পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশকে কারিগরি ও বিশেষজ্ঞ সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। সেইসাথে পুলিশ বাহিনীকেও প্রশিক্ষণ দিতে চায় দেশটি। গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রসচিবের সাথে পৃথক বৈঠকে এ কথাই জানালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেয়া হয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে উগ্রপন্থিদের দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে যৌথ অভিযান বা ঘটনাপরবর্তী যৌথ তদন্তের কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি।
গতকাল রোববার দুপুর তিনটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশাইয়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট ও মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনপ্রীত সিং আনন্দ। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় একই স্থানে পররাষ্ট্র সচিবের সাথে বৈঠক করেন বিসওয়াল। উভয় বৈঠকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে নিশা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার স্থান পরিদর্শনে যান।
এর আগে দু’দিনের সরকারি সফরে গতকাল সকালে ঢাকা আসেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। সকালে তাকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। নিশা দেশাইয়ের সঙ্গে সফর করছেন মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনপ্রীত সিং আনন্দ। ঢাকা সফর শেষে তিনি শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন। সেখানে রাজনীতিবিদ এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রসঙ্গে বৈঠক করবেন। ঢাকায় দুই দিনের এই সফরে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে নিশা দেশাইয়ের। ওইসব কর্মসূচির পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনার বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দেশের বর্তমান (নিরাপত্তা) পরিস্থিতি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। এ সময় তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কীভাবে এ সমস্যার উত্তরণ ঘটানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বৈঠকে উগ্রপন্থিদের দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে যৌথ অভিযান বা ঘটনাপরবর্তী যৌথ তদন্তের কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব তা নাকচ করে বলেন, এ দুটি বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সক্ষমতা তৈরিতে বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দেয়া প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষেই বলা যাবে। এজন্য পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা।
বৈঠকে নিশা দেশাই বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দুই দেশই বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায় লড়ছে। তাই জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় ভুক্তভোগীদের জন্য তার সমবেদনা জানিয়ে নিশা বলেন, আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে শোক ভাগ করে নিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার সব সময়ের মতোই অটুট থাকবে। তিনি বলেন, টেকনিক্যাল সহায়তা করার জন্য কীভাবে ট্রেনিং করানো যায়, কীভাবে বিভিন্ন পন্থা বের করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে জাপান ও ইতালির পক্ষ থেকে গুলশান হামলার বিষয়ে যৌথ তদন্ত করার ঘোষণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, যেকোনো দেশই সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিতে পারে। বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে নিশা দেশাই বিসওয়ালের বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমে পাঠানো মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হামলায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
বৈঠকে নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় নিহত স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসবাদ রুখতে উভয় দেশের মধ্যে বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ প্রতিহতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতাও দিয়ে যাবে।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, নিশা দেশাই সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রস্তাব দেবেন। এ ছাড়া কূটনৈতিক সম্প্রদায়, স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ মাসের শেষে ঢাকা সফরের কথা ছিল নিশা দেশাইয়ের। তবে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি নাগরিক হত্যা ও কিশোরগঞ্জে হামলার প্রেক্ষাপটে তার সফর এগিয়ে আনা হয়। তার এ সফরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অরাজকতার সময় প্রথমবার ঢাকা সফরে আসেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই। তিন দিনের ওই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন পেশার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সবার কাছ থেকে তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। তার সেই সফরকে ঘিরে তখন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আরো দু’দফা ঢাকায় আসেন তিনি। সর্বশেষ গত ৪ মে তিন দিনের সফরে চতুর্থ বারের মতো ঢাকা সফরে আসেন নিশা। এ সময় তিনি মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নানের খুনের বিষয়ে আলাপ করতে ঢাকা আসেন।
এদিকে গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ‘অংশীদারিত্ব সংলাপ’-এর শেষে যৌথ বিবৃতিতে ‘অভিন্ন হুমকির’ মুখে থাকার কথা স্বীকার করে আইএস ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টার টেরোরিজম পার্টনারশিপস ফান্ডেও (সিটিপিএফ) বাংলাদেশের যোগ দেয়ার ঘোষণা এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস শ্যানন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে গত ২৩-২৪ জুন ওই সংলাপ হয়।
এর মধ্যে ঢাকার গুলশানে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শনিবার ওই সংলাপপরবর্তী যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের ওয়াশিংটন দূতাবাস। এছাড়া গুলশান হামলার পর জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।