পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা কৃষকের মাথায় ভাঁজ (বিদ্যুৎ) পড়ার উপক্রম। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশেই ইরি-বোরো রোপণের কাজ চলছে। ইরি-বোরো আবাদে সেচের পানির কোনো বিকল্প নেই। আবাদ নিশ্চিত করতে কৃষক সেচের জন্য সর্বোচ্চ অর্থ ও শক্তি ব্যয় করে থাকে। গ্রামাঞ্চলের ক্ষেতে এখন রাতভর সেচ পাম্পের শব্দ শোনা যাচ্ছে। যার অধিকাংশই বিদ্যুৎনির্ভর।
গত কয়েক বছর ধরে ধানের বাম্পার ফলন হলেও মৌসুমের শুরুতে দাম না থাকায় কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। এবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে খরচ আরো বেড়ে যাবে। তাই ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত। এ কারণে কৃষকদের একটা অংশ ধানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
গত ১১ বছরের ৯ বার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। চলতি মাস থেকে গ্রাহককে ইউনিট প্রতি দাম বেশি দিতে হবে ৩৬ পয়সা। অর্থাৎ খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫.৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা করে দিতে হবে। একদিকে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম চড়ার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ দিশেহারা। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানির কৃষকসহ সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এবার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে কৃষিখাতে। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, আয় বৃদ্ধির কোনো বালাই নেই, নানাভাবে বাড়ছে শুধু ব্যয়। এ কারণে সংসারে আয়-ব্যয়ে তাল মেলাতে পারছেন না তারা।
জানা গেছে, সারাদেশে বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৮৬২টি সেচ সংযোগ রয়েছে। এসব সেচ সংযোগের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক। বাড়তি বিলের বোঝা টানতে হবে এদেরকেই।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবে বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নয় বরং সমন্বয় করা হয়েছে। এটাকে কোনোভাবেই মূল্যবৃদ্ধি বলা যাবে না। দামের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। তবে মূল্য বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এখনো প্রায় দেড় কোটি গ্রাহক পাইপ লাইনে রয়েছে। আর কম মূল্যে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে কৃষির সেচ কাজে।
দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি অতিদরিদ্র মানুষ। ৮ কোটি নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। ৪-৫ কোটি মধ্যবিত্ত আর বাকি ১ কোটি মানুষ উচ্চবিত্ত। একসঙ্গে বিদ্যুৎ-পানির দাম বৃদ্ধির কারণে ওই ১ কোটির হয়তো তেমন কোনো সমস্যা হবে না, কিন্তু চরম বিপাকে পড়তে হবে বাকি ১৬ কোটি মানুষকে। এর মধ্যে আবার যে সাড়ে ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হওয়ার তাদের তো এখন টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়বে। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ধনীদের শিল্প-কারখানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর মাফ হয় কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক এবং গরিবের বিল মাফ করা হয় না।
সব মিলে ধনীর বিদ্যুৎ বিল এখন গরিবের ঘাড়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। যেকোনো জিনসের দাম বাড়লে সবার আগে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় হতদরিদ্র মানুষগুলো। অথচ ওই যে এক কোটি ধনী লোক যারা আছে, তাদের মধ্যে অনেকেই আছে ব্যাংক লুটেরা, ঋণখেলাপিসহ সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা নেয়া। অথচ সরকার ১৬ কোটি মানুষকেই বারবার কষ্ট দিচ্ছে ওই এক কোটিকে সুবিধা দিতে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে সরকারকে সাধারণ মানুষের বিষয়টি ভাবা উচিৎ ছিল।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার কারণে কৃষিতে প্রভাব পড়বে। এখন শুরু হয়েছে ইরি-বোরো চাষ। এ সময় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা ঠিক হয়নি।
এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিশেষ সংবাদদাতা জানান, এমনিতেই অব্যাহতভাবে ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া এবং অনেকক্ষেত্রে লোকসানের পাল্লা ভারি হওয়ায় কৃষকদের ধান উৎপাদনে আগ্রহ কম ছিল গত কয়েকটি মৌসুমে। এবার বোরো মৌসুমে দারুণ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে। কৃষকরা মনে করছেন, সেচনির্ভর বোরো উৎপাদন খরচ এবার আরো বেড়ে যাবে। এই চিত্র খাদ্য উৎপাদনে সারপ্লাস অঞ্চল দক্ষিণ-পশ্চিমের।
যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ এই অঞ্চলের ১০ জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ২৬৯ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। যশোরের শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের শিববাস গ্রামের কৃষক আলমগীর মোল্লা জানান, ধানের দাম পাই না, লোকসান হয়, উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, তার উপর বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, কৃষকরা ধান আবাদ কমিয়ে দিচ্ছে এবার। তার কথা, সব মাঠেই কমবেশি কমছে ধানের আবাদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি স্বীকার করে বলেছে, আমরাও কৃষকদের বোরো আবাদ কমিয়ে অন্য ফসল আবাদের পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ এক কেজি ধান উৎপাদনে ৩ হাজার ৫শ’ লিটার মাটিরতলার পানি খরচ হয়।
দিনাজপুর অফিস জানায়, এবার দিনাজপুর জেলাতেই এক লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
ইরি-বোরো আবাদে সেচের পানির কোনো বিকল্প নেই। আবাদ নিশ্চিত করতে কৃষক সেচের জন্য সর্বোচ্চ অর্থ ও শক্তি ব্যায় করে থাকে। গ্রামাঞ্চলের ক্ষেতে এখন রাতভর সেচ পাম্পের শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। যার অধিকাংশই বিদ্যুৎনির্ভর। গত কয়েক বছর ধরে ধানের বাম্পার ফলন হলেও মৌসুমের শুরুতে দাম না থাকায় কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। এবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে খরচ আরো বেড়ে যাবে। তাই ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ কোতয়ালীর খানপুর এলাকার কৃষক আবদুল জব্বার জানান, কেবলমাত্র বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে বিঘা প্রতি খরচ দেড় হাজার টাকা বেড়ে যাবে। তার মতে, কৃষির সেচের সাথে সাধারণ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের এক করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ইরি-বোরো’র মওসুম আসলে আমরা ট্রান্সফরমার তুলি এবং সংযোগ লাগাই। আবাদ শেষ হওয়া মাত্র বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে নিয়ে ট্রান্সফরমার নামিয়ে রাখি। এখন যখন বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে পানির পাম্প চালু করেছি। আর তখনই দাম বৃদ্ধি পেল। যার পুরো ধাক্কাই আসবে কৃষকের উপর। তার মতে সেচের বিদ্যুৎমূল্য আলাদাভাবে কম করা জরুরি। তা না হলে আগামীতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বছরের শুরুতেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে হোঁচট খাবে কৃষি ও শিল্প সেক্টর। বিশেষ করে বোরো মওসুমে সেচের পানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় হতাশ বগুড়ার বোরো চাষিরা। এমনিতেই বগুড়া অঞ্চলে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বেড়েছে পানির খরচ। বিঘা পরিমাণে বোরোর জমিতে পানি সেচের জন্য পানির বিল দিতে হয় ৮শ’ টাকা। এখন বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে সেচ স্কিমগুলোর মালিকরা বিঘা প্রতি সেচ খরচ ধরবে হাজার টাকার ওপরে। এই মূল্য বৃদ্ধিতে নিরুৎসাহিত হবে বোরো ধানের চাষ বলে জানিয়েছে ক্ষুদ্র মাঝারি ও প্রান্তিক চাষিরা।
এদিকে, চালকল মালিকরাও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে চিন্তিত চালকল মালিকরা। কেননা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে এখন আর আগের দরে চাল সরবরাহ করা সম্ভব হবে না ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো চাষাবাদ একেবারে শেষ পর্যায়ে। শুরুর দিকে লাগানো ক্ষেতগুলোয় চলছে পরিচর্যা। একদিকে তাপমাত্রা বাড়ছে। চাহিদা বাড়ছে সেচের। বোরো আবাদ পুরো সেচনির্ভর ফসল। বীজ চারা তৈরী থেকে ধান হওয়া পর্যন্ত সব সময় লাগে সেচ। আর সেচ মানে গভীর নলকূপ দিয়ে নিচ থেকে পানি তোলা। যতদিন যাবে আবহাওয়া ততই তেঁতে উঠবে। ফসল বাঁচাতে জমিতে পানি জমিয়ে রাখতে হবে। সেচ নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজন বিদ্যুৎ সরবরাহ। এদিকে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকের কপালে। কারণ সেচের ভাড়াও বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে উৎপাদন খরচে। শুধু বোরো নয়, সব আবাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। আরো সংকটের মুখে পড়বে কৃষক। তারা বলছেন অন্তত পক্ষে সেচের পানি বিদ্যুতের দাম কম রাখা হোক। সেচের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে। আর তাতে করে কৃষক চাষাবাদে আগ্রহ হারাবে। যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক কৃষির ব্যবস্থাপনায়।
এবার বরেন্দ্র অঞ্চলের চার জেলা রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ আটচল্লিশ হাজার চারশ’ দশ হেক্টর জমিতে।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালী অঞ্চলে এখন ইরি বোরো চাষ মৌসুম চলছে। বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। চাষাবাদ খরচের সঙ্গে উৎপাদিত ধানের মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকায় কৃষকরা প্রতিনিয়ত লোকসান গুণছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা আরেকবার হোঁচট খেয়েছে।
ইরি বোরো চাষাবাদে বৈদ্যুতিক সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ হয়। কিন্তু হঠাৎ করে আরেকবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়েছে। জানতে চাইলে কয়েকজন কৃষক ইনকিলাবকে জানান, গত এক দশক যাবত ইরি বোরো ও আমন চাষে কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ চাষাবাদে ব্যয়ের সঙ্গে উৎপাদিত ফসলের মূল্যে বিরাট ফারাক রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে বাধ্য হয়ে চাষাবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। উল্লেখ্য, নোয়াখালী অঞ্চল কৃষিনির্ভর হিসেবে বিশেষ পরিচিত রয়েছে। বিদ্যুতের আরেকদফা মূল্য বৃদ্ধির কারণে এখানকার হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।