Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসেম সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার

প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০১ এএম, ১৭ জুলাই, ২০১৬

আজ সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি দুই মহাদেশের জনগণের স্বার্থে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে নেতাদের অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে গতকাল শনিবার শেষ হলো ‘এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলন’ (আসেম)। সম্মেলনের শেষ দিনে গৃহীত ঘোষণাপত্রে আসেম নেতারা বলেন, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা থেকে বাস্তব ফলাফল পেতে উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে।
সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থা দমন, সমুদ্রসীমা সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, জলদস্যুতা ও সমুদ্রে সশস্ত্র ডাকাতির পাশাপাশি মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান, সাইবার নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধের মতো বিষয়ে অভিন্ন স্বার্থের প্রতি আসেম গুরুত্ব দেবে।
বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, গতকাল সকালে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে আসেম সদস্যভুক্ত দেশের নেতাদের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান কাউন্সিল এন্ড ইউরোপিয়ান কমিশন এবং এএসইএএন সেক্রেটারিয়েট প্রধানরা এ ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করেন। অন্য নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই অধিবেশনে যোগ দেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন, মঙ্গোলিয়া সফর নিয়ে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল ৪টায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বাসস জানায়, আসেম সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা ঘোষণাপত্রে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং আরো যোগাযোগ, পারস্পরিক স্বার্থে অংশীদারত্ব এবং এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে একত্রে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন।
টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরাপত্তা এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, জাতিসংঘ সনদের নীতি অনুসরণ, আইনের শাসন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার দুর্নীতি, অভিবাসন, ২০৩০ সাল নাগাদ এজেন্ডা বাস্তবায়নের গুরুত্ব দেবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আসেম নেতারা।
পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা, খাদ্য, পানি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা, স্থল ও সমুদ্র সম্পদ এবং অবৈধ, অনির্দেশিত ও অননুমোদিত মাছ শিকার, শিক্ষা, দারিদ্র দূরীকরণ, ব্লুু-ইকোনমি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উদারীকরণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান; বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা, পরিবহন, এমএসএমইস সহযোগিতা, সব খাতে সক্ষমতা অর্জন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি ভবিষ্যতে আরো গুরুত্ব দেয়া হবে বলেও আসেম সম্মেলন থেকে জানান নেতারা।
মঙ্গোলিয়া সফর নিয়ে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল ৪টায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তিনদিনের মঙ্গোলিয়া সফর ও সেখানে এশীয়-ইউরোপীয় সম্মেলনে (আসেম) অংশগ্রহণ এবং সম্মেলনের ফাঁকে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।
আসেম’র ২০তম বর্ষপূর্তির এবারের সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ ২০০৬ সালে আসেম’র ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রদত্ত ’হেলসিংকি’ ঘোষণার কথা স্মরণ করেন। সে সময় আসেম’র অভ্যন্তরে অনানুষ্ঠানিকতা, নেটওয়ার্কিং এবং সাবলিলতাকে উৎসাহিত করা হয়। এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একে অন্যের মধ্যে গভীর সামঞ্জস্য সৃষ্টি এবং পরস্পরিক ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আকাক্সক্ষার যোগসূত্র ঘটানোর উদ্যোগ গৃহীত হয়।
আসেম’র তৃতীয় দশকে সফলভাবে পদার্পণ করায় একে সফলভাবে পরিচালনার জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুতে নেতৃবৃন্দ ‘এশিয়া ইউরোপ কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক (এইসিএফ) ২০০০ এবং অন্যান্য আসেম ডকুমেন্ট অনুযায়ী অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংলাপ এবং সমবায় উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনীতি এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৈশ্বিক রাজনীতি অনিশ্চিত এবং অস্থিতিশীলতার পথে ধাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ঘোষণায় বলা হয়, আসেম তাঁর ভূমিকাকে বাহন হিসেবে বহুমাত্রিকতা এবং আইনের শাসন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিশ্ব ব্যবস্থার পথে ধাবিত করবে।
পাশাপাশি সম-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জনগণের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার অন্বেষণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন এবং একটি মানসম্পন্ন জীবনের তাগিদে আসেম এর মূল তিন স্তম্ভে¢র সম্প্রসারণ ঘটাবে। আসেম এশিয়া-ইউরোপের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালীকরণ, বহুমাত্রিক এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে তুলতেও প্রচেষ্টা চালাবে।
আসেম’র সকল সহযোগিতা বিষয়ক রূপরেখায় মুখ্য হতে হবে যোগাযোগ। দুটি অঞ্চলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আন্তঃনির্ভরতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, আসেমের যেকোন কর্মকা-ে এশিয়া ও ইউরোপকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা যাবে না।
সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আসেমের গুরুত্ব ও অস্তিত্ব তুলে ধরতে একটি আসেম দিবস নির্ধারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এবং প্রতি বছর ১ মার্চ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের যে কোন দিন এটা উদযাপনের সুপারিশ করেছেন।
আসেম নেতৃবৃন্দ আসেমের বেশ কিছু অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বৃহত্তর সমঝোতায় উৎসাহদান, রাজনৈতিক সংলাপ বিস্তৃৃতকরণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিতকরণ ও সামাজিক সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি এবং এশিয়া-ইউরোপ আন্তঃযোগাযোগ গভীর করা, পারস্পরিক স্বার্থ ও সংযোগ শানিত করা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, শান্তি ও উন্নয়নের জন্য বহুস্তর বিশিষ্ট সহযোগিতা।
তারা আরো বলেন, এই গ্রুপটি জনগণ থেকে জনগণ পর্যায়ে বৃহত্তর যোগাযোগ, আন্তঃআঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং কার্যকর বহুপাক্ষিকতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও অন্যান্য বহুমুখী প্রক্রিয়া জোরদারের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এদিকে গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-এর একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনৈতিক কোরের ডীনসহ উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দু’টি প্লেনারি মিটিংসহ আসেম- সম্মেলনের উদ্বোধনী, সমাপনী এবং অন্যান্য অধিবেশনগুলোতে যোগদান করেন। দ্বিতীয় প্লেনারিতে, তিনি ‘প্রমোটিং আসেম পার্টনারশিপ অব গ্রেটার কানেকটিভিটি’ শীর্ষক একটি বিবৃতি দেন।
সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ-এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। পাশাপাশি, ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেন্টিলোনি সিলভেরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও গতকাল তিনি ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সাথেও বৈঠক করেন।
অধিকতর ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্ব গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের সম্পর্ক গভীরতর করার উদ্দেশ্যে এশিয়া ও ইউরোপের ৫১টি দেশ ও দু’টি আঞ্চলিক সংস্থার ফোরাম ‘আসেম’ গঠিত হয়। বাংলাদেশ ২০১২ সালে ‘আসেম’- এ যোগদান করে। এশীয় ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ফোরাম ‘আসেম’-১৯৯৬ সালের ১ মার্চ থাইল্যান্ডের ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আসেম-এর সদস্যগুলো হচ্ছে : অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, ব্রুনেই দারুস সালাম, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কাজাখস্থান, লাওস পিডিআর, লাতভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, সেøাভাকিয়া, সেøাভেনিয়া, কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনাম। এছাড়াও, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আসিয়ান- এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আসেম সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ