Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : পবিত্র ঈদুল ফিতরের আমেজ শেষ হতে না হতেই দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। রোজার ঈদের ২ মাস ১০ দিনের মাথায় কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে কোরবানির ঈদের আর বেশি দিন সময় বাকি নেই। কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে পশু বেচা-কেনার যেহেতু একটি বড় বিষয় থাকে, সেহেতু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে সে কার্যক্রম।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন থেকে খবর নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে রাজধানীর সম্ভাব্য অস্থায়ী হাটগুলো ইজারা দেয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে টেন্ডার ড্র করা সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ঘুরেফিরে একই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কোরবানির পশুর হাটের ইজারা পাচ্ছেন। এতে দুই সিটি কর্পোরেশন প্রায় শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চিহ্নিত সিন্ডিকেট চক্রের আপস মীমাংসার মাধ্যমে কম মূল্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ভাগভাটয়ারা করে ইজারা দেয়া নেয়া হয়ে আসছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাসহ বড় কর্মকর্তারা ডেকে এনে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের কোরবানির পশুর হাটগুলো নামমাত্র মূল্যে ইজারা দিতেন অভিযোগ ছিল, যাতে তারা সরকারের কাছে নিজেদেরকে আস্থাভাজন কর্তকর্তা বলে পরিচয় দিতে পারেন। যদিও এ বছর দুই সিটি কর্পোরেশনেরই দুজন প্রধান নির্বাহী কর্তকর্তা নতুন এসেছেন।
এছাড়া এ সময় ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি’র সম্পত্তি বিভাগের সামনে এবং আঞ্চলিক অফিসে প্রতিদিন ‘মহড়া’ দেন ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তাদের ক্যাডার বাহিনী। এতে সকল ইজারা প্রার্থীর পক্ষে নির্বিঘেœ দরপত্র জমা দেয়া সম্ভব হয় না। এ নিয়ে প্রতি বছরই গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সিন্ডিকেটের বাইরে কারও পক্ষে সিডিউল সংগ্রহ ও জমা দেয়া সম্ভব হয় না। ডিএসসিসি’র ও ডিএনসিসি’র অস্থায়ী গরুর হাটগুলোর ইজারা ক্ষমতাসীনদের আয়ত্তে রাখতে সব সময়ই নেয়া হয় নানা কৌশল। এর মধ্যে একই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে-বেনামে নাম মাত্র মূল্য দিয়ে দরপত্র জমা দিয়ে থাকেন। যে কারণে নিজেদের কাক্সিক্ষত দামে ইজারা পেতে সহজ হয়ে যায়। এতে প্রতি বছর সিটি কর্পোরেশন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারয়।
অনুন্ধানে দেখা গেছে, গত বছর সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীনদের সিন্ডিকেটের কারণে রাজধানী ঢাকার অস্থায়ী ১৫টি কোরবানি পশুর হাট থেকে শত কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন। হাটগুলো থেকে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা হাসিল উত্তোলন করেছে ইজারাদাররা। অথচ হাটগুলোর ইজারা থেকে ডিসিসি পেয়েছে মাত্র সাড়ে ৯ কোটি টাকা। সিটি কর্পোরেশন চাইলে হাটগুলো থেকে আরো অন্তত ৬ থেকে ৭ গুণ রাজস্ব আয় করতে পারত।
সূত্র জানায়, এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন অস্থায়ী ১০টি কোরবানির পশুর হাটের ইজারা দেয়া হয়। হাটগুলোতে প্রায় ২ লাখ গরু বিক্রি হয়েছে। সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালিদ আহম্মেদ ও দক্ষিণ সিটির সে সময়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন এমন তথ্য জানিয়েছেন।
যদিও সংস্থাটির পক্ষ থেকে ইজারাদারদের কাছে বিক্রিত পশুর সংখ্যা জানতে চাইলে ইজারাদারা জানিয়েছে ১০টি হাটে এ বছর ৮৮ হাজার ৯০৭ গরু ও ৬ হাজার ৮৭৩টি ছাগল বিক্রি হয়েছে। তবে এমন তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছে ডিএসসিসি। একই সঙ্গে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক থেকে জানা যায়, উত্তর সিটির আওতায় ওই বছর প্রায় ৩ লক্ষাধিক কোরবানি পশু জবাই হয়। বিক্রি হয় আরো বেশি। ফলে প্রাথমিক হিবেস মতে দুই সিটি কর্পোরেশনের হাটে পশু বিক্রি হয় প্রায় ৫ লাখ। প্রতিটি পশুর গড় মূল্য ৪০ হাজার টাকা করে ধরা হলে এর মূল্য দাঁড়ায় দুই হাজার কোটি টাকা।
সিটি কর্পোরেশনের আইন অনুযায়ী পশুর বিক্রয় মূলের ৫ শতাংশ হাসিল হিসেবে আদায় করার নিয়ম রয়েছে ইজারাদারদের। এ হিসেবে ৫ লাখ গরুর গড় মূল্য দুই হাজার কোটি টাকা থেকে ইজারাদারদের আয় হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
হিসাব মতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই লাখ কোরবানি পশুর বিক্রিত মূল ৮০০ কোটি টাকা থেকে ইজারাদাররা আয় করেছেন ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু ডিএসসিসিকে দিয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৯৯৯ টাকা। অপরদিকে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তিন লাখ কোরবানি পশুর বিক্রিত মূল্য ১২০০ কোটি টাকা থেকে ইজারাদাররা আয় করেছেন ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু ইজাদারাদারদের থেকে সংস্থাটি রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৫ কোটি ৮ লাখ ১৭ হাজার ৫৭২ টাকা। এ হিসাবে সংস্থা দু’টি থেকে ইজারাদাররা হাসিল আদায় করেছে ১০০ কোটি টাকা। দুই সিটি কর্পোরেশনকে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭১ টাকা রাজস্ব দিয়ে ইজারাদাররা আয় করেছে ৯০ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৪২৯ টাকা।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদ বলেন, আসলে ইজারাদাররা যে তথ্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। তারা আমাদের কাছে প্রকৃত তথ্য গোপন করেছে। আমরা ধারণা করছি, গত বছর ডিএসসিসির আওতায় সর্বমোট দুই লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। তবে কোরবানির হটে পশু বেচাবিক্রি হয়েছে তারছেয়েও বেশি। এ হিসাব অনুযায়ী উপরোক্ত আয় হওয়াটা সঠিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিএসসিসির অস্থায়ী ১০টি পশুর হাট হচ্ছে, মেরাদিয়া বাজার, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, লালবাগের মরহুম হাজি দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ ও সংলগ্ন এলাকা, উত্তর শাজাহানপুর রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ঝিকাতলা-হাজারীবাগ হাট, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা এবং কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে বুড়িগঙ্গা বাঁধসংলগ্ন জায়গা।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫টি পশুর হাট হচ্ছে- খিলখেত বনরূপা হাট, মিরপুর সেকশন-৬ ওয়ার্ড-৬ ইস্টার্ন হাউজিংযের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নং সেক্টর সেক্টরের হাট, কুড়িল অস্থায়ী কোরবানির হাট, রায়ের বাজার অস্থায়ী কোরবানির হাট।
এছাড়াও জেলা প্রশাসকের অনুমতি ক্রমে ও বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিজস্ব উদ্যোগে ঢাকা শহর ও এর আশেপাশে আরও ৮-১০টি বড় বড় অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়, যা থেকে সরকারি রাজস্বকোষে কোন অর্থ যায়নি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ