পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারী সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের অধিকাংশই হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। এক হিসেবে দেখা গেছে, এক মাসে ৬ লাখের বেশি প্রবাসী এসেছেন। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছেন। এদের অধিকাংশকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত তথ্যমতে মার্চ মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিদেশ প্রত্যাগতের সংখ্যা ১ হাজার ২৪০ জন। এর মধ্যে মাত্র ৫৯২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। বাকি ৬৪৮ জন লাপাত্তা। অর্থাৎ ঢাকা দক্ষিণে ৫২% বিদেশফেরত লাপাত্তা।
সারাদেশের প্রায় অভিন্ন চিত্র। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে গ্রামাঞ্চলে যাওয়া নাগরিকদেরও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রাম ফেরতরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। ইনকিলাবের জেলা, উপজেলা, পৌরসভার প্রতিনিধিরা জানান, বিদেশ ফেরতরা যেমন পালিয়েছেন; তেমনি ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরতরা নিত্য হাটবাজার করছেন; প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জানতে চাইলে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ফোকাল পারসন ডা. মীর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় পাসপোর্টে উল্লেখ থাকা ঠিকানা ধরে বিদেশফেরতদের শনাক্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৫৯২ জনকে চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে। ৬৪৮ জন লাপাত্তা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশ থেকে আসার তথ্য গোপন করে লাখ লাখ প্রবাসী অবস্থান করছেন স্বজনদের সঙ্গে। অংশ নিচ্ছেন নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে অন্যদের সংস্পর্শে আসায় তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছেন। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ প্রয়োগের ঘোষণা দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইনটির বিধান না মানলে তিন মাস পর্যন্ত কারাদÐ অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা উভয় দÐে দÐিত হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, বিদেশ থেকে আসা অনেক প্রবাসী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা কোয়ারেন্টাইনের শর্ত পালন করছেন না। তারা অনেকের সংস্পর্শেও যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম না মানলে ও নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করলে এই আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২১ মার্চ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে আসা সব যাত্রীর হাতে অমোচনীয় কালিতে পরবর্তী ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার তারিখ সংবলিত সিল দিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের কেবল মৌখিকভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়। তাদের অধিকাংশই হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেছেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে ফেরা প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট থানায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে অনেকে এ নির্দেশনা মেনে সংশ্লিষ্ট থানায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আর যারা এখনো যোগাযোগ করেননি, দ্রæততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এর পরও যারা নির্দেশনা অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় বিভিন্ন দেশ ফেরত ৮৩৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ায় ৬৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৭১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৩৫ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। জেলায় চলতি মাসের ৯ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৮৬৩ জন বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন। এখনও ৩৯২ জন হোম কোয়ারেন্টিনের বাইরে রয়েছেন। তাদেরও হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার চেষ্টা চলছে। সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ২ হাজার ৫২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গিয়ে আগে আটকে থাকা বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রীরা নিজ দেশে ফিরতে পারলেও লকডাউনের কারণে ভারতীয়রা নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, ১৫ দিনে কক্সবাজার জেলায় ফিরেছেন দুই হাজার ২২২ জন প্রবাসী। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মাত্র ৪৮৩ জন। আর কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন প্রায় সাড়ে ৩০০ জন। বাকিরা নির্দেশ মানছেন না। নওগাঁয় ১১টি উপজেলার মধ্যে তিন উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনকে নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। ১৪ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৭৯৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫২৯ জন। জেলায় এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছিল ১ হাজার ৩২৭ জনকে। নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, বিদেশফেরত ২৩২ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তবে জেলার বিদেশফেরতের সংখ্যা ৩২২ জন। আমাদের সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে মোট ৫১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা সিভিল সার্জন ডা. গৌতম রায় এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান ৩০৮ জনকে করোনাভাইরাস না থাকায় ছুটি দেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম জানান, জেলায় বিদেশফেরত ৩৯৪ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তবে ১৪ দিন সফলভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে ৪৪১ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। কিন্তু এ জেলায় বিদেশ ফেরতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। ল²ীপুর জেলায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীর সংখ্যা ১২০৬ জন। জেলায় বিদেশফেরতের সংখ্যা ৩৭০৯ জন বলে জানান পুলিশের ডিআই (ওয়ান) ইকবাল হোসেন। কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় মোট ৫৪০ জন বিদেশফেরতের তালিকা থাকলেও তাদের মধ্যে ৩১৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে বিদেশ থেকে ঝালকাঠিতে ফেরা ১ হাজার ২৩ জন প্রবাসীর তালিকা পাঠানো হয়। অথচ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে ১৪৫ জনের তালিকা রয়েছে, যাদের সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রবাসী এসেছেন। তাদের মধ্যে দুই তৃতীয়ংশকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ তারা পালিয়ে রয়েছেন।
জানা যায়, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সভা থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রবাসীদের অবস্থান শনাক্তের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা প্রবাসীদের তালিকা ধরে তাদের অবস্থান শনাক্তে কাজ শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু পাসপোর্টে উল্লেখ করা ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না অধিকাংশ প্রবাসীকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।