পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকসাহিত্যিক, বিশিষ্ট কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ ড. আশরাফ সিদ্দিকী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল ভোর রাতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। কবির কফিন আত্মীয় ও গুণগ্রাহীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত তার ধানমন্ডীর বাসভবনে রাখা হয়। দুপুরে আশরাফ সিদ্দিকীর কফিনে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোবারক হোসেন, কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও পিয়াস মজিদ। এরপর বাদ জোহর ধানমন্ডি শাহী ইদগাহ মসজিদে তার জানাজা পর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আশরাফ সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ড. আশরাফ সিদ্দিকী ১৯২৭ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার নাগবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা করেন শান্তিনিকেতন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাঈদা সিদ্দিকীকে বিবাহ করেন। সাঈদা সিদ্দিকী ছিলেন আজিমপুর গালর্স হাই স্কুলের শিক্ষিকা। তাদের চার ছেলে ও এক মেয়ে সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং নিজ নিজ পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত। তার পুত্র সাঈদ সিদ্দিকী ক্যাটস আই-এর চেয়ারম্যান, নাহিদ আলম সিদ্দিকী›স ইন্টারন্যাশনাল-এর অধ্যক্ষ, কন্যা তাসনিম সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পুত্র রিফাত আহম্মেদ সিদ্দিকী›স ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসন, ও রিয়াদ সিদ্দিকী ক্যাটস্ আই-এর পরিচালক।
১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে ড. আশরাফ সিদ্দিকী কর্মজীবন শুরু করেন। এর ১৯৭৬ থেকে ছয় বছর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট, নজরুল একাডেমির আজীবন সভাপতি ছিলেন। নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন ড. আশরাফ সিদ্দিকী।
১৯৪৮ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ‘তালেব মাস্টার’ কবিতা রচনা করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে গণমানুষের কবি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘গলির ধারের ছেলেটি’ তার লেখা বিখ্যাত ছোট গল্পের একটি। এ গল্পটি তাকে ছোটগল্প লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ‘গলির ধারের ছেলেটি’ এ গল্প অবলম্বনে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় নির্মিত ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
বাংলার মৌখিক লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করার জন্য ড. আশরাফ সিদ্দিকী বিশেষভাবে সমাদৃত। তার লেখা বইগুলো- ‘লোকসাহিত্য’, ‘বেঙ্গলি ফোকলোর’, ‘আওয়ার ফোকলোর আওয়ার হেরিটেজ’, ‘ফোকলোরিক বাংলাদেশ’ এবং ‘কিংবদন্তীর বাংলা’ দক্ষিণ এশিয়ার লোকসাহিত্যে গবেষণায় মৌলিক বই হিসেবে বিবেচিত হয়। ‘ভোম্বল দাশ: দ্যা আঙ্কল অব লায়ন’ এবং ‘টুনটুনি অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ ইত্যাদি গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলার লোকজ গল্পকে বিশ্বসাহিত্যের ভান্ডারে পৌঁছে দেন। ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত ম্যাকমিলান পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত তার ‘ভোম্বল দাশ’ বইটি ছিল সে বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত শিশুদের বইয়ের তালিকায়। পরে এ বইটি ১১টি ভাষায় অনুবাদিত হয়। তার সত্তর দশকে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’ ও ‘প্যারিস সুন্দরী’ আজও তরুণ পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়।
ড. আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদকসহ ৩৬টি পুুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার মধ্যে ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে একুশে পদক, ১৯৬৪ সালে শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে সাহিত্যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, লোকসাহিত্য গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরস্কার অন্যতম।
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যেসব সাহিত্যিক আশরাফ সিদ্দিকী তাদের অন্যতম একজন। চল্লিশের দশকের শুরুতে প্রতিশ্রুতিময় কবি হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ। তার সাহিত্যিক জীবনে তিনি রচনা করেছেন পাঁচ শতাধিক কবিতা। বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে করেছেন গভীর গবেষণা। একাধারে তিনি প্রবন্ধকার, লোকসাহিত্যিক, ছোটগল্প লেখক এবং শিশু সাহিত্যিক। তিনি রচনা করেছেন ৭৫টি গ্রন্থ এবং অসংখ্য প্রবন্ধ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।