Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে

সহযোগিতা চাওয়ার ক্ষেত্রগুলো পরে জানানো হবে : আসাদুজ্জামান খান কামাল

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৮ পিএম, ১১ জুলাই, ২০১৬

বাংলাদেশকে নিশা দেশাইর আশ্বাস
কূটনৈতিক প্রতিবেদক : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সফররত নিশা দেশাই বিসওয়াল। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোন কোন বিষয়ে সহযোগিতা লাগবে, এটা পরে জানানো হবে। দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে ব্যস্ততম সময় পার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। আর এরই মধ্যে তিনি গতকাল বিকেলে গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। এছাড়া বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সাথে। ঘুরে দেখেছেন জঙ্গি হামলার ঘটনাস্থল গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁ। গতকাল সকালে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সফরের প্রথম দিন গত রোববার তিনি বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সাথেও মিলিত হন। এসব বৈঠকে মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনপ্রীত সিং আনন্দ এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটও উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে গুলশানকা-ের তদন্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যুক্ত হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বাংলাদেশ সফর শেষে নিশা শ্রীলঙ্কা যাবেন বলে জানা গেছে।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিশা বিসওয়ালের সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসের ভিকটিম আমি নিজেও।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেখা গেছে, এসব ঘটনায় বড়লোকের ছেলেরা জড়িত। এর শিকড় খুঁজে বের করতে হবে। কারা তাদের রিক্রুট করে, এর পেছনে কারা আছেÑতাও খুঁজে বের করতে হবে। গুলশান হামলায় জড়িতের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেখা যায়, অনেকে সেল্ফ মিসিং হয়ে যায়। তখন মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঢালাওভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দায়ী করে। সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা সচেতন, সন্ত্রাস দমনে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাস একটা চ্যালেঞ্জ। এর বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে কারিগরি ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহযোগিতা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানান তিনি। নিশা বলেন, যারা এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটায় তারা তা রিলিজিয়াস স্পিরিট থেকে করে না। অ্যাডভেঞ্চার থেকে এসব করে।
এদিকে বিকেলে সচিবালয়ে নিশার সাথে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা যে ধরনের সহযোগিতা চাইব সব ধরনের সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র রাজি রয়েছে। এখন আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব আমাদের কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী ধরনের সহযোগিতা চাইবে বা ঘটনার তদন্তে এফবিআই আসবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা অ্যাসেসমেন্ট করছি, কী কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে। তার ওপর ভিত্তি করেই জানানো হতে পারে।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিস কক্ষে প্রথমে বেলা ৩টায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। তারপর মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ বৈঠক। এতে উপস্থিত ছিলেনÑস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহেমদ, কাউন্টার টেররিজমের বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুুম বার্নিকাট।
পরে মার্কিন দূতাবাস থেকে নিশা দেশাই বিসওয়ালের বক্তব্য সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়। এতে নিশা বলেন, চরমপন্থা একটি বৈশ্বিক হুমকি। আমরা আজকাল খুব বেশি দেখতে পাচ্ছি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যে কোনো জায়গা থেকে তাদের অনুসারীদের নিয়োগ দিতে পারে এবং যে কোনো জায়গা থেকে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে।
নিশা দেশাই বলেন, আমি এখানে এসেছি সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রস্তাব নিয়ে। গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা ও সকলের মিলেমিশে চলার সম্মিলিত মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে আমাদের যে দীর্ঘ গভীর অংশীদারিত্ব রয়েছে, এই প্রস্তাব তার ধারাবাহিকতার অংশ। বাংলাদেশের সঙ্গে এই ব্যাপকভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, আমাদের এই অংশীদারিত্বে যে কোনো দেশ অংশ নিয়ে সন্ত্রাস মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সমর্থন, সহযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতি সব সময়ের মতোই অটুট থাকবে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন বাজয় রাখতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এরপর বিকেল ৫টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। এর আগে সকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুুম বার্নিকাটের গুলশানে বাসভবনে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন নিশা দেশাই। বৈঠকে মার্শা বার্নিকাট এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনপ্রীত আনন্দও উপস্থিত ছিলেন। এরপর বেলা ১১টা ৩ মিনিটে তিনি গুলশান হলি আর্টিজান হোটেলে যান এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানান। বেলা পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সঙ্গে বৈঠক করেন নিশা দেশাই। বৈঠকে মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনপ্রীত সিং আনন্দ, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মার্ক ক্লেটন, গুলশান হামলার পর যৌথবাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর অপারেশনাল হেড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাব্বির ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। এরপর বেলা দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে এবং তারপর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য আসেন নিসা।  
উল্লেখ্য, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ১ জুলাইয়ের জঙ্গি হামলা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য দু’দিনের সফরে নিশা দেশাই গত রোববার সকালে ঢাকায় আসেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন নিশা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় এ বৈঠক হয় বলে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়। প্রায় এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নানা দিক নিয়ে তারা আলোচনা করেন বলে ওই সূত্র জানায়।
এর আগে গত মে মাসে সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান খুন হওয়ার পরও ঢাকায় এসে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন বিসওয়াল। সে সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিসওয়ালের দক্ষিণ এশিয়া দেখভালের দায়িত্ব থাকায় তিনি শ্রিংলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থাবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও বাংলাদেশ ‘একই অবস্থানে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ বিদেশিসহ অন্তত ২২ জন নিহত হন। এরপর এক সপ্তাহ না হতেই গত বৃহস্পতিবার শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আগে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা ও গোলাগুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। গুলশানে নিহতদের মধ্যে নয় ইতালীয়, সাত জাপানির পাশাপাশি ভারতের এক নাগরিক ছিলেন। ওই নিহত এক বাংলাদেশির যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ