Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জুমার খুৎবা-বয়ান নজরদারির নামে খতিবদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার পাঁয়তারা-ইসলামী নেতৃবৃন্দ

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জুমার খুৎবা-বয়ান নজরদারির বিষয়ে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ইসলামী দল, সংগঠন এবং ওলামায়ে কেরাম। গতকাল পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, জুমার খুৎবা-বয়ান নজরদারির সিদ্ধান্তের নামে কী খতিবদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার পাঁয়তারা হচ্ছে? এরূপ কোনো চক্রান্ত হলে তা বমেরাং হবে।
ইসলামী আন্দোলন
সম্প্রতি গুলশানের হোটেলে এবং শোলাকিয়া ঈদগাহের পাশে সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী বিভিন্ন পদক্ষেপ ইসলামী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো হচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই অবিলম্বে এসব অপতৎপরতা বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে জুমার নামাজের খুৎবা ও ওলামা-মাশায়েখদের ওয়াজ মাহফিল বা ধর্মীয় সভার ওপর নজরদারির কথা বলা হয়েছে। এমনটা মসজিদ তথা ইসলামী কর্মকা-ের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।
গতকাল এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন,  গুলশান ও শোলাকিয়ায় যারা সন্ত্রাস করেছে তাদের সাথে মসজিদ-মাদরাসা বা কোনো আলেম-ওলামার সম্পর্ক নেই। অথচ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা নাস্তিক ও ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী ইসলামকে সঙ্কুচিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তারা প্রকৃত সন্ত্রাস দমন না করে ইসলাম দমনের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমরাও এসব সন্ত্রাস ও হত্যাকা- জুমার খুৎবা-বয়ান নজরদারির নামেসমর্থন করি না, কিন্তু কোনো মহল যদি এই ইস্যুতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তাও আমরা সহ্য করব না। তিনি অবিলম্বে এ ব্যাপারে সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, জুমার খুৎবায় খতিব সাহেবরা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দেন, তাদের বয়ানে কেউ সন্ত্রাসী হয় না। আপনার প্রশাসনকে আলেম-ওলামাদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ থেকে বিরত রাখুন। আলেম-ওলামা ও দ্বীনদার মুসলমানরা ইসলামের কণ্ঠরোধের কোনো পদক্ষেপ মেনে নেবে না।
কর্মসূচি : সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল আগামী শনিবার- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস        
গতকাল আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতি শুক্রবার জুমার খুৎবা ও বয়ান নজরদারি করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, কেন্দ্রীয় প্রচার প্রকাশনা  সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, জুমার খুৎবা ও বয়ান নজরদারির নামে সরকার খতিবদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার পাঁয়তারা করছে কি? তারা বলেন, মসজিদের ইমাম ও খতিবরা ইসলামের সঠিক বক্তব্য মানুষের সামনে তুলে ধরেন। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ সমাজের অনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়ে দেশের মানুষকে সচেতন এবং এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুসল্লিদের উৎসাহিত করেন। দেশের ক্রান্তিকালে ইমাম-খতিবরা অতীতেও ভূমিকা রেখেছেন বর্তমানেও রাখছেন। সুতরাং যেসব কারণে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সেগুলো চিহ্নি‎ত করে সমাধানের চেষ্টা করা দরকার। নেতৃবৃন্দ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় সব রাজনৈতিক ও সামাজিক এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
জামিয়া সোবহানিয়া মালিবাগ
জামিয়া সোবহানিয়া মালিবাগের প্রিন্সিপাল শায়খুল হাদিস আল্লামা নূর মুহাম্মদ বলেন, সরকার গুম, খুন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এখন ইসলামী জ্ঞান, আদর্শ ও শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। বিশ্বের কোথাও মসজিদে নজরদারি নেই, ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে নজরদারির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মুসলমানদের জন্য চরম অবমাননাকর। একশ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী মিডিয়া মসজিদ ও নামাজের প্রতি জাতিকে বিদ্বেষী করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। সবাই সোচ্চার হয়ে এ চক্রান্ত রুখতে হবে।
মুসলিম যুবশক্তির যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, সারাবিশ্বে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে যে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের উৎস মসজিদ, জুমার খুৎবা ও বয়ান। যেন মসজিদে হামলা, ধরপাকড় ও অভিযান চালালে কেউ উচ্চবাচ্য না করে। মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, নিহত সন্ত্রাসীরা নামাজ পড়ত, তারা ধর্মের দিকে ঝুঁকেছিল। এটা মুসলমানদের হেয় করার অপচেষ্টা। নতুন প্রজন্ম যেন নামাজ ও ধর্মকর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। শোলাকিয়ায় যে তিন লাখ লোক নামাজ পড়ল তারা কি সন্ত্রাস পছন্দ করে? সারাদেশে যে লাখো ঈদের জামাত হলো সেখানে কোথাও কি বোমা ফুটেছে? শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসীরা নামাজ পড়েনি, তারা আলেম বা ইমামও নন। তারা আধুনিক শিক্ষিত ও বিকৃত মানসিকতার বিভ্রান্ত তরুণ। এদের হোতা ও গুরুদের খুঁজে বের করা হোক। এদের বিচারের সম্মুখীন করা হোক। মসজিদ, জুমায় খুৎবা ও বয়ানকে কলুষিত করার ষড়যন্ত্র জাতি সফল হতে দেবে না।
জাতীয় ইমাম সমিতি
জাতীয় ইমাম খতিব ঐক্য পরিষদের প্রচার সম্পাদক মুফতি আসাদুজ্জামান বলেন, সরকার ইসলামী ফাউন্ডেশনের বিতর্কিত ডিজি শামীম আফজলের কথায় এমন সব সিদ্ধান্ত নেয় যা দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক হুমকি। সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এখন মসজিদ-মাদরাসা, জুমার খুৎবা ও বয়ানের পেছনে লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অথচ এ দেশে জেএমবিসহ সব সন্ত্রাসীর বিষয়টির সাথে রাজনীতি জড়িত। রাজনীতিতে সমন্বয়, সমঝোতা ও ঐক্য না আনলে দেশ সন্ত্রাসের জন্য উর্বর হয়ে উঠবে। মসজিদ-মাদরাসায় নয়, সন্ত্রাস বিত্তবানদের ঘরে, বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্লাবে প্রতিপালিত হবে।
ধর্ম ও ধার্মিক মানুষকে কলুষিত করার চক্রান্ত বুমেরাং হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
জুমার খুতবা শুনে এদেশে কোনো জঙ্গি তৈরি হয়নি, কোটি কোটি মুসলমান জুমার খুতবা মনিটরিং করে এবং শুনে। সুতরাং নজরদারী খুতবা না করে সন্ত্রাসের উৎস নির্মূল করতে হবে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর জমিয়তের সভাপতি শাইখুল হাদিস মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণ পেতে হলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং রাজনৈতিক বিভাজন দূর করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জুমার খুৎবা-বয়ান নজরদারির নামে খতিবদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার পাঁয়তারা-ইসলামী নেতৃবৃন্দ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ