Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা প্রতিরোধে সতর্ক প্রশাসন

আক্রান্তদের জন্য হবে আলাদা হাসপাতাল সতর্কতা কর্মসূচি ও মাইকিং অব্যাহত

শামসুল হক শারেক, উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

সরকার ১৭ মার্চ থেকে দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস সতর্কতা জারির পরে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফে করোনাভাইরাস সংক্রমন নিয়ে আশঙ্কা সবচাইতে বেশি থাকলেও প্রশাসন এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত ৫ সহস্রাধিক বিদেশী নাগরিক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। এই বিদেশিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে স্থানীয় সচেতন নাগরিক। তাই সেখানে করোনা সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে বেশি।

গতকাল উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক আতঙ্ক রয়েছে। তবে সরকারের আশ^স্ততায় তারা আশ^স্ত হলেও এ বিশাল জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হয়ে পড়লে তাদের রক্ষার ব্যাপারে প্রস্তুতি নগণ্যই মনে হয়েছে।

সরেজমিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে কথা হয় কয়েকজন রোহিঙ্গা আলেম, শ্রমিকের সাথে। তারা বলেন, করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা মসজিদে আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন। তারা আরো জানান, বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতি যে সহযোগিতা দেখিয়েছে এতে তারা গভীর কতৃজ্ঞ। তবে মহামারি আকারে করোনা ছড়িয়ে পড়লে রক্ষা পাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে বলে তারা মনে করেন না।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সতর্কতা বিষয়ে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার মর্জু বলেন, এটি আল্লাহর গজব হলেও এ ব্যাপারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বেশি। তিনি করোনা সতর্কতার ব্যাপারে কোন ধরনের গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংবাদকর্মীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। ওসি বলেন, সরকারের ঘোষিত সতর্কতা কর্মসূচীর সাথে আল্লাহর ওপর ভরসাই হবে করোনা থেকে বাঁচার সবচাইতে বড় উপায়।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, করোনা সর্তকতায় সরকারের ঘোষিত কর্মসূচীর সাথে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সতর্কতা নিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা গুলোর সাথে কথা বলে প্রয়োজনে করোনা আক্রান্তদের জন্য আলাদা হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেকোন ধরনের সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং গোটা উখিয়া উপজেলায় মাইকযোগে করোনা সতর্কতা কর্মসূচী প্রচার করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, সহকারি আরআরআরসি শামশুদ্দোহা নয়ন বলেন, উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বড় ধরনের যে কোন সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এনজিও সংস্থাগুলোর হাসপাতালগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়াও যেসব বিদেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমূহে কাজ করে থাকেন, তাদের ছড়া নতুন কোন বিদেশী কক্সবাজার এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে গত ১৮ মার্চ থেকে কক্সবাজারের সকল হোটেল মোটেল বন্ধ ঘোষণা করে সমুদ্র সৈকতে পর্যটক আগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতের কিটকট ছাতাগুলো উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারে পর্যটক ঠেকানোর জন্য কক্সবাজার থেকে ৭৫ কিলোমিটার আগে চকরিয়ায় পুলিশের চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে এবং সৈকতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২১ এ ৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হলেও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে যেকোন ধরনের গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহবান জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা-ক্যাম্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ