পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শাহ্ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরী জাতীয় ঐক্যের প্রতীক তারা ছিলেন আছেন থাকবেন -নূর হোসাইন কাসেমী ও নেতৃবৃন্দ
স্টাফ রিপোর্টার : জুমা মুসলিম জাতির জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুমার নামাজ ও তার পূর্বে সম্মানিত খতিব সাহেবদের মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ইহজগতে আত্মশুদ্ধিমূলক কোরআন ও সুন্নার আলোকে বয়ান বা খুতবা, যা রাসূল (স.) সাহাবায়েকেরামদের উদ্দেশ্যে মসজিদে নববীতে করেছেন, তারই অনুকরণে মুসলিম জাতির পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃঙ্খলা, পরস্পরে ভাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ়করণ ও মানবিক দায়িত্ববোধ সৃষ্টির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ আদর্শ সমাজ গঠনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে সম্মানিত খতিব সাহেবগণ উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহ প্রদান করে থাকেন। যার মাধ্যমে সমাজের নানাবিধ সমস্যার নিরসন হয়ে থাকে। অভদ্ররা ভদ্রতা এবং বেয়াদব ও সন্ত্রাসীরা আদব-আখলাক ও শৃঙ্খলা শিখতে পায়। ইহাই বাস্তবতা। পক্ষান্তরে জুমার খুতবায় জঙ্গি আর সন্ত্রাসী তৈরি হয়, ইহা পাগলের প্রলাপ।
গতকাল বিকালে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর অস্থায়ী কার্যালয় বারিধারা মিলনায়তনে মহানগরীর এক জরুরি সভায় সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, কাকে খুশি করার জন্য একটি শান্তিময় সমাজে জুমার খুতবায় নজরদারি মুসলিম জনতা তা জানতে চায়। আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, নজরদারির নামে জুমার খুতবা নিয়ন্ত্রণের কোনো হটকারি পদক্ষেপ জনগণ মেনে নিবে না, নিতে পারে না।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, মাও. আবুল কালাম, মাও. আতাউল্লাহ হাফিজ্জী, মাও. মোস্তফা আজাদ, মাও. জহিরুল হক ভূঁইয়া, মাও. হাকীম আব্দুল করিম, ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মুফতি আব্দুস সাত্তার, শেখ গোলাম আসগর, মাও. আহমদ আলী কাসেমী, মাও. মঞ্জুরুল ইসলাম, মাও. বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাও. ফজলুল করিম কাসেমী, মাও. মুজিবুর রহমান হামিদী প্রমুখ।
নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক আধ্যাত্যিক জাতীয় সংগঠন। যার শিকড় দেশের মাটির অনেক গভীরে প্রথিত। যার উদ্দেশ্য খোদাদ্রোহী ও দেশদ্রোহীদের কবল থেকে ধর্ম ও দেশকে রক্ষা করা। যার ভিত্তিমূলে আল্লাহর রাসূল (স.) এর ইজ্জত রক্ষার্থে শহীদদের পবিত্র তাজা খুন ঢালা হয়েছে। যার সম্মানিত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী মা.জি.আ. এবং মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মা.জি.আ.। যাঁদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে নাস্তিক মুরতাদদের কবর রচনা হয়েছে। আজো তাঁদের নেতৃত্বে দেশ ও ইসলাম রক্ষায় লাখো লাখো মানুষ জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তাঁদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি দেশ-বিদেশের আলেম-উলামা ছাড়াও কোটি কোটি ঈমানদার মানুষের গভীর আস্থা ও আনুগত্যের আর কোনো নজীর নেই। হেফাজতের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিকট তাঁরা আস্থা ও জাতীর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। এর কোনো বিকল্প নেই।
আল্লামা কাসেমী আরো বলেন, কিছুসংখ্যক দুষ্টচক্রের বিভাজন সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে কান না দিয়ে আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বকে দেশ ও জাতীর জন্য নেয়ামত ও রহমত মনে করে সর্বস্তরের নেতকর্মীদের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীন-দেশ ও মানবতার জন্য কাজ করে যাওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ঢাকা মহানগর
যুগ যুগ ধরে চলে আসা স্বাধীনভাবে খুতবাদানের পদ্ধতিকে বাধাগ্রস্ত করলে এবং খুতবা প্রদানে কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ করলে জনমনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। গতকাল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, জামেয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ মিলনায়তনে মহানগর কমিটির দায়িত্বশীলদের এক বৈঠকে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। এছাড়া বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগর জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা আমিরুল ইসলাম ফরিদাবাদী, মুফতি আব্দুল গনি, মহানগর জমিয়তের তথ্য ও প্রযুক্তি-বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা ওমর আলী, মাওলানা আ. রশিদ ও দিদার শফিক প্রমুখ। মাওলানা আফেন্দী আরো বলেন, ‘ইমাম ও খতিবগণ সব সময়ই যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপোষহীন। সুতরাং তাদের বয়ানকে নজরদারির আওতায় আনার কোনো প্রয়োজন নেই।
নেজামে ইসলাম পার্টি
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা সৈয়দ আবদুল মালেক হালিম নিরাপত্তার অজুহাতে জুমার খুতবা নজরদারির সিদ্ধান্তকে অনভিপ্রেত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন যে, খুতবা নজরদারি নয়, বরং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার জন্যে খুতবার মতো ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি বলেন, খতিবদের নজরদারি করার প্রয়োজন নেই বরং তাঁরা সর্বদা জনগণের নজরদারি মধ্যে থাকেন। তাই খতিবগণই পারেন সন্ত্রাসের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করার লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাব্যস্ত হওয়ার আগেই দেশের মসজিদের খতিবদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মনে করা শুভ বুদ্ধির কাজ নয়। মুসলিম জনগণের লালিত ও ধারণকৃত চিন্তা-চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধের ধারক-বাহক খতিবদের বিরুদ্ধে এহেন নেতিবাচক পদক্ষেপ কোনোক্রমেই কাম্য নয়।
নেজামে ইসলাম পার্টির বিবৃতিতে নিরাপত্তার কারণে জুমার খুতবা নজরদারির সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, খতিবগণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের চেতনাকে শাণিত ও উদ্দীপ্ত করার প্রয়াসে লিপ্ত। তাঁরা কাজ করেন, সকলকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে। চিন্তা-ভাবনার জগতে বিরাজমান নৈরাজ্যের উন্নতি ঘটানো, সমাজের মনোভূমিতে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং মানুষের অন্তরে পারস্পরিক ভালোবাসা, সাম্য ও মৈত্রীর অনুভূতি জাগ্রত করার কাজে নিয়োজিত খতিবগণ।
তিনি এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন যে, তাঁদের দ্বারাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুসলিম মননকে প্রেরণা যোগানো এবং মুসলিম মননে সন্ত্রাসবিরোধী চেতনা সঞ্চারিত করার কাজ খুবই সহজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।