পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ওষুধ সেবনে রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে
মো: শামসুল আলম খান : রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলার নেপথ্য কারিগর একজন কথিত ‘স্যার’। জঙ্গি প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে জেহাদী বয়ান, দু’হামলার পরিকল্পনা, সরঞ্জামাদি সরবরাহ থেকে শুরু করে সব রকমের খরচই বহন করতো ‘স্যার’ নামের ওই বিশেষ ব্যক্তি।
তবে তার প্রকৃত নাম জানাতে পারেনি শোলাকিয়া হামলায় অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটক আত্মস্বীকৃত জঙ্গি শফিউল ওরফে শরিফুল ওরফে ডন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ জঙ্গি ময়মনসিংহ র্যাব-১৪’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে। র্যাবের দায়িত্বশীল একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বর্বরোচিত ওই দু’জঙ্গি হামলার কুশীলব ওই স্যার ও আরো কয়েক জঙ্গিকে গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে শফিউল জানিয়েছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারীরা তারই সতীর্থ। তারা সবাই একই গুরুর শিষ্য। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কোন এক অজ্ঞাত স্থানে ওই স্যারের নিয়ন্ত্রণেই রমজানের দু’দিন আগে শফিউলসহ ৭ জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলো। চোখ বেঁধে ও ওয়েল্ডিং’র দোকানের কর্মচারীদের ব্যবহৃত কালো চশমা পরে তাদের সেই অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের জেহাদী বয়ানও প্রদান করেন ওই কথিত ‘স্যার’।
একই সঙ্গে ৭ জন প্রশিক্ষণ নিলেও গুলশান মিশনে তাদের ৫ জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর শফিউল ও আবীরকে সরাসরি গত ২ জুলাই (শনিবার) পাঠানো হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। সেখানে আকাশ নামের তাদের এক সতীর্থ গুরুদয়াল কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে এক অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তার বাড়ি ভাড়া নেন। এরপর তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন আরো কয়েকজন। শোলাকিয়া মিশনের ৩ দিন আগে গত ৪ জুলাই (সোমবার) শফিউল ও আবীরদের সঙ্গী হন ওই কথিত ‘স্যার।’ ঈদের আগের দিন ৬ জুলাই (বুধবার) শফিউল ও আবীর শোলাকিয়া মাঠে গিয়ে রেকী করেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানান আটক এ দেশীয় জঙ্গি। ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শফিউল ও আবীরের হাতে শক্তিশালী হাত বোমা, চাপাতি, পিস্তল ও চাইনিজ কুড়াল তুলে দেয়া হয়। তাদের দু’জনকে অ্যাকশনে পাঠিয়ে তাদের সঙ্গেই ওই কথিত স্যারসহ ৩ জঙ্গি ভাড়া বাসা থেকে বেরিয়ে যান, জানিয়েছে দায়িত্বশীল ওই সূত্রটি।
জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল স্বীকার করেছে, শোলাকিয়া হামলার তাদের টার্গেট ছিল দু’টি। শোলাকিয়ার ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা। স্যারের নির্দেশমতো মিশনে গিয়ে আবীর নিহত হলেও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন শফিউল ওরফে শরিফুল।
তবে জঙ্গি প্রশিক্ষণের শুরু থেকে হামলার দিন পর্যন্ত ওই ৭জনের কাউকেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিতেন না ওই কথিত স্যার। এমন দাবি করেছে শফিউল ওরফে শরিফুল।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ র্যাব-১৪’র কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে: কর্ণেল মো: শরীফুল ইসলাম জানান, কোন রকম চাপ প্রয়োগ ছাড়াই আটক জঙ্গি শফিউল ওরফে শরিফুল ওরফে ডনকে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার দেয়া তথ্যমতে ঘটনার কুশীলব ও অন্যান্য জঙ্গিদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে শফিউলের : পুলিশকে কোপানোর মতো বর্বর কায়দা নেয়ায় জঙ্গি শফিউল ওরফে শরীফুল ওরফে ডন বিশেষ কোন ওষুধ সেবন করেছিল কী না এ বিষয়টি নিশ্চিতে তার রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে গোয়েন্দারা সেই সম্পর্কিত রিপোর্ট হাতে পাবেন বলে জানিয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বশীল একটি সূত্র। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া প্রহরার মধ্য দিয়ে শফিউল এখন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ময়মনসিংহ র্যাব-১৪’র দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের প্রথম টার্গেট ছিল শোলাকিয়ার ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ। কিন্তু এ টার্গেট ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হাতবোমা নিক্ষেপের পাশাপাশি চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করে। এর আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কনস্টেবল আনসারুলের মাথায় কোপানোর আঘাত ছিল। তার হাত ও পা ভাঙা ছিল। অর্থাৎ, হাতবোমা বিস্ফোরণ করেই জঙ্গিরা ক্ষান্ত না হয়ে তার ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিতের চেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় শোলাকিয়া কিলিং মিশন শুরুর আগে জঙ্গিরা ড্রাগ জাতীয় বিশেষ কোন ওষুধ সেবন করেছিল কী না সেটি নির্ধারণ করতেই ক’দিন আগে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক জঙ্গি শফিউল ওরফে শরীফুলের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। ঠা-া মাথায় এবং কোন প্রকার সহমর্মিতাবোধ ছাড়া কিলিং মিশনে মেতে ওঠায় এ পরীক্ষা করানো হয়, দাবি সূত্রের।
রাজধানীর গুলশানের পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়ে প্রাণ হারানো ৫ জঙ্গির ভিসেরা পরীক্ষা করানো হচ্ছে তিনটি ল্যাবে। এ কারণেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জঙ্গি শফিউলের শোলাকিয়া মিশনের আগমুহূর্তে বিশেষ কোন ওষুধ সেবনের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, পুরোপুরি মগজ ধোলাই করে জঙ্গিদের কিলিং টার্গেট দিয়ে মাঠে নামানো ছাড়াও তারা যাতে একই চিন্তায় মগ্ন থাকতে পারে এজন্য তাদেরকে বিশেষ ধরনের ওষুধ সেবন করানো হয়। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট চিন্তার বাইরে ভিন্ন কোন চিন্তা যেন তাদের পেয়ে না বসে এ কারণেই এ কৌশল প্রয়োগ করে নেপথ্য কুশীলবরা। এর কিছুটা প্রমাণও মেলে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: মুর্শেদ জামানের বক্তব্যে।
তিনি জানান, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গি আবির গুলিবিদ্ধ হবার পরেও চাপাতি হাতে পুলিশের দিকে তেড়ে এসেছিল। মগজ ধোলাইয়ের কারণেই ওদের মৃত্যুর ভয় ছিল না।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ র্যাব-১৪’র কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে: কর্ণেল মো: শরীফুল ইসলাম জানান, র্যাবের হাতে আটক জঙ্গি শফিউলের চিকিৎসার পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, বিশেষ কোন ওষুধ সেবনের ২৪ ঘন্টার মাথায় তার কার্যকারিতা থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।