পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মহসিন রাজু/টিএম কামাল ঃ বেকারত্বের অভিশাপ, মাদকাসক্তির ছোবল, চোরাচালান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য সর্বোপরি অব্যাহত সরকারি অবহেলায় হাজারো বঞ্চনার শিকার রাজশাহী, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষ। একের পর এক আবেদন-নিবেদন, আন্দোলন-সংগ্রাম, বছরের পর বছর ধরে তদবির কোনো কাজেই আসেনি। ফলে উত্তরাঞ্চল আজও চিহ্নিত হয়ে আছে অবহেলিত এলাকা হিসেবে। অথচ চার যুগে প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি ছিল এ অঞ্চলকে এগিয়ে নেয়ার একমাত্র চাবিকাঠি। রাজশাহী ও রংপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চলকে বলা হয় ঐতিহ্যবাহী এলাকা। মূলত কৃষি ফসল আর ব্যবসা ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে এ অঞ্চলের পরিচিতিটা বেশি। কিন্তু তুলনামূলক উন্নয়ন হয়েছে কম। বিশেষ করে পাকিস্তান হওয়ার পর ভৌগোলিক কারণে এ অঞ্চল পড়ে যায় দেশের এক প্রান্তে। আর ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পুরো এলাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়তে থাকে। এখানকার ব্যবসায়ীরা রাজশাহী ও রংপুরসহ অনুন্নত উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার জন্য আলাদা শিল্প, জ্বালানি ও ব্যাংকিং নীতির দাবি করে এলেও তাতে কর্ণপাত করেনি কোনো সরকার। অথচ এ অঞ্চলের জন্য পৃথক নীতি না করলে এখানে কোনো দিনও শিল্প-কলকারখানার প্রসার ঘটবে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হচ্ছে না। কৃষিপ্রধান রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক ইপিজেড গড়ে তোলার দাবিও অনেক পুরনো। সরকারি ও বিদেশি এক্সপার্টরা বারবার এলাকা পরিদর্শন করে গেলেও শ্রেফ সরকারি সদিচ্ছার অভাবে তা হয়ে উঠছে না। সোনামসজিদ কাস্টমস করিডোর, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধাসহ অন্যান্য স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গে উন্নীত করার দাবিটি এখনে তেমনভাবে আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নেই।
পুরো উত্তরাঞ্চলে আত্মকর্মসংস্থানের সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। সর্বস্তরের মানুষের অভিযোগ, এ অঞ্চলের ছেলেদের চাকরি দেয়া হয় না। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিম রেল, পোস্টাল কমপ্লেক্স, সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কাজীপুর সরকারি মনসুর আলী কলেজ, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতাল, রাজশাহী জুট মিলস, রাজশাহী সুগার মিলসের মতো অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু সেখানে খোঁজ করলে দেখা যায় অধিকাংশ এই অঞ্চলের বাইরের। মহানগরীর ফুদকিপাড়ার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলমগীর বললেন, অশিক্ষিত বেকাররা তবু এখানে-সেখানে যা পায় করে, অনাহারে-অর্ধাহারে হলেও দিনাতিপাত করতে পারে। শিক্ষিত বেকাররা তাও পারে না। তারা মোড়ে মোড়ে আড্ডা দেয়, কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, কেউ রাজনৈতিক টাউট-বাটপার হয়, আর কেউবা জড়িয়ে পড়ে চোরাচালানের সঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে, হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের সঙ্গে। এদের বেশিরভাগই শ্রমিক-মজুর শ্রেণির। এই অঞ্চলের ১৬টি জেলার মধ্যে ১২টি জেলাই রয়েছে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা ঘেঁষে। এ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজটা খারাপ। কিন্তু কী করব। তিনি জানালেন, বিডিআর-পুলিশকে নিয়মিত বখরা দিয়েই চোরাচালান করতে হয়। তবু মাঝে-মধ্যেই গোলমাল হয়। চোরাচালান ও মাদক ব্যবসা এ অঞ্চলের সামাজিক ও নৈতিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে, বললেন এক শিক্ষক। এ অঞ্চলের বৈধ ব্যবসার বিকাশের পথেও একটা বড় বাধা হয়ে আছে এই চোরাচালান। অন্যদিকে এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে উত্তরাঞ্চলের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিদিন বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।