পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পলাশ মাহমুদ : সরকারের একমাত্র পরিবহন সংস্থা ‘বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন’র (বিআরটিসি) দেড় হাজার বাসের এক-তৃতীয়াংশই বিকল হয়ে আছে। বিভিন্ন ডিপোতে পড়ে থাকা বিকল বাসের যন্ত্রাংশও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ৪ শতাধিক বাসের বেশিরভাগ মূল্যবান যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে চুরি হয়েছে। অচল প্রতিটি বাসের ৪ থেকে ১০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ এখন ‘চোর সিন্ডিকেটে’র পকেটে। এ হিসাবে ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকার মালামাল হারিয়েছে বিআরটিসি। চুরি যাওয়া মালামাল যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারী বাস কোম্পানির কারখানায়। সম্প্রতি ডিপোর নিরাপত্তা বাড়ালেও থেমে নেই যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রির কাজ। খোদ ডিপো ব্যবস্থাপকরাই ড্রাইভার-মিস্ত্রিদের নিয়ে চুরি সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আগে কি হতো বা হয়েছে সেটা আমি জানি আর আমি সেটার দায়ও নিতে পারি না। আমার দায়িত্ব নেয়ার পরে বেশ কিছু পদক্ষের নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ডিপোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে এবং ব্যক্তি বা মালামালের প্রবেশের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি খাতা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে ডিপোর চুরি বা অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের প্রবেশ রোধ হচ্ছে।
সূত্রমতে, বিআরটিসির বর্তমান বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৩টি। এর মধ্যে বিকল হয়ে পড়ে আছে ৪০৬টি। বিকল বাসের মধ্যে আবার ১৫০টি বাস মেরামত করারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১৪টি জোড়া বাস পড়ে আছে গাজীপুর ডিপোতে। অচল ২৫টি দ্বিতল বাসের মধ্যে ১০টি মানিকগঞ্জের উথলী ডিপোয়, ২টি গাজীপুরে, ৩টি করে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার জোয়ারসাহারায় এবং ১টি করে কল্যাণপুর, মিরপুর, পাবনা ও মাদারীপুর ডিপোয় পড়ে আছে। আর ৪৮টি বিকল ভলবো বাসের মধ্যে মিরপুর ডিপোয় ২৭টি ও কল্যাণপুর ডিপোয় পড়ে আছে ২১টি বাস।
নষ্ট বাসগুলোর মধ্যে রাজধানীর মিরপুর-১২, কল্যাণপুর, মতিঝিল ও জোয়ারসাহারা ডিপো, গাজীপুরের কারখানায় পড়ে আছে কমপক্ষে ২০০ বাস। রাজধানীর মিরপুর, জোয়ারশাহার, গাজীপুর, মতিঝিল ডিপোতে গেলে সেগুলো পরিত্যাক্ত বাসের ভাগাড়ই মনে হয়। বেশিরভাগ বাসই চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। বছরের পর বছর রোদ-বৃষ্টির ধকল যাচ্ছে এসবের উপর। অনেক বাস এখন লতাপাতা আর পাখির বাসা।
সরেজমিনে দেখা যায়, অচল বাসগুলো ডিপোতে পড়ে থাকার সুযোগে প্রতিনিয়তই মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। গত কয়েক দিনে জোয়ার শাহারা ও মিরপুর বাস ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, পড়ে থাকা বাসের বেশিরভাগই যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। এসব চুরি যাওয়া যন্ত্রাংশ হাত ঘুরে যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারী বাস কম্পানির কারখানায়। আবার নতুন কেনার নামে পুরানো যন্ত্রাংশ ঘুরিয়ে আনা হচ্ছে ডিপোতে।
তবে চোর সিন্ডিকেটের আগ্রহ মূল্যবান যন্ত্রাংশের দিকে। বিভিন্ন বাস থেকে চুরি যাওয়া মূল্যবান যন্ত্রাংশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গিয়ার বক্স। এক একটি গিয়ার বক্সের মূল্য বাস ভেদে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। অন্যান্য যন্ত্রাংশ হচ্ছে, ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের রেডিওয়াটার, ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের তেলের পাম্প, ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের সেল্ফ, ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ডায়নামো। প্রতিটি বাসে ২৪ ভোল্টের ২টি করে ব্যাটারী থাকে। যার প্রতিটির মূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পড়ে থাকা বাসের বেশিরভাগই ব্যাটারী নেই।
অন্যদিকে কম মূল্যের চুরি যাওয়া যন্ত্রাংশের মধ্যে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা মূল্যের এ্যাক্সেল, ৮শ’ থেকে ১২ টাকা মূল্যের নজেল (প্রতিটি গাড়িতে ৬টি করে) চুরি হয়েছে। এছাড়াও কিছু খুচরা মালামাল চুরি হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে গ্লাস, ফ্যান, লাইট ইত্যাদি। বিআরটিসির প্রতিটি দ্বিতল বাসে প্রায় ৪০টি ফ্যান থাকে। যার একটিও নেই।
সামনে পিছনের লাইটও দেখা যায়নি। অনেক বাসের পার্শ¦গ্লাসও নেই।
এর মধ্যে এসি বাস ও ভলবো বাসের যন্ত্রাংশের মূল্য অনেক বেশি। এসব যন্ত্রাংশের দাম হিসেবে করলে দেখা যায় প্রতিটি বাস থেকে ৪ থেকে ১০ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। ৪০০ বাস হিসেবে যার মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, বিআরটিসির বর্তমানে ১৯টি বাস ডিপো রয়েছে। প্রতিটি বাস ডিপোতে একজন করে ব্যবস্থাপক (ডিপো ম্যানেজার) রয়েছেন। সবগুলো ডিপোতেই নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু সব নিরাপত্তা টপকিয়ে নিয়মিতই যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসি এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ডিপোর ম্যানেজারদের নেতৃত্বে ড্রাইভার, হেলপার ও কেশিয়ারদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘চুরি সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেট আবার খুবই শক্তিশালী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক পরিচালক (প্রশাসন) সকল ডিপো ম্যানেজারদের থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করতেন। সেই সময় থেকে ডিপো ম্যানেজাররা ইচ্ছামতো ডিপো পরিচালনা করতে থাকে। তখনই এই চুরি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। যা এখন আর দমন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দায়িত্ব নেয়ার পরে ডিপোগুলোতে আগের চেয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডিপোগুলোতে আগে মালামাল ঢোকানো ও বের করার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার ছিল না। এখন সেটা হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমুল পরিবর্তন হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিআরটিসির সর্বশেষ ক্রয় করা ৫০টি ভলবো বাসের মধ্যে এখন ৪৮টিই বিকল। প্রতিটি বাসের ক্রয় মূল্য ছিল ১ কোটি ৩ লাখ টাকা। মেয়াদ শেষ না হলেও অযান্ত অবহেলায় প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে সেগুলো। ৫০টি আর্টিকুলেটেড (ডাবল বগি) বাসের মধ্যে ১৪টি নষ্ট। আরো ১৬টি প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। এ বাসগুলো কেনায় প্রতিটিতে ব্যয় করা হয়েছিল ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। অন্যদিকে ৮৮টি এসি বাসের মধ্যে ৮টি এখন পরিত্যক্ত। প্রতিটি এসি বাস কেনা হয়েছিল প্রায় ৭০ লাখ টাকায়। এছাড়াও দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ডিপোতে পড়ে থাকা অন্যান্য বাস মিলে মোট অচল বাসের সংখ্যা ৪০৬টি বলে বিআরটিসি সূত্র জানায়।
অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে বিআরটিসির পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একেবারেই মেরামতের অযোগ্য ও অর্থনৈতিকভাবে লাভের সম্ভাবনা নেই এমন বাস আছে ১৫০টি। তার মধ্যে ৩২টি একেবারে পুরনো। আর ১৯টি বাস দুর্ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ১৫০টি বাস আর কোনভাবেই চালানো সম্ভব নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পড়ে থাকা এসব বাস থেকে কি পরিমাণ যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে তার কোন তথ্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে কোন তথ্য নেই। বিআরটিসি শুধুমাত্র মেরামত করতে কি পরিমাণ টাকার দরকার সেই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। তবে বিভিন্ন সময়ে মেরামতের জন্য বিআরটিসির চাওয়া টাকার পরিমাণ আরও বেশি। বিকল আর্টিকুলেটেড বাস মেরামতের জন্য বিআরটিসির চাহিদা ২০ কোটি টাকা। তবে এ অর্থের কোন সংস্থান হয়নি। অন্যদিকে বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল এ আর পারভেজ মজুমদার বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর ত্রুটির কারণ অনুসন্ধান করি। দেখতে পাই, এগুলোর স্পেয়ার পার্টস নেই। মেরামত করার নামে ফেলে রাখায় অবস্থা খারাপ হয়েছে। এ বিষয়ে আমি গত জুনে প্রতিবেদন তৈরি করে শীর্ষ পর্যায়ে জমা দিয়েছি।’
ভলভো বাসের দুর্দশার বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছাগলই পালতে পারি না, তার ওপর হরিণ পালতে দেয়া হয়েছিল। এগুলোর স্পেয়ার পার্টস ছিল না। এগুলো আমরা ইজারা দিতে চাইছি। বারবার সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, সাড়া মেলেনি। ১০ বছর ধরে মেরামতের জন্য অর্থ চেয়েও মেলেনি। আমরা কী করব?’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।