পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের ডিসি মোছা. সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তাকে প্রত্যাহারসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হতে পারে। শুধু ডিসি নয়, এই ঘটনার সঙ্গে অন্য যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিল, নিজ নিজ ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনমনে শনিবার থেকে যত প্রশ্ন উঠেছে, সব প্রশ্নের সত্যতা তদন্তে পাওয়া গেছে। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এক-দুজন কর্মকর্তার দায় সরকার বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নেবে না। তিনি বলেন,‘আমরা তদন্ত করেছি, তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা অনেকগুলো অনিয়ম দেখেছি। সেই অনিয়ম অনুযায়ী এরইমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
ফরহাদ হোসেন বলেন, তাৎক্ষণিক আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যে নিয়ম-কানুন আছে সে অনুযায়ী যে কাজগুলো হয়নি এবং যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলোর সত্যতা পেয়েছি। বিধায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। প্রত্যেকে কী রোল প্লে করেছেন, সে রোলটি যদি আইন বহির্ভুত হয়, তাহলে অবশ্যই দোষী সাব্যস্ত হবে এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
বিভাগীয় কমিশনারের খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাক্ষরযুক্ত প্রতিবেদন কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়ে যাবো। খসড়াতে যা দেখেছি সেটাই চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন হবে। যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর, তাই আদেশে তার স্বাক্ষর লাগবে। ফলে দোষীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি এখনই বলা ঠিক হবে না। কী ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইন না মেনে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, প্রশাসন সম্পর্কে জনগণকে ভীতির জায়গায় নিয়ে যাওয়া। অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি করায় জনমনে বিরূপ ধারণা জন্ম দিয়েছে।
আরিফুল অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি। তাকে গত শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। রাতের বেলা এভাবে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। সাংবাদিক আরিফুলকে গতকাল জামিন দিয়েছেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা। তবে এই জামিন চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি বা তিনি কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দেননি বলে নিশ্চিত করেছেন আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন,এ ঘটনায় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তদন্ত করেন। ইতিমধ্যে তদন্তের খসড়া প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, এই ঘটনায় বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে। এ জন্য এখন তার (ডিসি) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুড়িগ্রামের ডিসিকে প্রত্যাহারে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কুড়িগ্রামের ডিসির বিরুদ্ধে কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথমত তাকে প্রত্যাহার করা হবে। দ্বিতীয়ত, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে এবং সে অনুযায়ী বিচার হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জনমুখী জনপ্রশাসন গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, আমাদের এটি রূপকল্পে আছে। প্রধানমন্ত্রী গত ১৭ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন, তিনি সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স এবং জনমুখী জনপ্রশাসন গড়ার ক্ষেত্রে যে কোনো অন্তরায় থাকলে সেটা দূর করা এবং সে ক্ষেত্রে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ সাজা হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা নিয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত অনেক জরুরি। রমজান মাসে এ আদালত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, উনার (ডিসি) কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা মাথায় রেখেছি। আমরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি- জনগণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত অত্যন্ত প্রয়োজন। সেখানে যেন কোনো বিকর্ত সৃষ্টি না হয়। তার ভুলের কারণে কোনো কিছু হলে তাকেই শাস্তি পেতে হবে।
কুড়িগ্রামের ডিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগের বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, পাঁচ-ছয় হাজার কর্মকর্তা। এর মধ্যে দুই একজন খারাপ হতে পারে। যখন আমরা নিয়োগ দেই তখন তো দু’একটি ভুল হতেই পারে। একজন কর্মকর্তার অতীত কর্মকান্ড বিচার বিশ্লেষণ করে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন এসব বিষয় আসেনি। দু’একজন কর্মকর্তার অনিয়মের দায়ভার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কখনোই গ্রহণ করে না। ডিসি নিয়োগের জন্য আগে শুধু কিছু সংস্থা থেকে প্রতিবেদন নেওয়া হতো, এখন জেলা প্রশাসক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ছাড়াও স্বাধীনতার পক্ষের লোকের কাছেও আমরা খোঁজখবর নিই।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান,
আমি আঁকুতি মিনতি করি। আল্লাহর কসম দেই। সন্তানের কসম দেই। প্রাণভিক্ষা চাই তাদের কাছে। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। তারা আমাকে বারবার কলেমা পড়তে বলছিলেন। এসময় আরডিসি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।’ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টার করা হবে বলে জানানো হলে এমন আকূতির কথা জানিয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফুল। পরে তাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতনসহ তার ভিডিও ধারণ করা হয়। আরিফুল ইসলাম আরও জানান, চোখ বাঁধা অবস্থায় তার কাছ থেকে জোর করে ৪টি কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে তাড়াহুড়ো করে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার আঘাতের চিহ্ন আমার শরীরে আছে।
জামিনের আবেদন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তা আমার অসম্মতিতে হয়েছে। আমাকে ফোর্স করে করানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বেডে থাকা অবস্থায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান আরিফুল ইসলাম রিগান। বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রেদওয়ান ফেরদৌস সজিব জানান, আরিফুল ইসলাম রিগান বর্তমানে ভাল আছে। তাঁর শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এসব রিপোর্ট হাতে আসলে প্রকৃত অবস্থা জানাযাবে।
এদিকে রোববার সকালে রিগানের জামিন নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। কিভাবে তার জামিন হলো এনিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানান পরিবারের সদস্যরা। জামিনের কথা শুনে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে পূর্ব নির্ধারিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি ফেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ছুটে যান সাংবাদিকরা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন সকাল সাড়ে ১০টায় সাংবাদিক আরিফুলের জামিন হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।