পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২ বছর ১ মাস ১৭দিন পর মুক্ত হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে তিনি ছাড়া পান। গোলাপি রঙের শাড়ি পড়িহিত বেগম জিয়াকে হুইল চেয়ারে বসে বিএসএমএমইউ’র কেবিন ব্লক থেকে বের করে আনা হয়। চোখে ছিল সানগ্লাস, মুখে মাস্ক। হাজার হাজার নেতাকর্মী সকাল থেকে বাইরে অপেক্ষা করছিল। বেগম জিয়া বেড়িয়ে আসার আগেই হাসপাতালের ভেতরেই তাঁর গাড়ি নেয়া হয়। হাসপাতালের ভেতরেই তাঁর গাড়িকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বেগম জিয়া গাড়িতে ওঠার আগে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দারের গাড়িতে করে তিনি গুলশান-২ এর ৭৯ রোডের ভাড়া বাসা ফিরোজার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে পথে জনতার ভীড় ঠেলে সেখানে পৌঁছেন। বিএসএমএমইউ’র মতো বাসার সামনেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে বেগম জিয়াকে দেখার অপেক্ষায় ভিড় করতে দেখা যায়।
বেগম জিয়াকে বহন করা গাড়ি বাসার ভেতরে প্রবেশের পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, পরিবারের কয়েকজন সদস্য, বোন সেলিমা ইসলাম, দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা তাকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তাকে হুইল চেয়ারে করে গাড়ি থেকে বের করা হয়। বাসার ভেতরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমানসহ অনেকেই ছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে সবার হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক থাকলেও বাইরে ছিল নেতাকর্মীদের ঢল। বেগম জিয়াকে তারা মূহুর্মূহু স্লোগানে স্বাগত জানান।
এর আগে বেলা দুইটার কিছু সময় পরে কারা কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ছাড়পত্র নিয়ে বিএসএমএমইউতে যায়। খালেদা জিয়াকে তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিনা ইসলাম ও ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান নিতে হাসপাতালে যান। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁদের গাড়ি হাসপাতালে পৌঁছায়। এর আগেই সেখানে উপস্থিত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক বলেন, উনাকে (খালেদা জিয়া) আমরা ৩টার দিকে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দিয়েছি। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি সোয়া ৪টার দিকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।
হাসপাতালে নেতাকর্মীদের ঢল : গত মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দলের নেতা-কর্মীরা বিএসএমএমইউর সামনে ভিড় করতে থাকেন। ওই দিন ছাড়া পাবেন না জেনেও অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত শাহবাগ ও বিএসএমএমইউ’র আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। বুধবার নিশ্চিত মুক্তি হচ্ছে এমন তথ্য পেয়েই সকাল থেকেই দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে আসতে থাকেন। নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন জানতে পেরে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সকল সংগঠনের নেতাদের ফোন দেন। সেখানে যেনো কেউ ভিড় না করে এজন্য প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরকে নির্দেশ দেয়ার কথা বলেন। এছাড়া আগের দিন বিএনপির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয় বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার কারণে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে এবং বয়স, শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় বেগম জিয়া ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। এজন্য কোন নেতাকর্মী যাতে সেখানে জমায়েত না হন সেজন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
দীর্ঘ ২ বছর ১ মাস ১৭দিন (৭৭৬ দিন) পর প্রিয় নেত্রী কারামুক্ত হচ্ছেন সেই আবেগ, ভালোবাসা, নেত্রীকে একনজর দেখার উৎকণ্ঠা কোন নির্দেশ মানেননি। সকাল থেকে প্রতিটি ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে আর বিএসএমএমইউ’র ভেতরের চত্ত¡রে, গেইটের বাইরের রাস্তায় বাড়তে থাকে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভীড়। দুপুর ২টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাসপাতালে পৌঁছে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কেউ যেনো সেখানে ভিড় না করেন। তাতেও কোন কাজ হয়নি। দুপুর ২টার কিছু সময় পরে খালেদা জিয়ার মুক্তির ছাড়পত্র নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বিএসএমএমইউতে যায়। এসময়ই বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত গাড়ি, পরিবারের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। আর তখনই গাড়িকে ঘিরে ঢল নামে নেতাকর্মীদের। ভিড় কমানোর জন্য বিএনপি মহাসচিব হ্যান্ড মাইক নিয়ে নেতাকর্মীদের হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু ভিড় কমানোর বদলে উল্টো আরও নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তেই থাকে। একসময় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি হাসপাতাল চত্ত¡র ও গেইটের সামনের অংশ ছাড়িয়ে শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় পর্যন্ত চলে যায়।
বিকেল সোয়া ৪টায় বেগম জিয়া গোলাপি শাড়ি পড়ে, চোখে সানগ্লাস, মুখে মাস্ক পরে হুইল চেয়ারে করে কেবিন ব্লক থেকে বেরিয়ে আসেন। তাকে দেখেই নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। বেগম জিয়াও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। এরপর গাড়িতে উঠে গুলশানের বাসা ফিরোজার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
পায়ে হেঁটেই নেতাকর্মীরা গুলশানে: হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বেগম জিয়া গুলশানের বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থকের উপস্থিতির কারণে হাসপাতালের ভেতর থেকেই গাড়ি মূল সড়কে আসতে বেশ বেগ পেতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেগম জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তরক্ষীদের সহায়তায় ধীর গতিতে গাড়ি চলা শুরু করে। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িকে ঘিরে রাস্তাজুড়ে উচ্ছ¡সিত নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে গুলশানের পথে রওয়ানা হন। গাড়ির সামনে ছাত্রদল ও মহিলা দলের নারী নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে হাঁটতে থাকেন। গাড়ি ঘিরে হাঁটেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। দিতে থাকেন স্লোগান। এসময় রাস্তার মোড়ে মোড়ে উপস্থিত জনতা খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরকে লক্ষ্য করে হাত নাড়েন। প্রায় ১ ঘণ্টার ধীরগতিতে যাত্রা শেষে দীর্ঘদিন পর ফিরোজাতে পৌঁছান বেগম খালেদা জিয়া।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে কারাগারে নেয়া হয়। তাঁর জামিনের জন্য আইনজীবীরা গত দুই বছরে বহুবার আদালতে গেলেও জামিন মঞ্জুর হচ্ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে মার্চের শুরুতে তার সাময়িক মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। তার তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সরকার নির্বাহী আদেশে দন্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্ত হল- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। আইন মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে মঙ্গলবারই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। এরপর বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নথি যায় গণভবনে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজেও সকালে গণভবনে যান। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বুধবার নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসে। মন্ত্রণালয় তখন খালেদার মুক্তির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কারাগারে পাঠায়। এরপর খালেদা জিয়ার মুক্তির কাগজ নিয়ে একজন কারা কর্মকর্তা বিএসএমএমইউ’তে পৌঁছান।
খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী হন। শারীরিক নানা সমস্যার কারণে গতবছরের ১ এপ্রিল তাকে বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।