Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রথমদিনে বইপ্রেমীদের ভিড়

প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : বইপ্রেমীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা। কখন উন্মুক্ত হবে বইমেলার গেট। কখন নতুন বইয়ের মোড়কের মনকাড়া গন্ধে নিজের মন রাঙাবে। দুপুরের পর থেকেই শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর এলাকায় হাজার হাজার বইপ্রেমীদের অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
গতকাল বিকালে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ সময় নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগের পরপরই দর্শকের জন্য উন্মোক্ত করে দেয়া হয় অমর একুশে বইমেলা। টিএসসি মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান কথা হলে তিনি বলেন, দুপুরের পর থেকেই অপেক্ষা করছি। প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেই আমরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারব। মেলার প্রথম দিনেই প্রবেশ করছি, এই আনন্দে অপেক্ষার পালাও মধুর।
অবশেষে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলে তার মত সকল বইপ্রেমীর অপেক্ষার অবসান ঘটে। এ সময় হাজারও বইপ্রেমীকে টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। কিছু সময়ে মধ্যেই বইমেলা গত বছরের চেহারায় ফিরে যায়।
এদিকে বইমেলায় গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, মেলার স্টলের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক স্টলে একটাও বই আসেনি। কোন কোন স্টলে বই সাজানোর কাজ চলছে। আবার কোন কোন স্টলে গতকালই বই সাজিয়ে রেখে ছিলেন। মেলা উদ্বোধন হওয়ার পরপরই তারা বই বেচা কেনার কাজ শুরু করে। এই বছর বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে যারাই আসবেন সবারই মন ভরে যাবে। যারা প্রতিবছর ঘিঞ্জি ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা স্টল দেখে বিরক্ত, এবার তারা অবাক হবেন। সুন্দর স্টল বিন্যাস, প্যাভেলিয়নের ডিজাইন মন কেড়ে নেবে যে কারো। শুধু বই কেনার জন্যই নয়, কিছু সময় কাটানোর জন্য, আড্ডা দেয়ার জন্যও অনেক জায়গা রেখেছে মেলা কর্তৃপক্ষ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বইমেলাকে এতটাই সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যে, এবার মেলায় ভিড়ে ঠেলাঠেলি করবার প্রয়োজন পড়বে না।
স্টলে স্টলে গিয়ে পাঠকরা নেড়েচেড়ে দেখছেন বই। অনেকে খোঁজ করছেন তার প্রিয় লেখকটির বই এসেছে কি না। প্রথমদিনেই প্রিয় লেখকের বইটি হাতে পাবার আগ্রহ। হোক অল্প, কিন্তু বই বিক্রি শুরু হয়ে গেছে বইয়ের স্টলগুলোতে। প্রিয় লেখকের নতুন বইয়ের মনমাতানো ঘ্রাণ বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন অনেকই।
গতকাল মেলায় যে সব বই এসেছে তার মধ্যে রয়েছে শিশুদের ছড়ার বই দূর আকাশে চাঁদের দেশ। এই বই লিখেছেন নাসিমা সুলতানা শফি। বইটি প্রকাশ করেছেন প্রতিভা প্রকাশনী।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকালে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন এবং উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করেন। শিল্পী তপন মাহমুদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। স্বাগত ভাষণ প্রদান করন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন,
আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ)-এর সভাপতি রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন এবং বাংলাদেশের প্রকাশকদের পক্ষে অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী।
মোড়ক উন্মোচন ও উপহার: গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা বইয়ের ব্রেইল ও অডিও সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ বই থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে একটি কবিতা পাঠ করেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আসিফ করিম পাটোয়ারী রূপম। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর সবুজ মাঠ পেরিয়ে বইয়ের ব্রেইল সংস্করণেরও মোড়ক উন্মোচন করেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বাংলা একাডেমির স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন একাডেমির সভাপতি আনিসুজ্জামান। এরপর প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুবজাগরণ স্টল ঘুরে দেখেন। এসময় যুবলীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নতুন বই উপহার দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর স্টল ঘুরে দেখেন। এরপর জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর স্টল ও স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা স্টল ঘুরে দেখেন তিনি। স্টল পরিদর্শন শেষে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা : হাইকোটের ঐতিহাসিক রায়সহ কয়েকটি বই বিদেশি লেখকদের তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার: অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই পুরস্কার তুলে দেন।
ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫ অর্জনকারীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ বছর ১০ ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ক্যাটাগরি ও পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, কবিতায়- আলতাফ হোসেন, কথা সাহিত্যে- শাহীন আখতার, প্রবন্ধে- আবুল মোমেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অনুবাদে- আব্দুস সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্যে- তাজুল, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনীতে- ফারুক চৌধুরী, নাটকে- মাসুম রেজা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশে- শরীফ খান এবং শিশু সাহিত্যে- সুজন বড়ুয়া।
মোট পাঁচজন বিচারক চূড়ান্তভাবে এ পুরস্কার মনোনয়ন করে থাকেন। হায়াৎ মামুদের সভাপতিত্বে বাকী বিচারকরা হলেন- সৈয়দ আবুল মকসুদ, রামেন্দু মজুমদার, করুণাময় গোস্বামী এবং ফখরুল আলম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রথমদিনে বইপ্রেমীদের ভিড়

২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ