Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবিধান জটিলতায় হতাশ কৃষি বিজ্ঞানীরা

বিএআরসিকে লিগ্যাল নোটিস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০৬ এএম

প্রবিধান জটিলতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৯ অনুযায়ী বিভিন্ন পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএআরসির বয়সের সীমা নির্ধারণে দেখা দিয়েছে অসঙ্গতি। অসঙ্গতি নিরসন না করেই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি নতুন প্রবিধানমালা অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি)কে লিগ্যাল নোটিস দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্ট বারের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েহদুল হক সুমন নোটিসের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানী রেজোয়ান মোল্লাও বিএআরসির এনএটিপি প্রকল্পে কর্মরত মনিটরিং কর্মকর্তা দীপক কুমারের পক্ষে এ নোটিস দেয়া হয়েছে।
নোটিসটি পাঠানো হয়েছে গত মঙ্গলবার। বিএআরসির সদস্য পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), নির্বাহী চেয়ারম্যান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে এ নোটিস পাঠানো হয়। আগামি ২৮ মার্চের মধ্যে সৃষ্ট অসংগতির ব্যাখ্যা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে নোটিসে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে-মর্মে হুশিয়ারি দেয়া হয়।
এ আইনজীবী জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম বা এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা প্রবিধানমালায় আনা পরিবর্তনের কারণে বিএআরসিতে উচ্চতর পদে চাকরির আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিএআরসি নতুন প্রবিধানমালা অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে দীর্ঘদিন এই নিয়োগে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা হতাশ হন। তারা বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের অসংগতি নিরসন ও জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থা বা এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অভিন্ন প্রবিধানমালা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়।
নোটিসের তথ্যমতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৯ অনুযায়ী গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা সবোর্চ্চ ৩৯ বছর উল্লেখ করা হয়, যা একই প্রতিষ্ঠানের আগের চাকরি প্রবিধানমালার সম্পূর্ণ বিপরীত। ১৯৮৯ সালের প্রবিধানমালায় এটি ছিল সর্বনিম্ন ৩৯ বছর। একইভাবে অন্যান্য পদ যেমন-ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন কারিগরি সম্পাদক (সিনিয়র সায়েন্টিফিক এডিটর), সিনিয়র প্রটোকল অফিসার, সিনিয়র সহকারী পরিচালক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণে এ ধরণের অসংগতি তৈরি হয়েছে। আগের প্রবিধানমালা ১৯৮৯ অনুযায়ী সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব পদে বয়স সর্বনিম্ন ৩৫ বছর উল্লেখ থাকলেও ২০১৯ সালে সংশোধিত প্রবিধানমালায় ৩৫ বছরকে সবোর্চ্চ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৯ অনুযায়ী বিভিন্ন পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএআরসির বয়সের সীমা নির্ধারণে বড় ধরণের অসামঞ্জস্যতা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাকরি প্রবিধানমালায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লিখিত বয়সসীমা বিএআরসির চাকরি প্রবিধানমালায় উল্লিখিত সর্বোচ্চ বয়সের চেয়ে বেশি। যেমন-বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের চাকুরী প্রবিধানমালায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লিখিত সর্বোচ্চ বয়স তদূর্ধ্ব ৩৯ বছর হলেও এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং ও পামর্শক প্রতিষ্ঠান বিএআরসির উল্লিখিত বয়স সর্বনিম্ন ৩৯ বছর। এতে করে বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীন ও কম অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের কৃষি গবেষণা সিস্টেমের তদারক ও মনিটরিং সংস্থা হিসেবে পরিচিত বিআরসিতে নিয়োগ লাভের সুযোগ তৈরি হলো।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীর বয়স পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের উল্লিখিত পদে পদোন্নতির সময় পদোন্নতি প্রাপ্তদের বয়স ছিল ৪৫-৫০ বছর এবং অধিকাংশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পদোন্নতির চিত্র প্রায় একইরকম। একজন বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন গবেষণা, গবেষণা সমন্বয়, গবেষণা পরীবিক্ষণ ও পর্যালোচনা সংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত থাকার পর উল্লিখিত কর্মকান্ড যথাযথভাবে সম্পাদনের সক্ষমতা অর্জন করে এবং চতুর্থ গ্রেডে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক যদি ৩৯ বা তার কম বয়সের কোনো প্রার্থীকে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার মধ্যে বয়সের দীর্ঘ ব্যবধান সৃষ্টি হবে। এবং পরবর্তীতে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরিচালক পদে পদোন্নতি ও পদায়নে স্পষ্ট অসামঞ্জস্যতা দেখা দেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রবিধান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ