পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েও দেশের শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরানো যাচ্ছে না। একের পর এক ধসের কবলে পড়ছে শেয়ারবাজার। রোববার (৮ মার্চ) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বড় ধরনের ধস হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারো পুঁজি হারানোর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হলেও ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেইভাবে বিনিয়োগে আসেনি। আবার যারা বিনিয়োগে আছে তারা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ না করে সবাই ট্রেডারের ভূমিকায় রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সার্বিক শেয়ারবাজারে।
শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়।
নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সাত শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই সুবিধা দেয়ার ফলে শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। ৪ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে নেমে যাওয়া ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসএক্স হু হু করে বেড়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে চলে আসে। অর্থাৎ পতন কাটিয়ে ১০ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ৩৭৩ পয়েন্ট।
তবে এরপরেই ঘটে ছন্দপতন। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে গত রোববার পর্যন্ত ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে বড় দরপতন হয়েছে একাধিক কার্যদিবসে। আর রোববার রীতিমতো ধস নেমেছে। এদিন লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ২৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে ৯৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
শেয়ারবাজারে নামা এ ধসের কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান কোনো উত্তর দেননি। বাজারের এই পতনকে স্বাভাবিক মনে করছেন কি না? উত্তরে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বাজারে যে বড় উত্থান হয়েছে তাও স্বাভাবিক না। এখন যে দরপনত হচ্ছে এটাও স্বাভাবিক না। সবাই যদি কোন ব্যাংক তহবিল গঠন করল, কোন ব্যাংক বিনিয়োগ করল এ নিয়ে পড়ে থাকে তাহলে কিভাবে চলবে?
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ তহবিলের সুযোগ দেয়া হলে বিএমবিএর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ওই সিদ্ধান্তকে পুঁজিবাজারের জন্য যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে আমরা এখনো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলছি। পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ দেয়া হয়েছে। ব্যাংক কখন এই সুযোগ নেবে সেটা ব্যাংকের বিষয়। কিন্তু সুযোগ যেটা দেয়া হয়েছে, সেটা অবশ্যই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
শেয়ারবাজারের দরপতনের কারণ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, সবাই এখন ট্রেডারের ভূমিকায় চলে গেছে। কেউ বিনিয়োগের জন্য আসছে না। শেয়ারের দাম একটু বাড়লেই বিক্রি করে দিচ্ছে। এ অবস্থা চললে বাজার ভালো হবে কি করে? এই বাজার ভালো করতে হলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হলেও তার সুফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করছে না। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। যার ফলে বাজারে দরপতন হচ্ছে। আর এ পতনের কবলে পড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, বাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে তাকে কিছুতেই স্বাভাবিক বলা যায় না। আমাদের সন্দেহ পরিকল্পিতভাবে বাজারে দরপতন ঘটানো হচ্ছে। এর পিছনে করা আছে তা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে সবকটি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৪টির। আর ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪২৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪১৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়র শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- খুলনা পাওয়ার, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, ওরিয়ন ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ এবং জিনেক্স ইনফোসিস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৩০৫ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৬টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।