পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বগুড়ায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির মুখোশ সংবর্ধনা নেয়ার পর এবার টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানোয় সমালোচনার ঝড় বইছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত টিস্যুবক্সের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর থেকে তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশে। এ ধরণের ঘৃণ্য কাজের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের ভৎর্সনাও করেছেন অনেকে।
সম্প্রতি বগুড়ার পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করতে যান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেখানে উপস্থিত শত শত শিক্ষার্থী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখোশ পরে তাকে স্বাগত জানালে তিনি এর কোনো প্রতিবাদ করেন নি। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে দীপু মনিকে ভৎর্সনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। আর সমালোচনার মধ্যেই আরেকটি কান্ড ঘটিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কতিপয় অতি উৎসাহী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। এবার তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছেপে দিয়েছে টিস্যু বক্সে। এই টিস্যু পেপারগুলো ব্যবহার করবেন শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব)সহ সব পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে জানা যায়, সাত-আটমাস আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) তাদের লোগো ব্যবহার করে এক হাজার টিস্যু বক্স তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেভাবেই এসএমএস টেকনলোজিস নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা অধিদপ্তরের কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তা টিস্যুবক্সে অধিদপ্তরের লোগোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ছবিও জুড়ে দেয় টিস্যু বক্সে। শুধু তাই নয়, সেই টিস্যু বক্সের দামও ধরা হয় অনেক বেশি। প্রতিটি টিস্যু বক্সের দাম ধরা হয়েছে ৫৬ টাকা। যা বাজারে পাইকারি দরে ত্রিশ টাকায় পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত এই এক হাজার প্রশ্নবিদ্ধ টিস্যুবক্স এখন শিক্ষা ভবনের মূল ভবনের নীচ তলার স্টোর রুমে রাখা হয়েছে।
বিষয়টি জেনে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি এ নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মুজিববর্ষের লোগো অনাকাক্সিক্ষতভাবে যত্রতত্রভাবে প্রিন্ট করার একটি ঘটনা যা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে হয়েছে, তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এই প্রিন্টের বক্সগুলো বাজেয়াপ্ত করেছি এবং এর পিছনে কে সেটি জানাতে বলেছি। পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়ে থাকলে অবশ্যই শাস্তি পেতেই হবে। আমাদের সমাজ, প্রশাসন, রাজনীতিক পরিমন্ডলের সবখানেই অবিবেচক আর অতিউৎসাহীর কোনো কমতি নাই। পাশাপাশি অপরাজনৈতিক শক্তির দোসররা তো আছেই! এরা চাইবে যে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, বিতর্ক সৃষ্টি করতে। এই চ্যালেঞ্জটি আমাদের আছেই। এই বিশাল প্রশাসনের কোথায় কে কোন বিতর্ক ঘটিয়ে ফেলেছে তা আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ কঠিন। তাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আর ব্যবস্থা নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। সকলের অবগতির জন্য আমরা জানাচ্ছি ্রমুজিববর্ষেরগ্ধ আনুষ্ঠানিকতা কার্যক্রম, ইত্যাদির দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য একটি জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আছে। এর প্রধান, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই কমিটি নির্দেশিত কাজের বাইরে কিছু করতে চাইলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন দুস্থ, গৃহহীন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যানমূলক কিছু করতে, যেমন তাদের জন্য গৃহনির্মান। এতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় তার সাধারণ মানুষের জন্য যেই সমান অধিকারের দেশ তিনি রেখে যেতে চেয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নের পথে আমরা অনেক দূর এগুতে পারবো। সুতরাং অতিউৎসাহীরা সাবধান!’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বঙ্গবন্ধুর মুখোশ পরিহিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিবাদন নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি করেছিলেন। আবারও তার মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেপে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। মুজিববর্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির ছবি ছাপানো টিস্যুবক্স কর্মকর্তাদের টেবিলে-টেবিলে দেয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
আসাদ রহমান নামে একজন লিখেছেন, টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি! এতো তেল ভালো না...। সেদিন দেখলাম দীপু মনিকে স্বাগত জানাচ্ছে হাজারো মুজিব! আজ টিস্যু বক্সে মুজিব! তাও শিক্ষামন্ত্রণালয়ে অধিণেই! এখনই না থামালে সামনে আরো কত কি দেখতে হবে!
কবির চৌধুরী তন্ময় লিখেছেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এতোগুলো মাস্কপড়া বঙ্গবন্ধু’র সালাম-স্যালুট নিতেও দ্বিধা করেননি। একবারের জন্যেও বারণ করেননি কিংবা এই ধরনের কর্মকান্ডে যারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা তো দূরের কথা; একটি কথাও বলেননি। বরং ছবি তোলার জন্য তিনি পরিবেশ তৈরি করার কাজে ব্যস্থ ছিলেন (ভাইরালকৃত ভিডিওতে দৃশ্যমান)। অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের টিস্যুর বক্সে মুজিব বর্ষের লগো ব্যবহার করার তোষামোদী বা চামচামী করতেও কারো বিবেকে বাধা দেয়নি। জানি না, এই তোষামোদীদের কাছ থেকে জাতি আর কী কী দেখতে পাবে! আবার এই তারাই যদি ডাস্টবিনে মুজিব বর্ষের লগো ব্যবহার করে লিখে দেয়, ‘আমাকে ব্যবহার করুন’-এতে অবাক হওয়ার কিচ্ছু থাকবে না।
মোঃ জোবায়ের মিয়াজী লিখেছেন, জানি না, এই তোষামোদীদের কাছ থেকে জাতি আর কী কী দেখতে পাবে! আবার এই তারাই যদি ডাস্টবিনে মুজিব বর্ষের লগো ব্যবহার করে লিখে দেয়, ‘আমাকে ব্যবহার করুন’-এতে অবাক হওয়ার কিচ্ছু থাকবে না।
হানিফ খান সজিবের প্রশ্ন, ‘বঙ্গবন্ধুর মুখোশ স্কুল ছাত্রীদের মুখে...... আজ দেখতে হলো টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি.... কোথায় নামিয়ে দেয়া হচ্ছে জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে?’ ‘দুঃখজনক। স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতিকে এভাবে দেখতে চাইনা। এবার থামুন, অনেক হয়েছে।’ - রেজওয়ানুল ইসলাম সঞ্চয়ের আহবান। সত্যজিত বড়ুয়া লিখেন, ‘শুধুমাত্র নজরদারির অভাবেই এই মহান মানুষটার জন্মশতবর্ষকে তামাসা বানাইছে কিছু মানুষ।’ ‘ইদানিং আমিও বিষয়টা লক্ষ করলাম ভালো, মন্দ কাজে সব জায়গায় “মুজিব বর্ষের লোগো যত্রতত্র ব্যবহার “এমনটা হওয়া উচিত বলে মনে করি না । এর একটা নীতিমালা থাকা উচিত। বাংলাদেশের অতিউৎসাহী লোকের অভাব নাই এবং এদের দ্বারা মুজিব বর্ষ নিয়ে যেন কোন বিতর্ক না হয়। কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারি আশা করছি।’ - হেলাল উদ্দিন প্রধানের প্রত্যাশা।
তন্ময় চক্রবর্তী লিখেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে যে নোংরা রাজনীতি চলছে, সেইটা খুব দ্রুতই বন্ধ হওয়া উচিত, নিজের স্বার্থকে চরিতার্থ করবার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমরা একটা ব্র্যান্ড বানিয়ে ফেলছি, অনেক হইছে। আর নাহ্, ওনার নাম ব্যবহার করে এই অপরাজনীতি এইবার বন্ধ করতে হবে, নয়তো মানুষটাকে সত্যিই অসম্মান করা হবে।’
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা: টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানোর পরও সংশ্লিষ্টদের আড়াল করতে তৎপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘটনার পর মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাউশি মুজিববর্ষের লোগো সংবলিত কোনো টিস্যু বাক্স ক্রয় করেনি। মাউশির প্রকিউরমেন্ট এন্ড ফিন্যান্স উইং থেকে টিস্যু বাক্স কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু কারিগরি নির্দেশে টিস্যু বাক্সে মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহারের কথা বলা হয়নি। রিসিভ কমিটির বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়, নিয়মানুযায়ী সরবরাহ করার আগে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্রহণ কমিটির সদস্যদের নমুনা প্রদর্শন করে। সেই নমুনায় শুধুমাত্র মাউশির লোগো ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে স্বত:প্রণোদিত হয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঐ লোগো সম্বলিত কিছু টিস্যু বাক্স মাউশি স্টোরে রেখে যায়। এ টিস্যু বাক্সগুলো সংশ্লিষ্ট রিসিভ কমিটি গ্রহণ করেনি। বিষয়টি নজরে আসা মাত্র কর্তৃপক্ষ টিস্যু বাক্সগুলো প্রত্যাহার করে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। টিস্যু বাক্সে এ লোগো ব্যবহার সমীচীন না হওয়ায় ইতোমধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে এ লোগো ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসএমএস টেকনলোজিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের ওই লোগের ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা স্বত:প্রণোদিত হয়ে কিছুই করেননি।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ৪৬তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সামনে একটি কেক রাখা হয়। যা বানানো হয় জাতীয় পতাকার আদলে। জাতীয় পতাকার ওপর ছুড়ি চালাতে পারবেন না বলে কেক না কেটে সেই স্থান ত্যাগ করেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।