Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাত্রী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল, সিলেট ওসমানী ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও এপিবিএন। নাশকতা ও জঙ্গি হামলা রোধে ডগস্কোয়াড টিমসহ র‌্যাব, পুলিশ ও এপিবিএন-এর অতিরিক্ত বিশেষ নিরাপত্তা টিম নিয়োগ করা হয়েছে। গতকাল থেকেই সব বিমানবন্দরেই এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরগুলোতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। তবে বিমান মন্ত্রী এটাকে রেড এলার্ট বলতে রাজি নন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলছেন, দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় দেশের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি জানান। এর পরপরই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের তৎপরতা শুরু হয়।
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানায়, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশের সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা, কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে চেকিংয়ে। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে সব ইউনিটের কর্মকর্তাদের।
নিরাপত্তা ইস্যুতে গতকাল সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রাজধানীর কুর্মিটোলায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এভিয়েশন সিকিউরিটির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে। তবে এটা রেড এলার্ট নয়।’
দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সতর্কাবস্থায় আছে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর। জানা গেছে, বিশেষ সতর্কতা হিসেবে বিমানবন্দরটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে পুলিশের স্পেশাল ফোর্স ‘সিআরটি’। বিমানবন্দরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত ১০০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের ভেতরে মোতায়েন রয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যদের রাখা হয়েছে বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে। প্রতিটি এন্ট্রি পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। দর্শনার্থী প্রবেশে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কেউ যাতে বিমানবন্দর এলাকায় অনর্থক ঘোরাফেরা করতে না পারে, সেজন্য কড়া নজরদারি করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিমানবন্দরের এরাইভাল ও ডিপার্চার কনকোর্স হলে যাত্রী ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
একইভাবে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা নেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শাহ আমানত বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর থেকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রতিটি বিভাগে বাড়তি জনবল পদায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরে নিয়োজিত এপিবিএন ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ২০০ এপিবিএন সদস্য নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে ১০০ বাড়িয়ে তা ৩০০ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিজিবি ও র‌্যাবের টহলও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরের প্রবেশপথে দুটি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল করিম বলেন, সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গি হামলার পর থেকে বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে এপিবিএন ও আনসার ব্যাটালিয়নের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি যাত্রী ও তাদের সঙ্গে আনা মালামাল শতভাগ পরীক্ষা করছে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্মকর্তারা।
এদিকে গতকাল সরকারের নির্দেশের পর পরই নিরাপত্তা জোরদার করেছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও। বর্তমানে প্রায় ১০০ এপিবিএন সদস্য ওসমানী বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এপিবিএনের সদস্য সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে কতজন বাড়ানো হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এর পর থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, গত নভেম্বর থেকে ওসমানী বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াডসহ ছয় বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। ডগ স্কোয়াড এখনো দায়িত্বে আছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে যশোর বিমানবন্দরে লাগানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। ঈদের পর পরই বিমানবন্দরটিতে এসব ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়। পাশাপাশি পুলিশি নজরদারি বাড়িয়ে প্রবেশ গেটে তল্লাশি করে যাত্রীদের ভেতরে নেয়া হচ্ছে। পুরো বন্দর ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
যশোর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আলমগীর পাঠান বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দরের পুরো এলাকায় ১৫টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করেছি। শিগগিরই ১৫ জন আনসার নিয়োগ করা হচ্ছে। আর প্রতি শিফটে ১০ জন করে পুলিশ বন্দরের নিরাপত্তায় কাজ করছে। এছাড়া যাত্রীদের এন্ট্রি গেটে তল্লাশি করে ঢোকানো হচ্ছে।’
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে গতকাল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এসব বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সাতটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে বৈঠক করবে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের সব দূতাবাসকেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে সবাইকে নিশ্চয়তা দেয়ার কথা বলার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ জানান, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। সবগুলো ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত বছরের নভেম্বর থেকে ওসমানীতে বিজিবি’র ৬ সদস্যকে ডগ স্কোয়াডসহ মোতায়েন করা হয়। এ স্কোয়াড এখনো দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, পুলিশের স্পেশাল টিম হচ্ছে এপিবিএন। ওসমানী বিমানবন্দরে বর্তমানে প্রায় ১০০ এবিপিএন সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিমান মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা চাই না আমাদের সুনাম নষ্ট হোক। এভিয়েশন সিকিউরিটির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স।’ রাজধানীর কুর্মিটোলায় সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির (সিএএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী। কার্গো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইন শুরুতেই লন্ডন ফ্লাইট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এখন আমাদের লোকজন সফলভাবে লন্ডন ফ্লাইট অপারেট করছে। অস্ট্রেলিয়া কার্গো ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে জার্মান কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। জার্মানের প্রতিনিধি দল শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এরপরও এসব নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে’, বলেন মন্ত্রী।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি ওসমানী ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। শুধু বিদেশি যাত্রী নয়, দেশি যাত্রীদের জীবনও আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।
গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় আমরা ব্যাকফুটে আছি। বর্তমান পরিস্থিতি জাতীয় জীবনে বড় ধরনের দুর্যোগ। আমাদেরকে আশপাশের খোঁজখবর রাখতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ