানা খোলার কথা জানিয়েছেন এবং শ্রমিক পরিবহনে বাস চেয়েছেন’ জানালে এর প্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস কারখানা যদি খুলতে হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনেই খুলতে হবে। আমরা পিপিই ও মাস্ক বানানোর জন্য কিছু কারখানা খোলা রাখতে পারি, তবে তা ডবিøউএইচও’র নির্দেশনা মোতাবেক। এর আগে গার্মেন্টস খোলা রাখার জন্য, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সে অবস্থা যেন না হয়। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সীমিত। আমি আমাদের একেকজন সচিবকে একেকটি জেলা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছি। জেলাগুলোতে সঠিকভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে কি না, অভাবী মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছাচ্ছে কি না, তারা সেটি দেখবেন এবং আমার কাছে রিপোর্ট করবেন। তিনি বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে আমি নির্দেশ দিয়েছি, সবাই দেখবেন কোনো মানুষ যেন খাবারের অভাবে কষ্ট না পায়। আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আছে, তারা এর আগে ধান কাটতেও কৃষকদের সহায়তা করেছে। তারাও এখন কাজ করছে।
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে যাতে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয় সেজন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু ধান সংগ্রহ করার ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। সাধারণ বোরোতে আগে যা আমরা নিতাম, তার থেকে অনেক বেশি আমরা নিচ্ছি। এখন প্রায় আমরা ৮ লাখ মেট্রিক ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমরা সংগ্রহ করব। এটা সরকার কিনে রাখবে। তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোনো অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাবার সহযোগিতা দিতে পারব। আমাদের খাদ্যেও কোনো অভাব হবে না। তাছাড়া আমাদের এখন ধান উঠছে। ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সঙ্গে তরি-তরকারি ফলমূল যে যা পারেন উৎপাদন করবেন। করোনা মোকাবেলায় সরকার কাজ করছে। বর্গাচাষিদের জন্য বিনা সুদে ঋণ দেয়া হবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
রমজানে বিশেষ খাদ্য সহায়তা চালু করা হবে
রমজান মাসে সরকার বিশেষ খাদ্য সহায়তা চালু করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসে যেন সঙ্কট না হয় সেজন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তা চালু করা হবে। ভিডিও কনফারেন্সে করোনা সঙ্কটকালীন যে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষিখাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি। কৃষি মানে শুধু ধান ফলানো না। একেবারে মৎস্য, পোল্ট্রি থেকে শুরু করে ফলমূল, ফুল যা যা আছে-সবকিছু মিলেই এই প্যাকেজটা। কাজেই কোনো সেক্টর বাদ যাচ্ছে না। যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তা শুধু এই বছরের জন্য না। আগামী তিন বছর দেশের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখেই এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে প্রণোদনা দিয়েছিÑ এটা শুধু এ বছরের জন্য না, আগামী তিন বছরের জন্য। আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন সচল থাকে, সেটা মাথায় রেখে এটা আমরা অব্যাহত রাখব, যাতে আমাদের দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। করোনার কারণে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। আমার মনে হয় সারাবিশ্বে আগে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেনি। করোনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির। বন্ধ রয়েছে মসজিদ-মন্দির-গির্জাসহ সব প্রার্থনার কেন্দ্র।
মাস্ক সরবরাহে নজরদারি বাড়াতে হবে
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্কেও মোড়কে সাধারণ মাস্ক দেয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
রাজধানীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভুল মাস্ক সরবরাহের বিষয়টি তুলে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহানগর হাসপাতালে কিছু জিনিস গেছে, পিপিইর নাম দিচ্ছে বেশ ভালো, কিন্তু জিনিসগুলো বোধহয় ঠিকমত যায়নি। এটা একটু আপনাদের খোঁজ করে দেখা উচিৎ। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ব্যাখ্যা দিতে গেলে তাকে থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এন-৯৫ লেখা আপনাদের বক্সে। কিন্তু ভেতরের যে জিনিসটা, সেটা সঠিক থাকে কিনা, এটা একটু আপনাদের দেখা দরকার। আপনারা দিয়ে দিচ্ছেন, বলে দিচ্ছেন। কিন্তু যারা সাপ্লায়ার, তারা ঠিক মতো এটা দিচ্ছে কিনা বা সঠিক জিনিসটা কিনছে কিনা, এটা দেখা দরকার। এটা দেখবেন। যেহেতু আমি বেশি কিছু করতে চাই না, আমি মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি ছবিটা, ওটা যাচাই করে দেখার জন্য। এটা একটু নজর দিয়েন। এখানে যেহেতু অনেকে লাইভে আছেন, আমরা কথা বলছি না। লেখা আছে এন-৯৫। কিন্তু ভেতরের জিনিস কিন্তু সবসময় সঠিকটা যাচ্ছে না।
সিএমএসডি পরিচালক শহিদ উল্লাহ এসময় বলেন, হয়তো জরুরি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আমাদের ভুল হয়ে থাকতে পারে, এখন আমরা চাচ্ছি আমাদের এই ভুলগুলো যেন না হয়, সেটা সঠিকভাবে বিতরণ যেন নিশ্চিত করতে পারি, সে উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।
বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়
করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজারে বেচাকেনা চালু রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কোনো বাজাওে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়। বড় খোলা জায়গায় যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজার পরিচালনা করতে হবে।
করোনাভাইরাসের মহামারীর চলমান পরিস্থিতে রোজার মাসে খাদ্য সরবরাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। এখন ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে, আগামীতেও ফসল উঠবে।
দেশে ৫০৭ প্রতিষ্ঠান কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেনে, সারাদেশে ৫০৭ প্রতিষ্ঠান কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের থাবা এসে পড়েছে। সবাইকে এ ব্যাপারে সুরক্ষিত থাকতে হবে। আমাদের দেশের অনেকেই এটি ভালোভাবে মানতে চান না। যার ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে নির্দেশনাগুলো যেন সকলে মেনে চলেন। মানুষের সমাগম হয় সেখানে না থাকা, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। এটা জেনে করা হয়। এপ্রিল মাসটি আমাদের জন্য একটু কষ্ট হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ভিডিও কনফারেন্সের গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।