পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : বিগত প্রায় দু’সপ্তাহ যাবত থেমে থেমে বিরূপ আবহাওয়া। ঘন ঘন সাগর উত্তাল, প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার, ভারী বর্ষণ, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ায় সতর্ক সংকেত। এখন আষাঢ় মাস চলছে। বৈরী আবহাওয়ায় বন্দর ও উপকূলে ৩নং সতর্ক সংকেত থাকায় এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন (৬ জুলাই) পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ব্যাপকমাত্রায় ব্যাহত হয়। তবে ঈদের দিন থেকে আবহাওয়া ফের স্বাভাবিক হওয়ায় বন্দর-উপকূলে সংকেত তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই এই ঈদে লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম। ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটিছাটা মিলিয়ে গত ১ জুলাই থেকে একটানা ৯ দিনের দীর্ঘ অবকাশ। এ সময় বন্দরে ও বেসরকারি আইসিডিগুলোতে পণ্যসামগ্রী বা কন্টেইনারের জট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। আজ (রোববার) থেকে বন্দর-শিপিং-কাস্টমস সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো খুলতে যাচ্ছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান খুলতে পারে আংশিকভাবে। কাজের গতি স্থবির হয়ে থাকবে আরও কিছুদিন ঈদের আমেজের কারণে।
অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, টানা ৯ দিনের ঈদের ছুটির সময় বন্দরে স্বাভাবিক কাজ বজায় না থাকলেও ব্যাপক কার্গোজট কিংবা জাহাজের জট সমস্যার মতো পরিস্থিতি তৈরির আশংকা নেই। প্রতিদিন বন্দরে গড়ে ১ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি করা হচ্ছে এবং তা বজায় থাকবে। গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের মজুদ স্থিতি ছিল ২৯ হাজার টিইইউএস কন্টেইনারের। বন্দরে কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৩০ হাজার ৮৮৬ টিইইউএস কন্টেইনার। বন্দরে অবস্থানরত কার্যোপযোগী জাহাজের সংখ্যা হচ্ছে ৩৬টি। এর মধ্যে বর্তমানে কাজ চলছে ২২টি জাহাজে। কন্টেইনার জাহাজ রয়েছে ৪টি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আরও প্রায় ২৫টি জাহাজ আমদানি পণ্যসামগ্রী নিয়ে ভিড়ার কথা রয়েছে। রফতানিমুখী পণ্য পরিবহনের কথা ১৬টি জাহাজের।
এদিকে একটানা ছুটির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে এবং বন্দর-শিপিং নির্ভর কাস্টমসসহ শিপিং প্রতিষ্ঠানসমূহে ঈদের আগে পবিত্র লাইলাতুল কদরের দিন থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্মে ভাটা পড়েছে। বন্দর পুরোদমে চালুর ঘোষণা থাকলেও বন্দর, বন্দর-নির্ভর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ফাঁকা রয়েছে। সাধারণ বন্দর ডক ও মার্চেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীরা অনেকে নিজেদের গ্রামের বাড়িঘরে ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য চলে গেছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে কন্টেইনার জটসহ তীব্র কার্গো জটের মুখে পড়ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। আমদানিকৃত ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী ভর্তি ও খালি কন্টেইনারসহ সাধারণ খোলা (ব্রেক বাল্ক) কন্টেইনারের জট সৃষ্টি হচ্ছে দিনের পর দিন। এতে করে বন্দরে জাহাজের জট সৃষ্টিরও আশংকা রয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারি আইসিডিসমূহেও (অফডক) কন্টেইনার তথা পণ্যজট দেখা দিয়েছে। অফডকে কাজ চলছে খুবই কম হারে। এতে করে জট ক্রমেই বেসামাল আকার ধারণ করতে পারে। এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমদানি ও রফতানিকারক, শিপার্স, ব্যবসায়ী তথা স্টেকহোল্ডাররাও বেশ চিন্তিত রয়েছে।
এদিকে টানা ছুটির মধ্যে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার ইয়ার্ড, শেডের ভেতর থেকে কোন না কোন ধরনের আমদানি বা রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী চুরি ও লোপাটের আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠেছে সংশ্লিষ্ট কনসাইনি, ব্যবসায়ী, আমদানি-রফতানিকারক ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মাঝে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন। তবে বন্দর নিরাপত্তা বিভাগ আশ্বস্ত করেছে, বন্দরে নিরাপত্তা টহল আগের তুলনায় বেশিমাত্রায় জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এতে করে পণ্য চুরি বা লোপাটের আশংকা নেই। বিশেষ করে গুলশান সহিংসতার পর থেকেই দেশের অন্যতম কেপিআই চট্টগ্রাম প্রধান বন্দরকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আনা হয়েছে। গতকালও (শনিবার) বন্দরে ও আশপাশে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি ব্যবস্থা চোখে পড়ে।
টানা ছুটিতে গতকালসহ ৯দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে স্বাভাবিক কাজের গতি থমকে থাকে। কাজ চলছে সীমিতভাবে ও ধীর গতিতে। আজও একই অবস্থা থাকবে বলে শিপিং সূত্র জানায়। এ অবস্থায় কন্টেইনারের আরও জট সৃষ্টি হতে পারে। কেননা জাহাজবহর থেকে কন্টেইনারজাত আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রী খালাস ও ডেলিভারি পরিবহন এবং রফতানি কন্টেইনার জাহাজীকরণ কার্যক্রম চলছে স্বাভাবিকের তুলনায় খুব ধীর গতিতে। বন্দরে জাহাজ ও কার্গোর দ্বিমুখী জট সমস্যার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরে দুই ঈদের দুই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শুধুই ৮ ঘন্টা ধরে সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের একযোগে ছুটির কারণে জাহাজ ও পণ্যসামগ্রীর হ্যান্ডলিং বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া তিন শিফটে ২৪ ঘন্টা বন্দর সার্বক্ষণিক চালু রাখার যথারীতি প্রস্তুতি থাকে বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কেবল বন্দর খোলা রেখেই পুরোদমে কাজ সচল করা যায় না। আমদানি-রফতানিকারক, কনসাইনিদের আগ্রহ থাকে এ সময়ে কম। বন্দর-নির্ভর কাস্টম হাউস, ব্যাংক-বীমা, শিপিং ও সিএন্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে ছুটি থাকায় বন্দর কার্যক্রমে অনেকটাই ভাটা পড়ে। আগের ঈদসমূহেও তাই দেখা গেছে। এ কারণে বন্দরে সার্বিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস, রফতানি শিপমেন্টে (জাহাজীকরণ) লিডটাইম ও জাহাজের গড় অবস্থানকাল বৃদ্ধিসহ বন্দরের দক্ষতা, সেবার মান ও গতিশীলতার সূচকে অবনতি ঘটতে পারে এমনটি আশংকা ব্যক্ত করা হচ্ছে পোর্ট-শিপিং সার্কেল থেকে।
গত ১ জুলাই থেকে সাপ্তাহিক ছুটির সাথে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি যোগ হয়ে মাঝখানে একদিন ছাড়া টানা ৯ দিনের ছুটিতে বন্দর ও শিপিং কার্যক্রম ধীর গতির দিকে ধাবিত হয়েছে। জাহাজের লোডিং আন-লোডিং, ডেলিভারি পরিবহন, বেসরকারি আইসিডিগুলোতে (অফডক) কন্টেইনার স্টাফিং আন-স্টাফিংয়ের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। অধিকাংশ শ্রমিক-কর্মচারী ঈদের ছুটিতে গিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে আসেননি। এ কারণে গতকালও বন্দর ও বহির্নোঙ্গরে কাজের গতি স্থবির হয়ে পড়ে। কন্টেইনারসহ খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রী (ব্রেক বাল্ক কার্গো) খালাস ও ডেলিভারি দেয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের পুরোদমে প্রস্তুতি থাকলেও আমদানি-রফতানিকারক, ব্যবসায়ী, কনসাইনি, শিপিং ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের ঈদের আগে ও পরে নিজেদের ব্যস্ততায় বন্দরে পড়ে থাকা মালামাল ছাড় করানোর ব্যাপারে তেমন আগ্রহ এ মুহূর্তে নেই।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ঈদের ছুটি থাকলেও বন্দরে কাজকর্ম বন্ধ থাকে না। আমদানি পণ্য ডেলিভারি এবং রফতানি শিপমেন্টের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি রেডি। কিন্তু যারা বন্দরের স্টেকহোল্ডার ও বন্দর-নির্ভর প্রতিষ্ঠান তাদের ছুটিছাটার কারণে মালামাল আনা-নেয়া কম হতে পারে। সচরাচর দুই ঈদের ছুটিতে মালামাল ডেলিভারি নিয়ে যেতে ব্যবসায়ী, কনসাইনি, সিএন্ডএফ এজেন্টদের আগ্রহ কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে বর্তমানে ইয়ার্ডে কন্টেইনার মজুদ রয়েছে ধারণক্ষমতার তুলনায় নীচে। এতে করে জটের কোন আশংকা নেই। বন্দরে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম, কাজের গতি ও দক্ষতার অর্জিত মান যেকোন মূল্যে বজায় রাখা হবে। বন্দরে নিবিড় নিরাপত্তা তদারকি অব্যাহত রয়েছে। এরফলে ঈদের ছুটি বা এর পরেও বন্দরের ভেতর থেকে পণ্যসামগ্রী চুরি, লোপাট এমনকি অতীতের মতো আস্ত কন্টেইনার গায়েব করার মতো অঘটনের শঙ্কার কোন কারণ নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, দেশের প্রধান পাইকারি ও ইন্ডেন্টিং বাজার ‘সওদাগরী পাড়া’ খ্যাত চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ঈদের দীর্ঘ অবকাশে পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। নগরীর শপিং মল, বিপণীকেন্দ্র, অভিজাত রেস্তোরাগুলোও বন্ধ। বন্দরনগরী বলতে গেলে খাঁ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।