পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720176060](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : পেপে। না এ পেপে খাওয়ার ফল নয়। দেশের মানুষের কাছে তিনি এ নামে সর্বাধিক পরিচিত। পুরো নাম হোসে আলবার্তো পেপে মুজিকা কর্ডানো। সংক্ষিপ্ত নাম হোসে মুজিকা। এক বছর আগেও ছিলেন একটি দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে রাষ্ট্র শাসন করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাসিক বেতন পেতেন ১০ লাখ টাকা (১২৫০০ ডলার)। ১ হাজার ২৫০ ডলার সংসার খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা দুস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। ৫ বছর দেশ শাসনের পর এখন স্ত্রীর খামারে ফুল-ফলের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সংসারে কাজের লোক রাখেননি। নিজের কাপড় নিজেই পরিষ্কার করেন। খামারে উৎপাদিত ফুল-ফল বিক্রি করেন। বাসার সব কাজ নিজ হাতেই করেন। মাটির কুয়ার পানি খান।
অবাক হচ্ছেন! গল্প নয় এটা সত্যি ঘটনা। এই পেপে ছিলেন উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতার মেয়াদ শেষে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কব্জায় না রেখে জুনিয়রদের হাতে তুলে দিয়ে ফুল-ফল চাষের কৃষি কাজে ফিরে গেছেন। উৎপাদিত ফুল-ফল বিক্রি করেই সংসার চালান। অথচ এ নেতা আমাদের দেশের অধিকাংশ নেতানেত্রীর মতো হঠাৎ করে রাজনীতিক হননি। ষাটের দশকে কিউবার ফিদেল কাষ্ট্রোর নেতৃত্বে বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ছিলেন গেরিলা নেতা। জেলও খাটেন ১৪ বছর। বামপন্থী এই গেরিলা নেতা দেশের বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে মুভমেন্ট অব পপুলার পার্টিসিপেশন (এমপিপি) নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৯৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি ডেপুটি এবং ১৯৯৯ সালে সংসদের এমপি (সিনেটর) নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই এমপিপির জনপ্রিয়তা বাড়ে। ২০০৪ সালে ব্রড ফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শাখা হয়ে ওঠে এমপিপি। ওই বছরের নির্বাচনে আবারও এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে তিনি সরকারের মৎস্য গবাদিপশু, কৃষি বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে ২০১০ সালে ১০ মার্চ প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৩৫ সালে জন্ম নেয়া হোসে মুজিকা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বাড়তি খরচ হবে শঙ্কা থেকে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত সরকারি বাড়ি-গাড়ি কোনোটাই ব্যবহার করেননি। এখন রাজধানী মন্টিভিডিওর পাশে স্ত্রীর মালিকানাধীন ভাঙা এক খামার বাড়িতে বসবাস করছেন। নিজেই কাপড় কাচেন। কর্দমাক্ত পথ পেরিয়ে নিজের খামার বাড়িতে যাতায়াত করেন। খামারে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত কৃষিকাজ করেন। খামারে লাগিয়েছেন হরেক রকমের ফুল ও ফলের গাছ। গাছে সার দেয়া, ক্ষেত নিড়ানো থেকে শুরু করে ফুল তোলা সব কাজ করেন নিজ হাতেই। ফুল বিক্রি করার টাকা দিয়েই সংসার চলে। এমপি, মন্ত্রিত্ব ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পরও বর্তমানে তার নিজস্ব সম্পদের মধ্যে রয়েছে একটি গাড়ী ও একটি কুকুর।
ক্রিকেটের কারণে সারাবিশ্বে আমাদের পরিচিতি হলেও উরুগুয়ের পরিচিতি ফুটবলের কারণে। বিশ্বকাপ ফুটবলে উরুগুয়ে প্রতিবছর অংশগ্রহণ করে। ল্যাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ২০১৫ সালে যে রাজনীতিক সে দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন; সেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালে খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাংলাদেশে এটা কল্পনা করা যায়! আমাদের দেশের নেতানেত্রীরা দেশপ্রেমের কথা মুখে বলেন। জনসেবক দাবি করেন। বাস্তবতা কি তাই? হোসে আলবার্তো পেপে মুজিকা কর্ডানো ৭৫ বছরের বেশি সময় সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রাজনীতির কারণে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে বছরের পর বছর যুদ্ধ করেছেন। জীবনের পরতে পরতে রাজনীতি থাকলেও প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দলের নেতৃত্ব ছেড়ে খামারে গিয়ে কৃষিকাজ শুরু করেন। অথচ আমাদের বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণীতে ছিলেন এমন অধিকাংশ নেতাই হাইব্রীড। কম নেতাই আছেন যাদের দীর্ঘ বছর রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারপরও তারা দলের নেতৃত্ব কতৃত্ব ছাড়েন না। দেশে অনেক সাবেক প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, এমপি রয়েছেন; এদের কেউ রাজনীতি করছেন, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। ক্ষমতায় নেই তারপরও জীবনযাপনে এলাহী কা-। অর্থের জৌঁলুসে এমন অবস্থা যে ক্ষমতায় না থেকেও তারা বাসায় কাজের জন্য ১০ থেকে ২০ জন লোক রাখেন। নিজের এবং পরিবারের জন্য ৫ থেকে ১০টি গাড়ী ব্যবহার করেন। সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের প্রায় একই অবস্থা। আর যারা ক্ষমতায় রয়েছেন তাদের তো কথাই নেই। তারা চলেন বাদশাহী ঢং-এ। মন্ত্রী-এমপি হলেই আমাদের নেতানেত্রীরা যেন হাতে ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ পেয়ে যান। রাতারাতি অর্থ বিত্তবৈভবে ফুলেফেঁপে ওঠেন। রিক্সায় চলার টাকা পকেটে থাকতো না এমন থেকে এমপি হওয়ার পর তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল গাড়ী ক্রয় করেন। পাইক-পেয়াদা, উজির-নাজির পরিবেষ্ঠিত থাকেন সব সময়। রাজনীতিকদের অনেকেই বলে থাকেন এদেশে সংসদ সদস্য হওয়া এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসা। একবার এমপি হতে পারলে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না। বর্তমান সংসদে এমন এমপি রয়েছেন যারা বিদেশে হোটেল বয়ের কাজ করেছেন, রাজধানী ঢাকায় মুদির দোকান করতেন। কেউ কেউ বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠানোর রিক্রুটিং এজেন্সিতে দালালী করতেন। এমপি হওয়ার পর তারা রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিছুদিন আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুঃখ করে বলেছেন, বর্তমান সংসদ ‘ইয়াবা’ ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য বেশি হয়ে গেছে।
উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেপে ক্ষমতায় থাকাবস্থায় খরচ বাঁচাতে রাজপ্রাসাদের বদলে খামার বাড়িতে বসবাস করতেন। নিরাপত্তার জন্য থাকতো কয়েকজন পুলিশ। বেতনের অর্থ বাঁচিয়ে দেশের গরীব-দুঃখীদের হাতে ডলার তুলে দিতেন। আমাদের নেতানেত্রীদের ক্ষেত্রে এটা কল্পনা করা যায়? জনপ্রতিনিধি হওয়ায় জনগণই জননেতা পেপেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। অথচ আমাদের নেতানেত্রীরা জনগণের প্রতিনিধি হয়েও সবচেয়ে বেশি ভয় করেন জনগণকেই। বর্তমান সংসদের সাড়ে তিনশ’ এমপির প্রায় সকলেই পুলিশি প্রহরায় চলাফেলা করেন। অর্ধেক এমপি জনগণের ভয়ে নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার সাহস করেন না। যারা কালেভদ্রে যান তারা পুলিশ বেষ্টিত হয়ে থাকেন। জনগণের ভাগ্য বদলের অঙ্গীকার করে এমপি-মন্ত্রী হয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেপের মতোই আমাদের দেশের অনেক নেতা কুকুর পছন্দ করেন। তারাও বাসা-বাড়িতে কুকুর রাখেন। তাদের একটি কুকুরের পিছনে যে অর্থ খরচ হয় সে অর্থ দিয়ে ৫ সদস্যের একটি পরিবার অনায়াসে সংসার চালাতে পারেন। বছর তিনেক আগে একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের কুকুর দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় ওই কুকুটিকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসারত অবস্থায় কুকুরটি মারা গেলে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই সাবেক প্রেসিডেন্ট। এ কান্না দেখে তার দলের নেতানেত্রী ও বাসার কর্মচারীরা কাঁদতে শুরু করেন। হাসপাতালে এক বেদনাবিধূঁর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একটি কুকুরের মৃত্যুতে বেদনাবিধূঁর পরিবেশের সৃষ্টি হয় অথচ এবার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় দুইশ’ মানুষের প্রাণ গেছে। এতোগুলো মানুষের প্রাণ হারানোর পর ওই নেতানেত্রীদের কারো চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়নি। উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে আলবার্তো মুজিকা এখনো কুয়ার পানি পান করেন। অথচ আমাদের দেশের অনেক নেতানেত্রী দেশের মিনারেল ওয়াটার পর্যন্ত পান করেন না। তারা সোনারগাঁও, শেরাটন হোটেল থেকে বিদেশী পানি ক্রয় করে পান করেন। লাতিন আমেকিরা দেশ উরুগুয়ে ফুটবলের কারণে সারাবিশ্বে পরিচিত; বাংলাদেশকে বিশ্ব চেনে ক্রিকেটের কারণে। উরুগুয়েই হোসে মুজিকা জনগণের নেতা এবং জনগণের সেবার জন্য রাজনীতি করেছেন। আমাদের দেশের নেতারাও জনগণের সেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতি করেন। হোসেন মুজিকা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে খামারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আর আমাদের নেতানেত্রীরা?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।