Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফের জঙ্গিবিরোধী অভিযান

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৪ পিএম, ১৩ জুলাই, ২০১৬

পুলিশি হয়রানির অভিযোগ : আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ : বিদেশীদের আতঙ্কও কাটেনি
বিশেষ সংবাদদাতা : সারা দেশে আবার শুরু হচ্ছে জঙ্গিবিরোধী যৌথ অভিযান। ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের কাছে হামলার ঘটনার পর জঙ্গিবিরোধী যৌথ অভিযানের চিন্তা-ভাবনা চলছে। জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের বসবাস ও কর্মস্থলে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। তারপরও বিদেশিদের আতঙ্ক কাটেনি। এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান শুরু না হলেও কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার ইন্ধনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ‘বিশেষ’ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযানের নামে ‘গ্রেফতার বাণিজ্য’ ও কথিত ক্রসফায়ারও থেমে নেই। নানা কারণেই অভিযান নিয়ে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। এর আগে গত ১০ জুন থেকে শুরু হওয়া জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে সারাদেশে ১৪ হাজারেরও বেশি গ্রেফতার হয়েছিল। পুলিশের হিসাবে সেখানে জঙ্গি ছিল মাত্র ১৯৪ জন। চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকা-ের সাথে জঙ্গি ‘জড়িত’ সন্দেহে এ অভিযান পরিচালিত হয়। যদিও পরে পুলিশই দাবি করেছে, এই ঘটনার সাথে এসপি বাবুলের কতিপয় সোর্স জড়িত। ইতোমধ্যে ওই হত্যাকা-ের সাথে জড়িত কমপক্ষে ৭ জন কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সরকারের শরীক দলগুলোও সে সময় অভিযানের নামে সরকারবিরোধীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সপ্তাহব্যাপী সাঁড়াশি সেই অভিযানের বিভীষিকা কাটতে না কাটতেই ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে হামলার ঘটনায় আবার নতুন করে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে সাধারণ মানুষের মনে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযানের নামে ১৩ হাজার নিরপরাধ মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের জন্য যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, কিছুদিন পরে তাদেরই খুন অথবা ক্রসফায়ারে মারা হচ্ছে। আর এ কারণেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের কাছে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর নতুন করে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কথা ভাবছে সরকার। পুলিশের ৭টি ইউনিটসহ বিজিবিকে নিয়ে যৌথ ইউনিট গঠন করে সারাদেশে জিরো টলারেন্সের ভিত্তিতে শিগগিরই এ অভিযান পরিচালিত হবে। সূত্র জানায়, জেএমবির আস্তানাকে টার্গেট করে যাতে অভিযান পরিচালনা করা যায় সেজন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি নেতাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। কারাগারে আটক জঙ্গি নেতাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য নেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা চূড়ান্ত, এখন শুধু নির্দেশের জন্য অপেক্ষা। গুলশানের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, জঙ্গি ইস্যুতে ঢাকাসহ সারাদেশেই পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তা জঙ্গি ইস্যুতে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার ও হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গভীর রাতে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জঙ্গি খোঁজা হচ্ছে। এ সময় কাউকে সন্দেহ হলে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাবনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী ঢাকাতেও জঙ্গিকে ইস্যু করে গভীর রাতে মানুষের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। গভীর রাতে পুলিশ দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে বা মানসম্মান বাঁচাতে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দিচ্ছেন পুলিশের হাতে। রাজধানীর শ্যামপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, পুলিশের হাতে এখন জঙ্গি প্রধান অস্ত্র। পর পর দুটি বিভীষিকাময় ঘটনার পর জঙ্গি নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। সেই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কাউকে ধরা হলে সমাজে তার মানসম্মান বলে কিছুই থাকবে না। এটাকে পুঁজি করে পুলিশ এখন জঙ্গি বলেই আটক করে। পরে থানায় নিয়ে টাকার দেন-দরবার করে। ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জে হামলার ঘটনার আগে পুলিশ সর্বনাশী মাদক ইয়াবাকে এই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। মিরপুর এলাকার বাসিন্দা বদরুল হাসান জানান, জঙ্গি ইস্যুতে যে কোনো মুহূর্তে আবার গ্রেফতার অভিযান শুরু হতে পারে, এই ভয়ে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। তিনি বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অভিযান মানেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে ধরবে পুলিশ। কদমতলী, ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই তিন থানার বহু নেতা-কর্মী এখন ঘরছাড়া। এদের অনেকের বিরুদ্ধে এর আগে গাড়ি পোড়ানো মামলাসহ একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির এক নেতা বলেন, জঙ্গি আছে এমন কথা বলে পুলিশ ইতোমধ্যে আমাদের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। কাউকে কাউকে ধরেও নিয়ে গেছে। রফা শেষে সকালে আবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া উইংয়ের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযান এখনও শুরু হয়নি। ঢাকায় পুলিশের নিয়মিত অভিযান সব সময়ই চলে। এর মধ্যে ওয়ারেন্টের আসামি ধরার অভিযানও আছে। তিনি বলেন, মাদকবিরোধী ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান সব সময়ই চলমান থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হবে, এমন ম্যাসেজ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে আছে। কবে তা শুরু হবে, ধরন কী রকম হবেÑসে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। অন্যদিকে, দেশে জঙ্গিদের অবস্থান ও কার্যক্রম তদারকি শুরু করে দিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই যৌথ অভিযান শুরু হবে বলে সূত্র আভাস দিয়েছে। সূত্র জানায়, জঙ্গিদের আত্মঘাতী প্রবণতাকে রোধ করার লক্ষ্যে নতুন করে কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসাবে জরুরি ভিত্তিতে এনেসথেশিয়া বোমা ও স্মোকিং বোমা আনা হচ্ছে। এসব বোমা কোনো স্থানে প্রয়োগ করলে দুই ঘণ্টার জন্য সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। তখন তাদেরকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে। একই সাথে মৃত্যুর ঝুঁকিও এড়ানো যাবে।
অপরদিকে, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে বহু বিদেশি কাজ করছে। তাদেরকে এক দিনের জন্যও কাজ থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে সেসব বিদেশিদের বাসস্থান ও কর্মস্থলে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপরেও বিদেশিদের আতঙ্ক কাটেনি। কয়েক বছর আগে নিরাপত্তাহীনতার কারণে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার প্লান্ট থেকে ৪০ জনেরও বেশি বিদেশি নাগরিক চলে গিয়েছিল।
রাজধানীতে ৩০ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিল, ওয়ারী, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। পুলিশ জানায়, গ্রেফতার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ হাজার ১৯টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫১০ গ্রাম গাঁজা, ১৮৩ গ্রাম (২০০ পুরিয়া) হেরোইন, ৪৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফের জঙ্গিবিরোধী অভিযান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ