পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গতকাল ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’ পালিত হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘বেটার অ্যাওয়্যারনেস, গ্রেটার আন্ডাস্ট্যান্ডিং, পিসফুল ওয়ার্ল্ড’। দিবসটিতে বিশ্বের দেশে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইসলাম ধর্মে সম্প্রীতি আরো বেগবান করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাজমা খান স্কুলে হিজাব পরে যাওয়ায় সহপাঠীদের কাছে নানাভাবে অপমানিত হন। তারই প্রতিবাদে তিনি মুসলমান নারীদের হিজাবের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বপ্রথম হিজাব দিবস পালনের পক্ষে প্রচারণা চালান। তারই ধারাবাহিকতায় পরে মুসলিম দেশগুলোতে এই দিবসটি পালনের প্রচলন শুরু হয়।
দিবসটি পালনে নিউইয়র্কের মূল অনুষ্ঠান হয়েছে সিটি হলের বারান্দায়। সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, আফগান, তুরস্ক, সউদি আরব, মিসর, কুয়েত, কাতার ও ইরানের নারীরা উপস্থিত হয়ে হিজাব দিবসের চেতনা ভিন্ন ধর্মের আমেরিকানদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল রাজধানী ঢাকার রাস্তায় তিন তরুণী হিজাব পরে সাইকেল চালিয়ে নারী সমাজের প্রতি বার্তা দেন যে, নারীরা হিজাব পরেও কাজ করতে পারেন। সাইক্লার্স অব বাংলাদেশ নামের সংগঠনটির তিনজন তরুণীর সঙ্গে কয়েকজন তরুণও হিজাব পরার সমর্থনে সাইকেল চালিয়েছেন ঢাকা শহরের কয়েকটি রাস্তায়। বিবিসিসহ কয়েকটি মিডিয়ায় খবরটি প্রচার করা হয়। এ প্রসঙ্গে লালবাগ সাইক্লিং ক্লাবের প্রধান সিফাত-ই-কানিজ বলেছেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হিজাব পরলে অনেক জায়গায় কাজ করা যায় না। আমি ঢাকার কয়েকটা টিভি চ্যানেলে কাজ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি হিজাব পরি বলে। তাই আমি সাইকেল চালিয়ে প্রমাণ করতে
চাই যে, হিজাব পরেও সব কাজ করা সম্ভব’। হিজাব প্রসঙ্গে নারী আন্দোলনের নেত্রী বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বিবিসিকে বলেন, ‘ফ্রিডম অব চয়েস সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পোশাক পরিধানে যে কারো স্বাধীনতা থাকতে পারে। তবে যে পোশাকেই নিজেকে ঢেকে রাখা হোক না কেন, মন যেন উন্মুক্ত থাকে। একসময় নারীদের অবরোধ করে রাখা এবং পর্দাপ্রথার মধ্যে রাখার বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে, নারী আন্দোলন হয়েছে। এখন একুশ শতকে এসে অনেকে মনে করছেন এটা আমাদের অধিকার। ফ্রিডম অব চয়েস সবার আছে। এখন নারীরা হিজাব পরে সাইকেল চালাতে পারছে এটা নারী আন্দোলনের ফল।’
নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের সমাজের কদর্য দিক। প্রগতিশীলতার নামে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ও বেলেল্লাপনার কারণে নারীদের প্রতি হিং¯্রতা বাড়ছে। পর্দানশীল জীবনযাপন ও হিজাব সে হিং¯্রতা থেকে নারীদের বাঁচাতে পারে। দামি-দৃষ্টিনন্দন পোশাক নয়; শালীন পোশাক পর্দা বা হিজাব নারীর সৌন্দর্য। নারীর হিজাব পরিধান ইসলাম ও মুসলমানদের সংস্কৃতি। সমাজে নারী-পুরুষের আচার-আচরণে শালীনতা বজায় রাখার জন্য পর্দার বিধান চালু করা হয়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধানে উদ্বুদ্ধ করতে ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’ পালন খুবই তৎপর্যপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে ইসলামী চিন্তাবিদরা নানাভাবে বয়ান করছেন। এমনকি সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিজাতীয় সংস্কৃতি ভালবাসা দিবস এদেশে চালু করা হচ্ছে। কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কিছু মিডিয়া নির্লজ্জের মতো সেসব প্রচার করে আমাদের মেয়েদের উসকে দিচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব হিজাব দিবস পালন তাদের কাছে নতুন বার্তাই দিচ্ছে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মেয়েরা হিজাব পরে কর্মস্থলে যাতায়াত করবে এবং নিজ নিজ কাজে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখবে সেটাই বাস্তবতা। উলঙ্গপনা নয়; হিজাবই নারীর অধিকার সংরক্ষণ করে। যারা প্রগতিশীলতার নামে বেলেল্লাপনা করেন বা অন্যকে সেটা করতে উদ্বুদ্ধ করেন তাদের যুগ শেষ হয়ে আসছে।
মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের সমাজে নারীর পর্দার বিধান কোনোক্রমেই তুচ্ছ করে দেখার বিষয় নয়। পর্দার বিধানে আল্লাহ মানবসভ্যতার জন্য কল্যাণ লুক্কায়িত রেখেছেন। ইসলামে পর্দার বিধানটি অন্যান্য কল্যাণের পাশাপাশি নারীর সম্মান ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষা করে। নারীদের পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ (সূরা আহজাব : ৫৩)। পর্দার বিধান নিয়ে আল্লাহ বলেন, হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিন নারীদের বলুন; তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা নূরে বলা হয়, (হে নবী!) মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আবরণ প্রদর্শন না করে (সূরা নূর : ৩১)।
জানা যায়, হিজাব দিবস পালনের আহ্বানকারী নাজমা খান নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যান। হিজাব পরায় তিনি পশ্চিমাদের বিষোদগারের শিকার হন। তিনি এর প্রতিবাদ করেন। এ জন্য দিবসটি পালনের জন্য নাজমা খান প্রথমে ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সব নারীর প্রতি আহ্বান জানান। দিবসটি পালন উপলক্ষে নাজমা খান জানান, তিনি যখন হিজাব মাথায় স্কুলে যেতেন, তখন তাকে অনেক সময় অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় তাকে ব্যাটম্যান এবং নিনজা বলে ডাকা হতো। তিনি বলেন, ৯/১১ টুইন টাওয়ারে হামলার পর আমাকে ডাকা হতো ওসামা বিন লাদেন এবং সন্ত্রাসী বলে। হিজাব পরা নারীদের অনেক সময় অনেক বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এই বৈষম্যের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে মুসলিম বোনদের পাশাপাশি অমুসলিম বোনদেরও অন্তত একদিনের জন্য হিজাব পরে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলার আহ্বান জানিয়েছি।
দেশে শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ সামাজিক অপরাধ বেড়ে গেছে। ৩-৪ বছর বয়সের মেয়ে শিশুরাও পাশবিকতার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে হিজাব। হিজাব মূলত নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং তাদের হিং¯্রতার হাত থেকেও রক্ষা করে। বর্তমান সমাজে যে অনাচার চলছে, সং¯ৃ‹তি ও নারী স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতার নৃত্য চলছে তা থেকে রক্ষা করতে পারে হিজাব। বিভিন্ন হাদিস দ্বারাও হিজাব বা পর্দার বিষয়টি প্রমাণিত। হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সবাই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম। ইবনে মাজাহ; হাদিস: ২৯৩৫।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।