এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীরাও
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি
রুমা দাস কেয়া
একটি পরিবারের শিশুরা নানী, দাদী, মা-চাচীদের নাম বলতে পারে অনেক পরে। খুবই সামান্য একটি ঘটনা কিন্তু এর ব্যাপকতা অনেক। একটি মানুষের পরিচয়ের প্রথম ধাপই হচ্ছে তার নাম। সেই নামটি রাখা হয় অনেক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। সবাই ভাবে, এই নাম দিয়েই একদিন মানুষটি পরিচিত হবে সবার কাছে। কিন্তু নারীর পরিচয় অনেকটা পরগাছার মতো, যে গাছকে আশ্রয় করে থাকে সেই গাছের নামে পরিচিত হয় পরগাছা হিসেবে। নারীর আত্মপরিচয় সময়ের সাথে, উপলক্ষের সাথে, এমনকি কাল বদলের সাথে সাথে বদলায়। আগে তো ঘর পাল্টালে নারীর পরিচয় পাল্টাত। এখন সময়ও বদলে দেয় নারীকে। নারীর পরিচয় বদল হয় ঋতুর সাথে, কালের সাথে, এমনকি যুগের সাথেও। সেই কবে মধ্যযুগ থেকে নারী তার সঠিক পরিচয়ে পরিচিত হতে চাইছে। আজ আমরা যে প্রথম বিশ্বকে আদর্শ মানি, সেই সব দেশের মেয়েরা আপাতদৃষ্টিতে খুব স্বাধীন মনে হলেও তার কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের আদলে নিজেদের ঘরোয়া পুতুল হিসেবেই সজ্জিত করত, যে কারণে আসলে উঠে আসে “ওফবহঃরঃু পৎরংরং” বিষয়টি নারী একটা সময় উপলব্ধি করতে পারেÑ আসলে তার নিজস্ব পরিচয় বলে কিছু নেই, সভ্যতার শুরুতে আমরা জানি কৃষি কাজের পত্তন হয় নারীর হাতে। নারী সঞ্চিত খাদ্যবীজ আবাসস্থলের পাশে ফেলে রাখে, যা পরবর্তীতে ফসলবৃক্ষ ফলদবক্ষে পরিণত হয় এবং এভাবেই নারীর হাতে পত্তন ঘটে কৃষি কাজের। প্রাচীন এই কৃষক নারী কিন্তু বহুকাল ধরেই আমাদের সমাজে মাঠে বাবার সাথে, স্বামীর সাথে, সন্তানের সাথে কৃষিকাজ করে আসছে এবং ফসল তলিতে পরবর্তী সময়ের পরিশ্রমের কাজ সেটিও নারীই করে সিংহভাগ। শুধু তাই নয় সব পেশাতেই, যেমন মৃৎশিল্পে কিংবা বয়নশিল্পে নারীর অংশগ্রহণ মুখ্য, সেক্ষেত্রে নারী বঞ্চিত হয় তখন, যখন এই বিষয়গুলোর সাথে অর্থনীতি চলে আসে। ফসল বিক্রিলব্ধ অর্থ যায় পুরুষের হাতেই। কিংবা যখন শিল্পের প্রসার বাণিজ্য ব্যবসায়ী বলে পরিগণিত হয়, তখন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন পরিবারের পুরুষ কর্তাটি। এমনি করে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত নারী তার গৃহিণী পরিচয়ের বাইরে কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে পারে না। এই যে যুগের পর যুগ, মেয়েরা রন্ধনশিল্পের সাথে জড়িত সেখানেও যখন অর্থনৈতিক কর্মকা- জড়িত হয়ে যায় অর্থাৎ কিছু রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা, সেখানে পৃথিবীর সব বড় রাঁধুনীই পুরুষ। কি অদ্ভুতভাবে নারী তার গৃহের বাইরে বার বার “পরিচয়”র যুদ্ধটাতে হেরে যায়। তার স্থান নির্দিষ্ট হয়ে যায় নির্দিষ্ট পরিচয়ের গ-িতে, সেটা হচ্ছে গৃহ বা পরিবার।
কিছুদিন আগেই পালিত হলো বাঙালির প্রাণের উৎসব “পহেলা বৈশাখ” বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। বাংলা বছরের প্রথম দিন। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে মহল্লার একটি ছোট্ট দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় শপিং মলগুলো সর্বত্রই মহা আড়ম্বরে চলে পণ্যের বেচাকেনা। এই বেচাকেনাই ঘর সাজানো থেকে শুরু করে আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য প্রত্যেকের জন্য উপহারসামগ্রী ক্রয়ের দায়িত্ব অবশ্যই বাড়ির নারী সদস্যদেরই। এই পুঁজিবাদী সমাজের পূর্বে যখন কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ছিল তখন যে নতুন বছরের শুরুতে হালখাতা বা পুণ্যাহের মতো উৎসব হতো সেখানেও নারী গৃহের অভ্যন্তরে পিঠা বানানো, ভালো ভালো খাবার তৈরির কাজ, এগুলো সানন্দেই করত। আর এখন বাইরে বেরিয়ে কেনাকাটার দায়িত্ব এবং গৃহের দায়িত্ব তো অবশ্যই নারীর। কিন্তু এই যে আত্মপরিচয়ের ধেরাটোপ সেখান থেকে কি নারী বের হয়ে আসতে পেরেছে।
পহেলা বৈশাখের যে বাজারজাতকরণ, সেখানে খুব কৌশলে নারীকে টার্গেট গ্রুপ বানানো হয়েছে। যত চটকদারি বিজ্ঞাপন তা নারীকে আকৃষ্ট করতে তার মনোনিবেশ বরতে বাধ্য করেছে তাকে। নারী পুঁজিবাদের মোড়কে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। পুঁজিবাদ তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য নারীকে ব্যবহার করে পণ্যের বিজ্ঞাপন বাড়াচ্ছে কিন্তু নারী তার নিজস্ব পরিচয়ে কি বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছে সেইভাবে? কিন্তু নির্দিষ্ট পরিচয়ের গ-ি ছাড়া নারীকে আসলেই যুদ্ধ করতে হচ্ছে প্রতিটি জায়গায়। আমরা আসলেই কোনো নির্দিষ্ট ঝবপড়হফ পরিচয় চাই না। আমরা চাই প্রকৃত মানুষের পরিচয়। যেখানে পুঁজিবাদ তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য নারীকে ব্যবহার করবে না। বরং পুঁজিবাদের নিয়ন্ত্রক হবে পুরুষের পাশাপাশি নারীও।
-কবুধ৮৪থফঁ@ুধযড়ড়.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।