Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক পাড়ায় আটক আতঙ্ক

প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : শীর্ষ নির্বাহীদের কর্মক্ষেত্র থেকে হঠাৎ আটকে আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যাংক খাতের কর্মকর্তাদের মাঝে। এতে স্বাভাবিক কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শীর্ষ নির্বাহীরা। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে ব্যাংক খাতে; এমনটিই ভাবছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অর্থনীতির সব খাত ধ্বংসের পর বাংলাদেশের আর্থিক খাত ধ্বংসের ভারতীয় চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এমনটা করা হচ্ছে। রাইজিং স্টিল মিলকে দেয়া ঋণের সোয়া তিনশ’ কোটি টাকা আদায় না হওয়ার অভিযোগ এনে গতকাল আটক করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম ও এবি ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি (হেড অব ক্রেডিট) বদরুল হক খানকে। স্টিল মিলটি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর। রোববার সাড়ে ১২ টায় তার নিজ কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। আগের দিন গভীর রাতে দুদকের সহকারী পরিচালক মানিক লাল দাশ বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানায় আসলাম চৌধুরী ও তার ভাই আমজাদ হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও এবি ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) বদরুল হক খান ও এবি ব্যাংকের সাবেক এমডি ফজলুর রহমান ও জামিলা নাজনিন মাওলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের আটকের ঘটনায় তারা আতঙ্কে আছেন। স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা। বলছেন, এভাবে চললে আর্থিক খাত ভেঙ্গে পড়বে।
এদিকে বর্তমানে অর্থনীতির অধিকাংশ খাতই ভালো নেই। মুখ থুবড়ে পড়েছে অনেক সূচক। এমন অবস্থায় গুলশান ও শোলাকিয়ার হত্যাকা- পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এর কারণ হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের মতো আন্তর্মুখী নয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান দুটো খাতই বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক রফতানি ও প্রবাসী আয়Ñ দুটোই অর্থনীতির প্রধান শক্তি। আর এই দুটোই বাইরের অর্থনৈতিক অবস্থা ও তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। আর এই দুটো খাতই সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং এসোসিয়েশন জানিয়েছে, জঙ্গি হামলার ঘটনায় চলতি মৌসুমে ২ থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের অর্ডার হারাবে তৈরি পোশাক খাত।
এসব নেতিবাচক বিষয়ের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে একটি ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। এটি হলো মূল্যস্ফীতি। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন। অর্থাৎ ভোগ্যপণ্যের দাম অনেকটা স্থিতিশীল। এই অর্থে মানুষ বাহ্যিক দৃষ্টিতে স্বস্তিতে। তবে এখানে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে চলতি বাজেট। যত্রতত্র করারোপ করা হয়েছে নতুন বাজেটে। যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করেন সেই মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের করের বোঝা এবার বেড়েছে। ‘জন্ম এবং মৃত্যু ছাড়া’ আর সর্বত্রই ভ্যাটের ছোঁয়া আছে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা অবশ্য সরকারকে ‘ভয়’ দেখিয়ে তাদের করের বোঝা কমিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু যে চাপের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লোকজনসহ অন্য নিম্নবিত্তরা ছিল এখনো তাই। তাদের আয় কমছেই। নিম্ন মূল্যস্ফীতির হিসাব একটা ভিত্তির ওপর করা হয়। এটা গড়ের হিসাব। এতে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। আবার নিম্ন মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির মন্দাভাবের লক্ষণও হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন। এটাকে ঋণ প্রবাহ হ্রাসের কারণজনিত ‘নিম্ন মূল্যস্ফীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির সাবেক শিক্ষক ড. আর এম দেবনাথ।
আবার এই মূল্যস্ফীতিকে আপাতত ইতিবাচক ধরে নিলেও তা অব্যাহত থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী, ভোজ্য তেলসহ অনেক আমদানি পণ্যের দাম আবার বাড়ছে। নিম্নমূল্যস্ফীতি আমাদের সঞ্চয়ের ওপর আঘাত করছে। ব্যাংকগুলো এখন কোনো সুদ দেয় না। ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতি, পাঁচ শতাংশ সুদের হার। এমতাবস্থায় ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি সঞ্চয়কে কীভাবে প্রভাবিত করবে তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার বলে মত দিয়েছেন ড. আর এম দেবনাথ।
খারাপ খবরের মধ্যে আছে রেমিট্যান্সের খবর। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে ৫ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মন্দা ও মধ্যপ্রাচ্যের টালমাটাল অস্থিরতা বড় কারণ। এখন শোনা যাচ্ছে আরেকটা দুঃসংবাদের কথা। সৌদি আরব, কুয়েত ও ওমান প্রভৃতি দেশ প্রবাসীদের আয়ের ওপর কর বসাতে চায় ১০ শতাংশ। এটি হলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আরো কমতে পারে। এটি একটি মারাত্মক আঘাত হবে আমাদের অর্থনীতির ওপর। প্রায় এক কোটি পরিবার রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। অভ্যন্তরীণ বাজার রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে চাঙ্গা থাকে। গ্রামের মানুষ ভালো থাকে এই টাকায়। যদি রেমিট্যান্সে টান পড়ে তাহলে উপায় নেই।
ড. আর এম দেবনাথ প্রশ্ন তুলেছেন, একদিকে রফতানি যদি অনিশ্চিত হয়, অপরদিকে রেমিট্যান্সে যদি টান পড়ে তাহলে থাকে কীÑ নিম্ন মূল্যস্ফীতি? ওটা দিয়ে কী হবে?
অর্থনীতির যখন এমন অবস্থা তখন ব্যাংক খাতকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থির করে তুললে অর্থনীতি আরও টালমাটাল হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক পাড়ায় আটক আতঙ্ক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ