Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে অবশেষে হেরে গেল

জিসান আর মায়ের কোলে ফিরতে পারল না

প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে  : মনোহরদীর শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীর মেধাবী ছাত্র জিসান আর মায়ের কোলে ফিরতে পারল না। জিসানকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন পূরণ হলো পিতা-মাতার। জীবনের সিংহদ্বারে পৌঁছেও তাকে পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় নিতে হয়েছে। দীর্ঘ ৭ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেছে জিসান। চিরতরে উড়ে গেছে তার প্রাণপাখি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তার প্রাণপাখি উড়ে গেছে। গত ঈদের দিন সন্ধ্যায় ঢাকা-মনোহরদী সড়কের শিবপুর থানাধীন সোনাকুড়া সিএন্ডবি বাজারের নিকট ড্রাইভার-হেলপার ও তাদের সন্ত্রাসী দোসররা তাকে অমানবিকভাবে পিটিয়ে মাথা থেতলে দেয়। আম গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে সারা শরীর তুলোধুনা করে ফেলে। ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, নিহত জিসান মনোহরদী উপজেলার শুকুন্দী গ্রামের মস্তফা কামাল ও সেলিনা বেগমের পুত্র। সে হাতিরদিয়ার শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীর অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। ঈদের দিন জিসান তার বন্ধু রায়হান, কাইয়ুম, রিফাত ও সোহরাবকে নিয়ে আনন্দ করে ভৈরব ব্রিজ দেখার জন্য বাসযোগে ভৈরব যায়। সেখান থেকে পুনরায় শিবপুরের ইটাখোলার মোড়ে এসে মনোহরদীগামী একটি বাস দেখে ড্রাইভার-হেলপারদেরকে জিজ্ঞাস করে বাসটি মনোহরদী যাবে কিনা। ড্রাইভার-হেলপার মনোহরদী যাবে বলে জানালে জিসান ও তার বন্ধুরা বাসে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসটি শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আর সামনে যাবে না বলে জানায়। এতে বাস যাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যাত্রীরা বাসের ড্রাইভার-হেলপারদের সাথে বাগ-বিত-ায় লিপ্ত হয়। এসময় অবস্থার বেগতিক দেখে ড্রাইভার বাসটি নিয়ে মনোহরদীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে বাধ্য হয়। এরই মধ্যে ড্রাইভার ও হেলপাররা তাদের এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, যাত্রীরা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। এ খবর শুনে এলাকার সন্ত্রাসীরা সামনের স্টেশনের ওঁৎ পেতে বসে থাকে। বাসটি সোনাকুড়া সিএএন্ডবি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার সাথে সাথেই ড্রাইভার হেলপারের মজুদ করে রাখা সন্ত্রাসীরা বাসযাত্রীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্থানীয় মোহরপাড়া গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে রবিন, রুহুল আমিনের দুই ছেলে হাবিবুল্লা ও মেহেদী, নুরুল ইসলামের ছেলে শাকিল ও দোপাত্বর গ্রামের হাসেমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাত্রীদেরকে মারধর করতে থাকলে জিসানের বন্ধুসহ অন্যান্য যাত্রীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা তখন নিরীহ জিসানকে আটক করে তার উপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। তারা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জিসানের মাথা থেতলে দেয়। এরপর আমগাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে তার সারা শরীর তুলোধুনা করে ফেলে। পরে তারা অন্যান্য লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। এসময় স্থানীয় দেওয়ান আলী খলিফা ও এলাকার লোকজন জিসানকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও মারধোর করে। সন্ত্রাসীরা দেওয়ান আলী খলিফার একটি হাত ভেঙে দেয়। এ অবস্থায় ব্যাপকভাবে লোকজন জড়ো হতে থাকলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন জিসানকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মনোহরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সাইন্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা জিসানের মাথা সিটি স্ক্যান করে জানান তার মাথায় জরুরি অপারেশন করতে হবে। মাথায় অপারেশনের জন্য সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জিসানের মাথায় অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তাররা। কিন্তু জিসানের জ্ঞান না ফিরায় তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। সেখানে দীর্ঘ ৬ দিন জিসান মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া সাতটায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। হাজার হাজার মানুষ জিসানদের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৭ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে অবশেষে হেরে গেল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ