পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১তম এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে (আসেম) যোগদানের জন্য তিন দিনের সরকারি সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উলানবাটোর পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। আজ শুক্রবার মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরের শাংরি-লা হোটেলে দু’দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০মিনিটে উলানবাটোরের চেঙ্গিস খান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মঙ্গোলিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম এবং মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ ও এ্যাম্বাসেডর এট লার্জ পি. সাগান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। পরে মঙ্গোলিয়ার সশস্ত্রবাহিনী প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদানকরে। প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দর থেকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে আসেম ভিলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সফরকালে সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী এই শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট তাসখিয়াজিন এলবেগদর্জ। শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম ও দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন এবং আসেম অংশীদারিত্ব ও যোগাযোগ বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সুইস প্রেসিডেন্ট জোহান স্নাইডার, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো অ্যাবে, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেন্টিলোনির সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি অতিথিদের সম্মানে আসেম ভিলেজের মঙ্গোলজেন-এ মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠেয় এক ভোজসভায়ও অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিয়াও, ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক ও ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি জেন ক্লাউড জুনকারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি আসেম নেতাদের সাথে অবকাশকালীন বৈঠকেও অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় এসব বৈঠকে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দু’টি সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের বিষয় তুলে ধরবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আসেম হচ্ছে- ৫১টি এশিয়া ও ইউরোপের দেশ ও দু’টি আঞ্চলিক সংস্থার একটি ফোরাম।আরো বেশি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈশ্বিক শৃংখলা অর্জনের লক্ষ্যে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল পর্যায়ে সম্পর্ক গভীর করতে এটি গড়ে তোলা হয়েছে।থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনে ১৯৯৬ সালের ১মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এশিয়া-ইউরোপ ফোরাম প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আসেম সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, ব্রুনাই দারুস সালাম, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কাজাখস্তান, লাও পিডিআর, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, স্রোভাকিয়া, সেøাভেনিয়া, কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনাম। দু’টি আঞ্চলিক সংস্থা হচ্ছে- ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আশিয়ান। বাংলাদেশ ২০১২ সালে এই ফোরামে যোগ দেয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, কূটনৈতিক কোরের ডিন এবং উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
তেরেসা মে’কে হাসিনার অভিনন্দন, বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া তেরেসা মে’কে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সুবিধাজনক সময়ে তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার পক্ষে গত মাসে অনুষ্ঠিত গণভোটে হেরে যাওয়ার পর ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন। গত বুধবার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ৫৯ বছর বয়সী মে।
গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, আপনার যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে আসাটা আমার জন্য অনেক বেশি উৎসাহব্যঞ্জক। দুই দেশের মধ্যেকার ‘দীর্ঘদিনের শক্তিশালী’ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার মূল্যবোধের আদান-প্রদান, আইনের শাসন, ধর্ম নিরপেক্ষতার পাশাপাশি অভিন্ন ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করা, বিপন্নদের ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য একসঙ্গে কাজ করছে। তেরেসা মে’র গতিশীল নেতৃত্বে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরির মধ্যে দিয়ে এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন।
আপনি একমত হবেন যে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।
সবশেষে আমি আপনাকে অদূর ভবিষ্যতে দুই পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে আপনাকে আমি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সে সময় আপনি নিজেই বাংলাদেশের অগ্রগতি, বিশেষত নারীর ক্ষমতায়ন দেখতে পারবেন। তার সফর দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা দেওয়ার পাশাপাশি নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বার্তায় শেখ হাসিনা ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
ইতালির ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে প্রধানমন্ত্রীর শোক ঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতালির ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাতেও রেঞ্জির কাছে পাঠানো এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং বিপুলসংখ্যক লোক আহত হবার খবরে আমি খুবই মর্মাহত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকার, জনগণ এবং তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। বার্তায় তিনি মহান আল্লাহ তাদেরকে এই শোক কাটিয়ে উঠতে ধৈর্য্য ও সাহস যোগাবেন বলে কামনা করেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে গত মঙ্গলবার দু’টি যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২৩ জন নিহত এবং বিপুলসংখ্যক লোক আহত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।