পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে জঙ্গিবাদে নিমজ্জিত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্দীপ্ত করতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে সক্রিয় ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি জঙ্গি কর্মকা- অব্যাহত থাকে তবে জাতিকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে। জঙ্গি কর্মকা- আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করবে এবং প্রতিদিনের জীবনযাত্রা হুমকির মধ্যে ফেলবে। তিনি আরো বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। এখানে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এই দুষ্টচক্রকে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মোকাবিলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ইসলামের বদনাম করছে, এমন অশুভ শক্তির চক্রান্ত প্রতিহত করতে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বীজ অঙ্কুরিত হতে দেবে না। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানদের বিষয়ে মা-বাবাকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, তার খোঁজখবর নেবেন। তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। জেলা প্রশাসকদেরও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখার নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা গতকাল গণভবন থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে তার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা ও ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৩২ জেলার সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে এ আহ্বান জানান। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন দেখে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছে। দেশের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করাও জঙ্গি হামলার একটা কারণ হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিককালের গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় এবং শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসলাম কখনও এ ধরনের বর্বর কর্মকা-কে সমর্থন করে না। ধর্মকে বিনষ্টের জন্য এটা তাদের ষড়যন্ত্র, কেননা ইসলাম সর্বদা শান্তি ও সৌহার্দ্যরে শিক্ষা দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। কোনো জঙ্গির স্থান, সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না। তাই কেউ বিপথে পাঠাতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে দেশ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবারও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের জনগণ ধর্মভীরু, তাই বলে তারা উগ্রবাদী নয়। সুতরাং একটি ইংরেজি মাধ্যমে পড়–য়া বালক কী করে এ ধরনের উগ্রবাদের পক্ষে পা বাড়ায়?
জঙ্গিবাদ দমনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক এলাকায় জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গড়ে তুলে আড়ালে-আবডালে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাবৃন্দ নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদ দমনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করায় তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দল-মত নির্বিশেষে সকলকে এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমাদের জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একজোট হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সকলকে সতর্ক করে দেন।
তিনি বলেন, যারা ইসলামের নাম করে মানুষ হত্যা করছে, তারা আমাদের পবিত্র ধর্মের বদনাম করছে দেশে-বিদেশে। আমাদের ধর্মে আছে, মানুষের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু তারা রমজানে তারাবি না পড়ে, ঈদের দিন ঈদের নামাজ না পড়ে মানুষ মারছে। ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করতে চাই, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ সবাই যেন নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করেন, সেই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারব। ইসলাম ধর্মকে যেন কেউ কলুষিত করতে না পারে, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
জঙ্গি দমনে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমি চাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা। সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের ফলেই এসব কাজ সম্ভব হচ্ছে। দেশবাসীও সমর্থন করছেন।
জঙ্গি হামলায় উচ্চশিক্ষিতদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে, সেই ছেলেমেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যায় পরিবার থেকে? অথচ প্রশ্ন আসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। এ নিয়ে রিপোর্ট দিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এখন দেখা যায় অনেকে স্বেচ্ছায় গুম হয়ে এখন তারা এ ধরনের কাজ করছে।
প্রত্যেক ইউনিয়ন ও থানায় জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকা- চালানো হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কমিটিগুলো কারও জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকলে তা খুঁজে বের করবে। কমিটির মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারব। ইসলাম ধর্মকে যেন কেউ কলুষিত করতে না পারে সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কেউ বিপথে পাঠাতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যাচ্ছে কিনা কেউ নিচ্ছে কিনাÑদু’টোই খুঁজে বের করতে হবে।
বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় উন্নত দেশ হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। এ লক্ষ্যে নানা প্রকল্প রয়েছে, সেখানে বিদেশিরা কাজ করেন। তাদের নিরাপত্তা জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকার মানুষ এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করবেন। আমরা পারব। এ বিশ্বাস আমার আছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিমুক্ত করতে পারব। সবাই একযোগে কাজ করলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।