Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যর্থ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়া উচিত : খালেদা জিয়া

শোলাকিয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৬ পিএম, ৯ জুলাই, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, অবৈধ সরকার প্রথম থেকেই ব্যর্থ। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় শেখ হাসিনা আরো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের মানুষ এসব দেখতে চায় না।
উচিত হবে সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। গুলশানের হামলার ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে চার রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। শোলাকিয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকার আজ পর্যন্ত কোনো ঘটনা ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারেনি। ঢাকা শহরসহ অন্যত্র যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে জড়িত কোনো অপরাধীকে তারা ধরতে পারেনি। কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। তিনি বলেন, আমরা অনেক আগেই বলেছি, এই সরকার প্রথম থেকেই ব্যর্থ। এখন ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের উচিত যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরে যাওয়া। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
এসময় গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জিম্মিদের উদ্ধারে সরকার ‘বিলম্বে অভিযান পরিচালনা’ করেছে অভিযোগ করে তার কারণও জানতে চান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ভোরে কেন অভিযান হলো? টেলিভিশনে যা দেখলাম, পুলিশের বড় বড় অনেক কিছু দেখালো। র‌্যাব ছিল, কেউই কিছুই করতে পারেনি। শেষে আর্মি কমান্ডোকে এনেছে ভোরে। তারা যখন গেছে, তখন তো মরে গেছে, তার আগে সব ঘটনা শেষ হয়ে  গেছে। এত দেরি কেন? এত দেরিতে কেন সে কাজটি করা হলো? এটা মানুষের প্রশ্ন।
কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের কাছে বিস্ফোরণ এবং গুলির ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজকে  শোলাকিয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।
ঈদের দিন দুপুর ১২টায় শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঈদের কুশল বিনিময়ের এই অনুষ্ঠান শুরু হয়, যাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও ছিলেন।
গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশীসহ ২০ জন নাগরিক হত্যার প্রসঙ্গ তুলে বেগম খালেদা জিয়া আরো বলেন, আজকে দেশের অবস্থা মোটেই ভালো নয়, অত্যন্ত খারাপ। প্রতিটি মানুষ আজকে ভয়ের মধ্যে, আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আপনারা লক্ষ করেছেন, গুলশানের ঘটনার পর সারা ঢাকা শহর থমথমে হয়ে গিয়েছিল, চলাচলের গাড়ি-ঘোড়া, মানুষজন কিছুই দেখা যায়নি; ভুতুড়ে নগরীর মতো হয়েছিল।
নজিরবিহীন ওই জঙ্গি হামলার পেছনে গুলশানের কূটনীতিকপাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকার অভিযোগ করে তিনি বলেন, সেদিন যে গুলশানের ঘটনাটি ঘটল, সেটি ডিপ্লোমেটিক এরিয়া, প্রটেকটিভ হওয়া উচিত। যে রেস্টুরেন্টে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে বিদেশীরাই যায়। আমরা সাধারণ মানুষ না জানলেও সরকার তো তা জানে। কাজেই সে এলাকায় আরো বেশি নিরাপত্তা থাকা উচিত ছিল।
এসময় উগ্রবাদ মোকাবিলায় আবারো জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সকলে মিলে দেশের ওপর যে একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করা দরকার। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তারা (সরকার) দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ও সান্ত¦না দেওার বদলে যা ইচ্ছে কথাবার্তা বলছে। তারা শুধু ইচ্ছামতো ব্লেইম দেয়। এখন ব্লেইম-গেইম চলছে।
সত্যিকারের অপরাধীদের না ধরার অভিযোগ করে বিএনপি  চেয়ারপারসন বলেন, বরং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের এমনভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে যে প্রকৃৃত অপরাধীরা অপরাধ করেই চলেছে, তারা পার  পেয়ে যাচ্ছে।
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিডিআরের ঘটনা থেকে এসব ঘটনার সূত্রপাত। ৫৭ জন অফিসার মারা গেছে, সেটাকে ধামাচাপা দেয়া হলো। তখনই যদি ওই ঘটনাকে শক্তভাবে দমন করা যেত, তাহলে আজকে দেশে এই অবস্থা করার কেউ সাহস পেত না। এখন যে ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে, যারা আছে, নিজেদেরকে সরকার দাবি করে, তারা যদি শক্তভাবে না ধরে, তাহলে এ ঘটনাগুলো থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশে গুলশানের মতো আরো ঘটনা ঘটবে বলে ফেসবুক-টুইটারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসছে জানিয়ে সেভাবে সরকারের প্রস্তুতি আছে কি নাÑ এগুলোকে  মোকাবিলা করার, তা দেখা দরকার। সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশকে দেশের মানুষকে নির্যাতন করার কাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ওই বাহিনী এখন ‘চাঁদাবাজি ও গ্রেফতার বাণিজ্যে’ ব্যস্ত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন গুলশানে কেন তারা সন্ত্রাসী ঘটনা দমন করতে পারল না? পুলিশ ও র‌্যাব ছিল, কেউ কিছু করতে পারল না কেন?
মুসলিম উম্মাসহ দেশবাসী ও নেতা-কর্মীদের ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ঈদের দিন আমার আহ্বান থাকবে, আমরা এসব ঘটনা দেখতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, ন্যায়বিচার চায়, বাকস্বাধীনতা চায়, যেগুলো আজকে কেড়ে  নেয়া হয়েছে। এজন্য আজকের এ অবস্থা। এর অবসান হওয়া দরকার।
এজন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে বা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকে, তাহলে দেশে শান্তি আসতে পারে না,  দেশ সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে না।
দেশের ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে জড়িতদের ধরা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
অনুষ্ঠানে প্রথমে কূটনীতিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বানির্কাট, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি আবর, জাপানের রাষ্ট্রদূত মাশাতো ওয়াতানাবে, ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদনসহ ২২টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময় তার পাশে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। পরে কূটনীতিকদের  সেমাই-জর্দাসহ বিভিন্ন মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
কূটনীতিকদের পর শিক্ষক এমাজউদ্দীন আহমদ, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সদরুল আমিন, জেড এ তাহমিদা বেগম, সুকোমল বড়ুয়া, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের আ ন হ আখতার  হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আব্দুুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এবং সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদসহ শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর মজিবুর রহমান, মশিউল আলম, বিকল্প ধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নান, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ ও বিজেপির সালাহউদ্দিন প্রকাশ।
বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুুল মান্নান, শাহজাহান ওমর, রুহুল আলম চৌধুরী, আব্দুুল কাইয়ুম, আমানুল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, গিয়াস কাদের চৌধুরী,  সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান রিপন, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, সানাউল্লাহ মিয়া, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহ আবু জাফর, এস এম ফজলুল হক, শামা ওবায়েদ, আব্দুস সালাম আজাদ, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আনোয়ার হোসেইন, সাইফুল আলম নিরব, আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসানসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও পর্যায়ক্রমে দলের  চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শহীদ জিয়া ও কোকোর কবর জিয়ারত
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিয়ম শেষে খালেদা জিয়া প্রথমে শেরেবাংলা নগরে স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও পরে বনানীতে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করেন।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ  হোসেন ও মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন গুলশানের ভাড়াবাসা ‘ফিরোজায়’ যান। ঈদে লন্ডন থেকে মাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সেখানে চিকিৎসারত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।



 

Show all comments
  • Sazid Ahmad ১০ জুলাই, ২০১৬, ২:৪১ পিএম says : 0
    ঠিক বলেছেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যর্থ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়া উচিত : খালেদা জিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ