পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লুটপাট আর নানা অব্যবস্থাপনায় সংকটে পড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি এ খাতের তারল্য সংকট কাটাতে বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের আশ্বাস দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকারী এ সংস্থা।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসি) চেয়ারম্যান ও আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম।
তিনি জানান, ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টির মতো প্রতিষ্ঠান খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে পুরো সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই সংকটে থাকা এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনঃসংস্কার করা হবে। এটি কিভাবে করা যায় এ বিষয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিতীনির্ধারণ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও কাজ করছে বলে তিনি জানান।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীদের এই নেতা বলেন, পিপলস লিজিং ঘটনায় এই খাতে আমানতকারীদের একটা আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এটি কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল আমরা চেয়েছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে কোনো কাঠামোতে এ ধরনের তহবিল করা যায় তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, আর্থিক খাতের দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে রিকনস্ট্রাকশন বা পূন:সংস্কার করা যায় সে বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান সাথে একীভূত করা যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবছি।
আর্থিক খাতের অবস্থা ভয়াবহ রকমের খারাপ নয় দাবি করে মমিনুল ইসলাম বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করবে দেশবাসী। শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বলদের একীভূত করার বিষয়ে রাজি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সবলদের ব্যবসাতেও প্রভাব পড়ছে। তাই দুর্বলদের একীভূত করে সামনে আঘাতেও একমত শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে নিজের ঘরেকে বিপদমুক্ত ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, বিএলএফসিএ নেতারা গতকাল অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন তাদের বিভিন্ন সমস্যার তুলে ধরেন। পাশাপাশি একটি তহবিল গঠনের কথা জানান। একই বিষয় আজ গভর্নর কে তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আর্থিক খাতে আস্থা ফেরাতে নতুন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে। তবে কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএলএফসিএ এর ভাইস চেয়ারম্যান এবং আইআইডিএফসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, শুধু পিপলস লিজিং কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব অর্জন বিলিন হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে আমাদের সর্বিক সম্পদ বেড়েছে। আমানত বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কমেছে। আমাদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ভালো প্রবৃদ্ধি করেছে। কিন্তু একটি মাত্র ঘটনা সকল অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। বাজারে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। খুব শীঘ্রই আমরা এ সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গোলাম সারওয়ার আরো জানান, আমাদের এই খাতটিকে অনেক সময় লিজিং খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু আমাদের ব্যবসার মাত্র ১০ শতাংশ লিজিং খাতে বিনিয়োগ হয়। তাই লিজিং খাতের পরিবর্তে এটাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি দিতে হবে। নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনেও কথাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
এদিকে নানা অনিয়মের কারণে আমানতকারীদের আস্থা হারিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরা তাদের আমানত তুলে নিচ্ছে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ কমছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের মার্চে প্রান্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে প্রান্তিকে তা নেমে এসেছে ৪৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায়।
দেশে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬টির চেয়ারম্যান-এমডিদের অনিয়মের কারণে একেবারে সর্বস্বান্ত। পিপলস লিজিংয়ের বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স বন্ধের উপক্রম। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এমডি হিসেবে দায়িত্বপালন করে দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার।
২০১৯ সালের সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ খাতের ১০ প্রতিষ্ঠান এখন সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে বা ‘রেড জোনে’ রয়েছে। চাপ সহনশীল (স্ট্রেস টেস্টিং) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই জোনে ফেলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাকিগুলোর অবস্থাই নাজুক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা জানার জন্য কয়েকটি সূচকের ওপর বিশেষ পদ্ধতিতে নিরীক্ষা চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকি, ঋণঝুঁকি, সম্পত্তির (ইকুইটি) মূল্যজনিত ঝুঁকি ও তারল্য অভিঘাত এ চার ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়া হয়। নিরীক্ষার ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ভালোগুলোকে গ্রিন জোন, ভালোর চেয়ে একটু খারাপ অবস্থায় থাকা ইয়েলো জোন এবং চরম খারাপ অবস্থায় থাকাগুলোকে রেড জোনে ভাগ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।