Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে অর্ধশত জঙ্গির বিরুদ্ধে ১৮ মামলার বিচার ঝুলে আছে

প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাক্ষীর অভাবে স্থবির আত্মঘাতী হামলার মামলা
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ও জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১৮টি মামলার বিচার ঝুলে আছে। সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত দায়ের করা এসব মামলার বিচার শুরু করা যাচ্ছে না। এসব মামলার অনেক আসামি ইতোমধ্যে জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে।
ফলে তারা যেকোনো সময় অঘটন ঘটাতে পারে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চট্টগ্রাম আদালতে আত্মঘাতী হামলার মামলাটিও ঝুলে আছে সাক্ষীর অভাবে। বারবার সমন দেওয়ার পরও পুলিশসহ মামলার সাক্ষীরা আদালতে আসছে না। জঙ্গিদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীসহ সকারের উচ্চ পর্যায়ে কঠোর অবস্থান হলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এতে করে জঙ্গি দমনে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে আদালত অঙ্গনে সংশয় দেখা দিয়েছে।
২০১২ সাল থেকে সন্ত্রাস দমন আইনে চট্টগ্রামে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় অর্ধশতাধিক হিযবুত ও জেএমবি সদস্য আসামি। তাদের মধ্যে কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে বলেও জানা গেছে। আইন অনুযায়ী সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর তা আমলে নিয়ে বিচার কাজ শুরুর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার অনুমোদন নিতে হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সন্ত্রাস দমন আইনে অনুমোদনের অপেক্ষায় ২১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় করা মামলা তিনটি। এর বাইরে অন্য ১৮টি মামলার মধ্যে চারটি মামলা জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। বাকি ১৪টি মামলা নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
মামলাগুলোর মধ্যে নগরীর কোতোয়ালি থানার সর্বোচ্চ আটটি, পাঁচলাইশ থানার চারটি, খুলশী থানার দুটি এবং চান্দগাঁও, কর্ণফুলী, চকবাজার, বাকলিয়া, আকবর শাহ ও বায়েজিদ থানার একটি করে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় ২০১০ সালের ঘটনায় হিযবুত সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি মামলায় ২০১২ সালে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু অনুমোদন না পাওয়ায় এখনও সেটির বিচার শুরু হয়নি। চলতি বছর সন্ত্রাস দমন আইনের তিনটি মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখায় অনুমোদন পাওয়ায় সেগুলোর বিচার কাজ শুরু হয়েছে।
এরকম একটি মামলা নগরীর বায়েজিদ থানার শেরশাহ বাংলাবাজার এলাকায় কথিত নেংটা ফকিরের মাজারে ফকির ও খাদেমকে গলা কেটে হত্যা। এ মামলায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ অভিযোগপত্র দেওয়া হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে মামলাটি পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ জুন এ মামলায় জেএমবি সদস্য সুজন ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আগামী ২৬ জুলাই এ মামলায় প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
এর বাইরে চান্দগাঁও থানায় ২০১৫ সালে জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা এবং ২০১৪ সালে হিযবুত সদস্যদের বিরুদ্ধে করা অন্য একটি মামলা পরিচালনায় এ বছর অনুমোদন মিলেছে। বিচারের অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলোর বিচার শুরু করতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার অনুমোদন নিতে হয়। এরকম ২১টি মামলা অপেক্ষমান আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলা হিযবুত তাহরীর ও জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালে আসা মামলাও অপেক্ষায় আছে। নিয়মানুসারে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পক্ষে অনুমতি চেয়ে এক থেকে একাধিকবার চিঠি লেখা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় অর্ধশত আসামি আছে। এখান থেকে কেউ জামিন পায়নি। তবে উচ্চ আদালত থেকে কেউ কেউ জামিন নিয়েছে বলে জেনেছি। পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিচার শুরু না হলে তো আসামিরা সাজা পাচ্ছে না। আমরা প্রস্তুত আছি। অনুমোদন পেলেই বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশপথে পুলিশ চেকপোস্টে আত্মঘাতী হামলার মামলাটিও সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে। টানা ২১ মাস ধরে আদালতে কোনো সাক্ষী হাজির হয়নি। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর ওই হামলায় এক আত্মঘাতি এক পুলিশসহ তিনজন নিহত হন। মামলার সাক্ষীদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য। এই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এরপর প্রায় দুই বছরে মামলার ১৫টি ধার্য দিনে একজন সাক্ষীকেও হাজির করা যায়নি। গত ১১ বছরে এ মামলায় ৭৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুন এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সেদিনও সাক্ষী হাজির হননি। আদালত ২১ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। প্রথম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌসের আদালতে এখন মামলাটির বিচার চলছে।
২০০৬ সালের ১৮ মে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক পরিদর্শক হ্লা চিং প্রু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও বোমা তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন আদালতে। জাবেদ ইকবাল কারাগারে আটক আছেন। আর বোমারু মিজানকে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়ার পথে ছিনিয়ে নিয়ে যায় অন্য জঙ্গিরা, তিনি এখন পলাতক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে অর্ধশত জঙ্গির বিরুদ্ধে ১৮ মামলার বিচার ঝুলে আছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ