পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে ছোট-বড় ৩০টি পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। প্রভাবশালীরা পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি গড়ে সেখানে দরিদ্র লোকজনকে ভাড়া দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর সাথে জড়িতদের বেশিরভাগ সরকারি দলের লোক। তারা বিভিন্ন সেবা সংস্থাগুলোকে প্রভাবিত করে অবৈধ বসতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগও নিশ্চিত করেছে। এই অবৈধ কর্মকা-ের সাথে সরকারি সংস্থার লোকজনও জড়িত। আর এ কারণে পাহাড় দখল ও অবৈধ বসতি ঠেকানো যায় না।
প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষা আসতেই শুরু হয়েছে পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের তোড়জোড়। যেকোনো সময় পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতে পারে। উচ্ছেদের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভায় ঈদের পর পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ নিয়ে দখলদারদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
কারণ তারা এতটাই প্রভাবশালী যে এবারও উচ্ছেদ অভিযান সফল হবে না। প্রতি বর্ষার শুরুতে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলেও তা শেষ হয় না। কিছু ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার পর খুব কম সময়ের মধ্যে সেসব ঘর নতুন করে তোলা হয়। প্রতিবার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যে তা ফের স্বাভাবিক হয়ে যায়। অভিযানের নামে দখলদারদের সাথে চলে প্রশাসনের চোর-পুলিশ খেলা। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারে না প্রশাসন। চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় অসংখ্য পাহাড় প্রভাবশালীদের দখলে। তারা অবৈধ বসতি তুলে লোকজনকে ভাড়া দিয়েছে। লাখ লাখ টাকা আয় করছে তারা। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে লাখো মানুষ। নতুন নতুন পাহাড় দখল করে চলছে বাড়িঘর নির্মাণ। দখলের ফলে পাহাড়ে ধস হচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষায় ভারী বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। আর তাতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
গত ১০ বছরে এই অঞ্চলে পাহাড় ধসে কয়েকশ মানুষ মারা গেছে। ২০০৭ সালের ১১ জুন একদিনের ভারী বর্ষণে (চব্বিশ ঘণ্টায় ৪৫৪ মিলিমিটার) পাহাড় ধসে ১২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনায় সরকার পাহাড় সুরক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। সরকারি তদন্ত কমিটি পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পাহাড় সুরক্ষায় ৩৫ দফা সুপারিশও করে। তবে এসব সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি। কমিটি এই অঞ্চলে পাহাড়খেকোদের একটি তালিকাও প্রকাশ করে। পরে তাদের বিরদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তদন্তে দেখা যায় ভূমিদস্যু পাহাড়খেকোদের পাশপাশি সরকারি বিভিন্ন সংস্থাও পাহাড় কাটার সাথে জড়িত। কারো বিরুদ্ধেই কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে হতদরিদ্র লোকজনকে পুনর্বাসনের উদ্যোগও ভেস্তে যায়। এখন প্রতিবছর বর্ষা এলেই পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। উচ্ছেদ হয় কিছু বসতবাড়ি। বর্ষা থেমে গেলে সব তৎপরতাও থেমে যায়। পাহাড়খেকোরা ফের নতুন উদ্যমে শুরু করে পাহাড় দখল। এখন নগরী ও এর আশপাশে কোনো পাহাড় আর অবশিষ্ট নেই। গ্রামের পাহাড়েও ভূমিদস্যুদের থাবা বিস্তার হয়েছে।
সরকারি হিসাবে ছোট-বড় ৩০টি পাহাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ বসতিতে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছে। নতুন নতুন পাহাড় দখল করে গড়ে উঠছে অবৈধ বসতি। এ অবস্থায় ফের পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির’ পঞ্চদশ সভায় ঈদের পর বিভিন্ন পাহাড় থেকে ‘দখলদারদের’ উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন। প্রাথমিক পর্যায়ে বসতি স্থাপনকারীদের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও ‘প্রভাবশালীদের সহযোগিতায়’ আবার পাহাড়ের জমি বেদখল হয়ে যায় বলে অভিযোগ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। গত ২০ জুন ওই সভা শেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন পাহাড় যারা দখল করে আছে তারা মারাত্মক প্রভাবশালী। দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অবস্থান ‘অত্যন্ত কঠোর’। ৩০টি পাহাড়ে দখলদাররা অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করেছে। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রতিবারই মূল দাবি থাকে তাদের পুনর্বাসনের। যদিও নানা প্রতিবন্ধকতায় তা হয়ে ওঠে না। দখলদারদের মধ্যে ‘জনপ্রতিনিধিরাও’ আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর একটি গোয়েন্দা সংস্থা পাহাড় দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা সেটি পুলিশকে দিয়েছি। সেখানেই দু-একজন মারাত্মক প্রভাবশালী দখলদারের সন্ধান মিলেছে। এদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিও আছেন।
পাহাড়ে দখল উচ্ছেদে এনজিওগুলোরও দায় আছে বলে মন্তব্য করেন প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তা। তাদের মতে কিছু এনজিও পাহাড়ে বসবাসকারীদের ঋণ দিয়ে থাকে, অনেকে এ সুযোগ নেন। ‘পাহাড়কাটা’ বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানোর কথা থাকলেও এমন অভিযান এখনও শুরু হয়নি। আগে পাহাড় কাটার অপরাধ মোবাইল কোর্টের আওতায় ছিল না। আড়াই মাস আগে তা মোবাইল কোর্টের আওতায় এসেছে। এখন অপরাধীদের আটক করে তাৎক্ষণিকভাবে জেল দিতে পারেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জানা গেছে খুব সহসা অভিযান শুরু হবে।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির মতে চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের সংখ্যা ৩০টি। এগুলো হলোÑসিআরবি পাহাড়, টাইগারপাস-লালখান বাজার রোড সংলগ্ন পাহাড়, টাইগারপাস মোড়ের পশ্চিম পাড়ের পাহাড়, মোজাফফরনগর পাহাড়, নদার্ন হিল হিসেবে পরিচিত কাট্টলি থেকে সীতাকু- পর্যন্ত বিস্তীর্ণ পাহাড়, সলিমপুর বাস্তুহারা পাহাড়, গোলপাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়, বন গবেষণা ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়, জয়পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুল সংলগ্ন পাহাড়, আকবর শাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের পার্শ্বে বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, ডিসি হিলের চেরাগী পাহাড় সংলগ্ন অংশ, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের পাহাড়, এ কে খান পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন পাহাড়, কৈবল্যধামস্থ বিশ্বকলোনী পাহাড়, চট্টেশ্বরী রোডের জেমস জিনলে পাহাড়, লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদরাসা পাহাড়, মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড় সংলগ্ন হারুন খানের পাহাড়, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার পাহাড়, লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড় ও সিডিএ এভিনিউ রোড সংলগ্ন সৈয়দ জিয়া হোসেনের পাহাড়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।