Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রামে এক হাজার মামলা

মিটারে চলছে না অটোরিকশা : অভিযানের প্রথম দিন

প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে মিটারে চলছে না অটোরিকশা। কারণ অটোরিকশায় মিটার লাগেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে রাস্তায় মিটারবিহীন কোন অটোরিকশা চলতে পারবে না। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব অটোরিকশায় মিটার সংযোজন বা ক্যালিব্রেশন করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। পুলিশের এই ঘোষণা গতকাল প্রথম দিনেই অকার্যকর করে দেয় বেপরোয়া চালকেরা। মিটার ছাড়াই তারা অন্যদিনের মতো অটোরিকশা চালিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করেছে। এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ অটোরিকশা গলাকাটা হারে ভাড়া আদায় করেছে। পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে- এমন চিন্তা থেকে ট্রাফিক পুলিশ মিটারবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে কোন অভিযানও পরিচালনা করেনি। ফলে আগের মতোই দাপটের সাথে নগরীতে চলাচল করেছে অটোরিকশা।
তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) একেএম শহীদুর রহমান বলেন, বিকেল পর্যন্ত অভিযানে এক হাজার অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অটোরিকশা মিটারে চলছে না এটা আমরা সকালেই জানতে পেরেছি। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা সকাল থেকে অভিযান শুরু করিনি। তবে পরীক্ষা শেষে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। বিকেল পর্যন্ত এক হাজার অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, মিটারে অটোরিকশা চলাচলে বাধ্য করতে পাঁচটি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক টিমে একজন সার্জেন্ট অথবা একজন ট্রাফিক পরিদর্শকের নেতৃত্বে আটজন করে সদস্য রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন অভিযান চলবে। আমরাও মনিটরিংয়ের জন্য রাস্তায় থাকব। যারা মিটারে যেতে চাইবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। দুপুরের পর অভিযান শুরু হলে বিআরটিএতে মিটার সংযোজনে অটোরিকশার ভিড় বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আশাবাদী অভিযান অব্যাহত থাকলে অটোরিকশা চালক ও মালিকেরা মিটার সংযোজন করতে বাধ্য হবে। তবে এক্ষেত্রে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এসব অটোরিকশা চলাচল করছে। এ মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।
তিন মাস আগে থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে মিটারে অটোরিকশা চলাচল বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হলেও মিটার সংযোজনের জন্য বারবার সময় বাড়ানো হয়। তবে সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিটারে অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে অনড় অবস্থান নেয় পুলিশ। রোববার চট্টগ্রাম চেম্বারের এক অনুষ্ঠানে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামে মিটার চালু হওয়ার কথা ছিল নভেম্বরে। অনুরোধ থাকায় সময় বাড়িয়েছিলাম। পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকে চট্টগ্রামে মিটারে চলবে সিএনজি অটোরিকশা। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না। সময় বাড়ানো হবে না। এটিকে আমি কমিটমেন্ট হিসেবে নিয়েছি। চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ঢাকায় পেরেছি, এখানে কেন পারবো না?
মন্ত্রী এবং পুলিশের এসব ঘোষণার পরও গতকাল নগরীর প্রায় সর্বত্রই মিটারবিহীন অটোরিকশা চলাচল করেছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে পুলিশ সকালে অভিযান চালায়নি। কিন্তু বিকেলেও অনেক এলাকায় গণহারে মিটারবিহীন অটোরিকশা চলাচল করেছে। যাত্রীরা আগের মতোই ভাড়া নির্ধারণ করে গন্তব্যে গেছেন। যাত্রীদের কেউ কেউ মিটারের কথা বললেও চালকরা সরাসরি মিটার নেই বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। নগরীর কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, হাতেগোনা দু’একটি অটোরিকশায় মিটার সংযোজন করা হলেও ভাড়া আদায় হয়েছে আগের নিয়মে।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর নগর পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, সরকার নির্ধারিত ভাড়া হিসেবে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা প্রথম ২ কিলোমিটার ৪০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা করে আদায় করতে পারবে। বিরতিকালের জন্য ভাড়া প্রতি মিনিটে ২ টাকা। যেকোন দূরত্বে যাত্রী পরিবহনে বাধ্যতামূলক সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা আদায় করতে পারবেন চালকেরা। সরকার নির্ধারিত ন্যুনতম ভাড়া ৪০ টাকা হলেও অটোরিকশা চালকেরা সর্বনিম্ন ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা আদায় করছে।
মহানগরীতে লোকসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম হওয়ায় অটোরিকশা চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নগরবাসী। ব্যাটারি চালিত রিকশা চালু হওয়ার পর অটোরিকশা চালকদের ভাড়া নৈরাজ্য কিছুটা কমে এসেছিল। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে অটোরিকশা চালকদের ভাড়া নৈরাজ্য ফের চরমে উঠে।
ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক দফা মিটারে ভাড়া আদায় বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কখনও বাস্তবায়ন হয়নি। অভিযানের নামে কয়েকদিন ‘চোর-পুলিশ খেলা’ চলেছে। কিছুদিন পর আবার আগের মতই মিটারবিহীন অটোরিকশায় গলাকাটা ভাড়া আদায় শুরু হয়। এবার পুলিশের পক্ষ থেকে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও এখনও পর্যন্ত হাতেগোনা কিছু অটোরিকশায় মিটার সংযোজন করা হয়েছে বাকি অটোরিকশায় মিটার সংযোজনের ব্যাপারে আগ্রহ নেই চালক ও মালিকদের।
অটোরিকশা চালক ও মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নগরীর ৯০ ভাগ অটোরিকশায় মিটার সংযোজন করা হয়নি। কয়েকজন চালক ও মালিক জানান, নগরীতে বৈধ অটোরিকশা ১৩ হাজার। প্রায় সমান সংখ্যক অবৈধ বা রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাও চলছে।
কিন্তু পুলিশ শুধুমাত্র বৈধ অটোরিকশাগুলোকে মিটারে চলাচল করতে বলছে। বৈধ অটোরিকশা একদিকে সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে, অন্যদিকে তাদেরকে মিটার সংযোজনের নির্দেশ দিয়ে তাদের উপর অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া সরকার যে কয়টি কোম্পানীকে মিটার সংযোজনের অনুমোতি দিয়েছে, তাদের মিটার নিম্নমানের। এসব মিটার সংযোজনের পর বেশিদিন টিকবে না। একারণে অনেকে এসব মিটার সংযোজন করছে না। মালিক ও চালকদের অভিযোগ সরকার বৈধ অটোরিকশাগুলোক নানা বিধি-নিষেধ দিলেও অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে করে বৈধ অটোরিকশার চালক ও মালিকেরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অবৈধ অটোরিকশার দাপটে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে এক হাজার মামলা

২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ