Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীর্ষে ওঠার ছক কষে বাজিমাত

মোহাম্মদ বিন সালমান ২

নিউইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

সউদী নেতারা তাদের রাজ্যের বিতর্কিত বিষয়গুলোর কুখ্যাতি সম্পর্কে ওয়কিবহাল ছিলেন। তাদের দেশ সম্পর্কে অতিথিদের নেতিবাচক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে সম্মেলনটিকে সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করে সাজানো হয়েছিল। অতিথিরা যুবরাজ এবং কর্মকর্তাদের সুইমিং পুল, আর্ট গ্যালারী এবং লুকানো অ্যালকোহল ক্যাবিনেট সম্বলিত বিলাসবহুল বাড়ীতে গ্রিলড ভেড়া এবং চকোলেট ট্রাফল দিয়ে প্রাইভেট ডিনার সেরেছিলেন। সেসময় সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলাদের উপস্থিতি ছিল। তারা চুল ঢাকার কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই রিৎজ-কার্লটনের কফিশপে পুরুষদের সাথে নির্দ্বিধায় মিশে গিয়েছিলেন যা দেশের অন্য কোথাও অনুমোদিত ছিল না।

জাঁকালো উপস্থাপনা বিনিয়োগকারীদের বিশাল উদ্যোগ নিতে আকৃষ্ট করেছিল। সউদী আরব বিশ্বজনীন শিপিং এবং ট্রান্সপোটের্র কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল। সেইসাথে ছিল ২ কোটি ২০ লাখ নাগরিকের বিনোদনের জন্য বিনোদন পার্ক, সিনেমা ও কনসার্ট ভেন্যুর সম্প্রসারণ যা ধর্মীয় কারণে দীর্ঘকাল ধরে নিষিদ্ধ ছিল। পাশাপাশি ছিল দীর্ঘ-অবহেলিত ঐতিহাসিক স্থানগুলোর উন্নয়ন সাধন এবং লোহিত সাগরে একটি বিশ্বমানের ইকো-রিসর্ট তৈরির মধ্যদিয়ে পর্যটনে আরও বিকাশ সাধনের পরিকল্পনা এবং এই পরিবর্তনের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ নিরসন করতে ২০১৮ সালের জুন থেকে মহিলাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হয় যা রাষ্ট্রটিতে আইন বহিভর্‚ত ছিল এবং সুদীর্ঘ সময় ধরে নারীদের উপর নিগ্রহের প্রাথমিক উদাহরণ রূপে ছিল।

বার্তাটি পরিষ্কার ছিল : টাইটানিক সমান পরিবর্তনগুলো সউদী আরবে অনেক আগেই থেকেই চালু হয়েছিল এবং যে ব্যক্তি সেসব চালাচ্ছিলেন, তিনি ছিলেন সউদী বাদশাহর এক রহস্যময়, কাজপাগল পুত্র, যার নাম মোহাম্মদ বিন সালমান। তখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর এবং তিনি দেশকে পুনঃনির্মাণ ও মধ্যপ্রাচ্যকে সুবিস্তৃত করতে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন।

আরামদায়ক চেয়ারে বা রঙীন কার্পেটে বসে সম্মেলনে আগত অংশগ্রহণকারীরা তরুণ যুবরাজকে মাপতে এসেছিলেন। তার কথায় কি সত্যতা ছিল? তিনি কি সেই দূরদর্শী নেতা, যিনি সউদী আরবকে তার রক্ষণশীল অতীত থেকে টেনে বের করে আনতে পারবেন, নাকি এটি কোনো হঠকারী ফাঁপা বুলি হয়ে দেশটিকে মাটিতে মিশিয়ে দেবে?

পাশের দরজাটি খুলে যুবরাজ প্রবেশ করার সাথে সাথেই পুরো হলটি মুখরিত হয়ে উঠেছিল। তিনি সউদী পুরুষদের জন্য বিশেষায়িত পোশাক পরেছিলেন: তোপ নামে পরিচিত একটি দীর্ঘ সাদা জোব্বা, কালো দড়ি দিয়ে বাঁধা একটি লাল-সাদা চেকের পাগড়ি এবং কালো স্যান্ডেল। ফাস্টফুডপ্রীতির কারণে তিনি কিছুটা মোটা ছিলেন এবং তার গাল অবধি উস্কোখুস্কো দাড়ি জানান দিচ্ছিল, তিনি কাজ নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে অতিরিক্ত সাজসজ্জার জন্য নষ্ট করার সময় ছিল না। সহায়তাকারী পরিবেষ্টিত এবং ফটোগ্রাফার ও টেলিভিশন ক্যামেরার মধ্যমনি হয়ে তিনি মঞ্চে উঠে একটি সাদা আর্মচেয়ারে গিয়ে বসেছিলেন।

৩ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি অস্পষ্ট অবস্থান থেকে স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। হাজার হাজার যুবরাজের মধ্যে তিনি এমন এক যুবরাজ, যিনি রাষ্ট্রের শক্তি কাঠামোর শীর্ষে ওঠার জন্য ছক কষেছেন এবং বাজিমাত করেছেন। ২০১৫ সালে তার বৃদ্ধ বাবা বাদশাহ সালমান যখন সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন, তখন তিনি তার পুত্রকে রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, ধর্ম এবং তেল দফতরের তদারকির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তারপর যুবরাজ বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়দের তার পথ থেকে সরিয়ে দিয়ে সিংহাসনের উত্তরসূরী বা হবু বাদশাহ হয়ে ওঠেন। তার পিতা বাদশাহ সালমান রাষ্ট্রপ্রধান হলেও এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, যুবরাজ মোহাম্মদই রাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত শাসক, তত্ত¡াবধায়ক এবং প্রধান কার্যনির্বাহী। (চলবে)

 

 

 



 

Show all comments
  • Md Mohiuddin Al Faruk ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    বাদশাহ ফয়সালের যৌগ‍্য উত্তরসূরী ,,, তিনিও সৌদি আরবে এমন কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন যেগুলো মোটেও গ্রহণ করেনি , সেদেশের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থা। সবশেষ পরিণতি কি হয়েছিল তা তো সবাই জানে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbubur Rahman ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    অপেক্ষায় আছি কোন দিন তার বাবাকে ধাক্কা মারে!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Fazlul Karim ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    এই শয়তান ইসলামের বড় শত্রু।মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানদের অশান্তির কারণ এবং ইসরায়েল ও আমেরিকার পরম বন্ধু।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    এমবিএস আসার পর থেকেই সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি শুরু হয়েছে। তার ভালো জ্ঞানের যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য বলবো ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    ছক কষতে কষতে একদিন কোথায় হারিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • চাদের আলো ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    পুরো মধ্যপ্রাচ্যের অশান্তির মূলে এ খল নায়কের হাত আছে। বেশি বুঝে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mizanur rahman ১৩ মার্চ, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
    শান্তিপুর একটি রাষ্ট্রকে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • torab ali ১৩ মার্চ, ২০২০, ৮:৪৪ এএম says : 0
    মুসলমানদের জন‍্য সবচেয়ে বর সমস্যা বর্তমান সময়ের বাদশাহগন। ইহুদী ও খৃষটানদের দালাল ও তাদের এজেন্ট।
    Total Reply(0) Reply
  • নূরুল্লাহ ১৩ মার্চ, ২০২০, ৩:৩৪ পিএম says : 0
    পশ্চিমারা যখন এভাবে প্রশংসা করে উস্কানি দিচ্ছে তখন বুঝতে হবে পরিণতি সৌদি ও উম্মাহ সবার জন্য খারাপ হবে। কাজপাগল! এধরেন ফাঁপা প্রশংসা। য়ামানে বোমা ফেলানো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল তাই না! কাতারকে অবরুদ্ধ করা আর কত কাজের কথা বলা যায়!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ