Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্য সেবা : রোগীদের ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল ঃ দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মানা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। ঈদের ছুটিতেও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পৃথক কন্ট্রোল রুম স্থাপণসহ হাসপাতালগুলোর পৃৃথক ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা কাজে আসেনি। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
ছুটি চলাকালীন সময় (১ থেকে ৯ জুলাই) দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সকল সরকারি হাসপাতল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে জরুরি ও ইনডোর সেবা যথানিয়মে সার্বক্ষণিক চালু রাখতে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। গত ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে শব-ই-কদরের পরের দিন এবং ঈদের দিনের জন্য এই আদেশ বলবৎ থাকবে না বলে আগেই জানানো হয়েছে।
কিন্তু গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কট্রোল রুমের ৯৫৪০৭২১ নম্বরে একাধিক বার ফোন দিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। একই দিনে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে কল দিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেকের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে স্বাস্থ্য অধিফতরের কন্ট্রোল রুমের ৯৫৪০৭২১ নম্বরে ফোন করলে আব্দুল কাদের নামের একজন ফোন ধরেন। তবে তিনি কন্ট্রোল রুম প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডা. আয়শার সেখানে থাকার কথা। কিন্তু ঈদের ব্যস্ততার কারণে তিনি আসতে পারেননি।  
রাজধানীর বিভিন্ন হাসাপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতালের অফিস কক্ষ ফাঁকা। চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় চরম দুর্ভোগে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা। বিশেষ করে সরকারি হাসাপতালের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আর মুমূর্ষু রোগীদের অবস্থা আরো আশংকাজনক। প্রতিবারের মতো এবারও রোগীদের অভিযোগ, ছুটির সময় ডিউটি নার্স আর ওয়ার্ড বয়রা রোগীদের কোন কথাই শুনতে চায় না। চিকিৎসক সংকটের পরও যারা থাকছেন তারাও দায়িত্বে ফাঁকি দেন।
শনিবার সকালে জাতীয় হƒদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের অন্যতম প্রধান অংশ কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাবে তালা ঝুলছে। অথচ নিয়মানুযায়ী এটি খোলা থাকার কথা ছিল। এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স, আয়া, টেকনোলজিস্ট এবং চিকিৎসকদেরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুর রহমানকে হাসপাতালে দেখা গেলেও অন্য কাউকেই হাসপাতালে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন হাসপাতাল পরিচালক ঈদের ছুটি সংক্রান্ত নোটিশ দেন। সেখানে ঈদের ছুটির ৫ ও ৮ তারিখ বর্হিবিভাগ খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ৯ তারিখ থেকে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু থাকার কথা। শুধুমাত্র প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা রোববার থেকে অফিস করবেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানান গেছে, হাসপাতালে ৪টি কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব মেশিন রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর সিটিএনজিওগ্রাম করা হয়। এবং অন্ততঃ ১০ থেকে ১৫ জন রোগীর হার্টে রিং বসানো হয়। কিন্তু শনিবার এই বিভাগ বন্ধ থাকায় শিশু রোগীসহ বেশকিছু রোগীকে এনজিওগ্রাম না করেই ফিরে যেতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. পীযূষ বিশ্বাস ইনকিলাবকে বলেন, হাসপাতালের রোস্টার অনুযায়ী (আজ) রোববার থেকে ক্যাথল্যাব কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। শনিবার যেসব রোগী ভর্তি হবেন রোববার থেকে তাদের এনজিওগ্রাম করা হবে। তাছাড়া ক্যাথল্যাব পরিচালনার জন্য প্রস্তুতিরও প্রয়োজন হয়। শিশু রোগী ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিশুটির হার্টে চারটি সমস্যা রয়েছে। তবে এই শিশুটির এনজিওগ্রাম করা যাবে না বলেও জানান তিনি। এছাড়া বাকী সব কিছু নিয়মানুযায়ী চলছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রণালয়ের অদেশ অনুযায়ী শব-ই-কদরের পর দিন এবং ঈদের দিন ছাড়া অন্যদিনে সকল সরকারি হাসপাতল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে জরুরি ও ইনডোর সেবা যথানিয়মে সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। কিন্তু ঈদের পর দিন জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল ও পূর্নবাসন কেন্দ্রের জরুরি বিভাগ তো দূরের কথা প্রধান ফটকও বন্ধ ছিল বলে জানান দূর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত আব্দুর রহমান।
রাজধানীর মুগদা ৫০০ শয্যার সরকারি হাসপাতালেও একই পরিস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এ হাসপাতালটিতে ঈদের পর দিন শুক্রবার তেমন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জানান, ভেতরে কথা বলার মতো কেউ নেই। কয়েকজন আয়াকে গুল্প করতে দেখা গেছে। তারা জানান দায়িত্বরত নার্স ও ওয়ার্ড মাস্টার আসেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্ডবয় বলেন, হাসপাতলে ১২ জন রোগী আছেন। একজন নার্স ও একজন ডাক্তার আছেন।
ঈদের ছুটিতেও দেশের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা অনেকটা ছিল স্বাভাবিক। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে রোগীরা আসছে, চিকিৎসা চলছে। তবে চিকিৎসক ও নার্স তুলনামূলক কম। ঈদের আগের দিন দুপুরে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান। এসময় তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, ঈদের ছুটিতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতেল থেকে ঈদের আগেই সংশ্লিষ্টরা রোগীদের বাড়ি যেতে উদ্ধুদ্ধ করেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন রোগীর স্বজন। নুরুল ইসলাম নয়ন নামের এক রোগীর স্বজন জানান, তার বাবা হাসপাতলের রিসপারেটরি মেডিসিন বিভাগে ভর্তি ছিলেন। তার চিকিৎসা শেষ না হলেও কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকরা তাকে বাড়ি যেতে চাপ দেন। তারা বলেন, ছুটিতে এখানে থাকলে কোন চিকিৎসা পাবেন না। কোন ডাক্তার আসবে না। শুধু শুধু ভোগান্তিতে পড়বেন। এমন অভিযোগ করেন আরেফিন নামের আরেকজন। তিনি বলেন, ৩০ জুন তার আত্মীয়কে নিয়ে সেখানে গেলে রোগীর ভর্তি প্রয়োজন বলেন জানান বর্হিবিভাগের চিকিৎসক। কিন্তু বিভাগ থেকে ভর্তি না নিয়ে ঈদের পর আসতে বলা হয়।
জানা গেছে, টানা নয় দিনের সরকারি ছুটির কারণে সবধরনের হাসপাতালেই চিকিৎসক সঙ্কট তৈরি হয়। রাজধানীর হাসপাতালগুলো পৃথক ব্যবস্থা রাখা হলেও সবকিছু সীমিত পরিসরে হওয়ায় ভর্তি রোগীদের একটি বড় অংশ হাসপাতাল ছাড়েন। এমনকি চিকিৎসকদের সাথে যারা সেবার বিষয়ে পরামর্শ নিয়েছেন তাদেরকে ঈদের পরে আসতে বলা হয়েছে। বেসকারি হাসপাতালেও এই চিত্র লক্ষ করা গেছে। ইডেন কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানী খান জানান, তাকে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়েছেন। ঈদের ছুটিতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রীন লাইফ হাসপাতাল, ল্যাব-এইড হাসপাতালে ঘুরেও এসব পরীক্ষা পারেননি। কারণ হিসেবে তাকে জানানো হয়েছে ঈদের ছুটির কারণে কোন হাসপাতালেই প্রয়োজনীয় টেকনলোজিস্ট নেই।   
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, তিনি নিজেই ঈদের আগেরদিন ও পরদিনসহ অন্যান্য ছুটির দিনে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর এবার ইর্মাজেন্সি সেবার ওপর জোর দিয়েছে। সব হাসপাতালেই ইর্মাজেন্সি সেবা চালু ছিল। তিনি বলেন, এখনো এ ধরনের কোন অভিযোগ আসেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ