পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকার তার অতীত অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে জানিয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই। তিনি মনে করছেন, ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জে হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের একটি সম্পৃক্ততা রয়েছে। অতীতে বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যাকে শুধুমাত্র দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফসল মনে করলেও বর্তমানে এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক যে একটি যোগসাজশ রয়েছে তা মেনে নিতে শুরু করেছে। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার এখন মনে করছে এসব হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, এটি একটি ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের হুমকি বৈশ্বিক, তাই বৈশ্বিকভাবেই এর মোকাবেলা করতে হবে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার বলেছে অভ্যন্তরীণভাবে এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় কী কী সামর্থ্য রয়েছে তা যাচাই করেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির, এটিএন বাংলার মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক অংশ নেন। সকাল সাড়ে ৮টার এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন সিনিয়র সাংবাদিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, মার্কিন দূতাবাসের ভাষায় এটি সম্পাদকদের সাথে নিশা দেশাইয়ের ব্রেকফাস্ট মিটিং। মিটিংটি অব দ্য রেকর্ড ছিল। সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুপুর ১২টায় ঢাকা ছাড়েন নিশা দেশাই বিসওয়াল।
দুই দিনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কলম্বো রওনা হওয়ার আগে এক টুইটার বার্তায় তিনি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তার আলোচনার বিষয়বস্তু জানান। তিনি টুইটারে লিখেছেন, সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো এবং এসব ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
ঢাকা সফরকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বিসওয়াল তার টুইটার বার্তায় লিখেছেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর শেষ করলাম। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়টি জানিয়েছি।
কূটনৈতিক সূত্রটি জানায়, এতে নিশা দেশাই তার চলতি সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, তিনি মনে করছেন জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকার তার অতীতের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে মেনে নিচ্ছে যে, এসব হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের একটি সম্পৃক্ততা রয়েছে। অতীতে বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যাকে শুধুমাত্র দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফসল মনে করলেও বর্তমানে এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক যে একটি যোগসাজশ রয়েছে তা মেনে নিতে শুরু করেছে সরকার।
সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তিনি মনে করেন, জঙ্গিবাদ, তা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন মোকাবেলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় কারিগরি ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণভিত্তিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে সাংবাদিকদের কাছেও জানিয়েছেন নিশা দেশাই।
সূত্রটি জানায়, বৈঠকে জঙ্গি হামলা কিংবা তৎপরতায় ক্রাইসিস পিরিয়ডে মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কেমন হওয়া উচিত, মিডিয়ার কেমন ভূমিকা পালন করা উচিত তা নিয়েও কথা হয়। মিডিয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নিয়মিত ব্রিফিং করার বিষয়টিও বৈঠকে উঠে আসে।
বৈঠকে সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট, দেশে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ রয়েছে। এ অবস্থার নিরসনে সরকারের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরই মত দেন তারা। সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তারা বলেন, এর বাইরে কৌশলগত কোনো সহায়তা কতটুকু ও কিভাবে নেয়া যায় তা সরকার নির্ধারণ করবে।
এদিকে, বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে এক টুইট বার্তায় এ সফরকে খুব গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করেছেন নিশা দেশাই। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ করবে বলেও টুইট বার্তায় জানান তিনি। আরেক টুইটে গুলশান হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে কারিগরি এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা জানান নিশা। ঐদিন সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এ কথা জানান। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, সন্ত্রাসের ভিকটিম আমি নিজেও।
গুলশান হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেখা গেছে এসব ঘটনায় বড়লোকের ছেলেরা জড়িত, এর শিকড় খুঁজে বের করতে হবে। কারা তাদের রিক্রুট করে, এর পেছনে কারা আছেÑ তাও খুঁজে বের করতে হবে।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে গুলশানে জঙ্গি হামলার পর নিশা দেশাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রস্তাব নিয়ে গত রোববার ঢাকা এসে পৌঁছান। এ সফরে প্রথম দিনে নিশা দেশাই সরকারি পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরই তিনি ম্যারাথন বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। এছাড়াও ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেন ও ভারতের হাইকমিশনারদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেছেন। আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে শ্রদ্ধা জানান। যাওয়ার আগে বৈঠক করলেন বাংলাদেশের কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে। তার এবারের সফরে সঙ্গী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানপ্রিত সিং আনান্দ।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই (শুক্রবার) রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেনা নেতৃত্বাধীন সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের জঙ্গিরা আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছিল। এ ২০ জনের মধ্যে ১৭ জন বিদেশী নাগরিক ও তিনজন বাংলাদেশী। উদ্ধার অভিযানে নিহত হয় ছয় দুষ্কৃতকারী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।