পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্র্রিয় মানুষের দেশ, এখানে শান্তি নিশ্চিত করতে যা কিছু করণীয়, তা-ই করবে তার সরকার। তিনি বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী ও জঙ্গির স্থান হবে না। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসে ইবাদতের সময় যারা হত্যার মিশনে যায়, তাদের চেয়ে জঘন্য অপরাধী আর কেউ হতে পারে না। প্র্রশ্ন তুলে প্র্রধানমন্ত্রী বলেন, নামাজ না পড়ে মানুষ খুন করা কোন ধরনের ইসলাম? ঈদের জামাত শুরুর আগে যারা হামলা চালায়, তারা কি আদৌ মুসলমান?’ তিনি আরও বলেন, ইসলাম কোনোভাবেই নিরপরাধ ও নিরীহ মানুষকে হত্যা মেনে নেয় না। এমনকি বিধর্মীকেও খুন করার অধিকার ইসলাম দেয়নি।
সন্তানদের কেউ যদি বিপথগামী হয়, তাহলে পুুলিশকে বিষয়টি অবহিত করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। যারা নিখোঁজ রয়েছে, তাদের কথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ছাড়াও রেডিও, টেলিভিশনসহ সব গণমাধ্যমে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিপথগামী তরুণ-যুবকেরা যা করছে, তা ধর্মের পথ না, মানবতার পথ না, ঘৃণ্য অপরাধের পথ। তাদের এই পথ পরিহার করতেই হবে। প্র্রধানমন্ত্রী বিপথগামীদের সমালোচনা করে বলেন, তারা শরিয়া আইন কায়েম করবে। মানুষের আইন চলবে না। তারা ফেসবুক ব্যবহার করছে, মোবাইল ব্যবহার করছেÑ এগুলো মানুষেরই তৈরি। মানুষের তৈরি আইন মানবেন না, আর মানুষের তৈরি করা জিনিস ব্যবহার করবে। মানুষের তৈরি করা অস্ত্র ব্যবহার করবে, আর মানুষের তৈরি আইন মানবে না। এটা কী জাতীয় কথা?
প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেন, যারা আধুনিক ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, তারা কেমন করে এই বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়তে পারে? আর যারা তরুণদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে, তাদের বিষয়েও তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বছর দু’য়েক আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে একটি বেসরিকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা এসব শিক্ষা দিচ্ছে, মরণের পথে ঠেলে দিচ্ছে, জাহান্নামের পথে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ বিষয়ে আরও সজাগ হওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের বলেন, বাবা-মা, ইউনিভার্সিটি-কলেজকে বলব, যারা মিসিং তাদের নাম, ফটো, তালিকা দিতে হবে। আমরা জেনেছি, বেশকিছু কলেজ ও ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা মিসিং। জিডি করে বসে থাকবেন না। তথ্য প্রকাশ করেন। ছবি দিন।
নিখোঁজ তরুণদের খোঁজ বের করতে সকল প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, টিভি, রেডিও, মাবাইল সব ব্যবহার করে আহ্বান জানানোর ব্যবস্থা আমরা করে দেব। ঘৃণ্য অপরাধের পথ ছেড়ে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসতে আহ্বান জানান। তাদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে যা লাগে সে ব্যবস্থা আমরা করতে পারব। পৃথিবীতে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ অতি অল্প সময়ে এখানে জঙ্গিদের খতম করতে পেরেছি।
জঙ্গিদের প্রতিহত করতে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে তাদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোথায় কে বিপথে যাচ্ছে, কে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, তার তথ্য সংগ্রহ করুন, ব্যবস্থা নিন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায় এই জঙ্গি বা সন্ত্রাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা
তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও সমালোচনা করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গুম নিয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট লিখেছে। এই গুম হওয়ার কথা লিখতে গিয়ে সরকারকে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে দায়ী করেছে। কিন্তু এখন দেখা গেল কি? এই যে ছেলেরা হারিয়ে গেছে, তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এই সংস্থাগুলো যে রিপোর্ট দিল, তা কিসের ভিত্তিতে দিল?
শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, তারা কেন এই রিপোর্ট দিতে পারেনি? এই ছেলেগুলো যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়ে গেছে, এই রিপোর্ট দিতে তারা ব্যর্থ হলো কেন? এই প্রশ্নটা আমার, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এই প্রশ্নটা সারা বিশ্বের কাছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ অনেক কথা ‘না বলে’ সঠিক তথ্য দিলে সরকার তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশে আরও জঙ্গি হামলার হুমকি দিয়ে যে ভিডিও আইএস প্রকাশ করেছে, তাতে সরকারের সমালোচনা থাকার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শুনলাম আমাদের সরকার নিয়ে কিছু কথা বলেছে। আমাদের সম্পর্কে, আমাদের সরকার সম্পর্কে কথা বলার, আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ওই জঙ্গি দল ধর্ম নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি করে’ ধর্মের ‘শত্রুতা করছে’ বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ইসলাম নিরীহ মানুষ হত্যার অধিকার দেয়নি। আমি তাদের বলব এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে। কোরআনে ‘শেষ বিচারের ভার আল্লাহর হাতে’ বলা থাকলেও এই জঙ্গিরা ‘নিজেরাই বিচারের দায়িত্ব’ নিয়ে নিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা নিজেদের খোদার চেয়েও শক্তিশালী ভাবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায় আমাদের সঙ্গে আছে। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবেও যদি কেউ এই জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয়, আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়কেই এর দায়িত্ব নিতে হবে যে, তাদের কীভাবে প্রতিহত করা যায়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে প্রধানমন্ত্রী সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠান শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে। পরে বিচারপতি ও কূটনীতিকদের সঙ্গেও তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের পর অতিথিদের আপ্যায়িত করা হয়।
নিহত-আহত পুলিশ সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গুলশানে রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের পরিবারকে এবং ওই ঘটনায় আহত ২৬ পুলিশ সদস্যকে ঈদ উপহার হিসেবে ৩২ লাখ টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার এবং আহত পুলিশ সদস্যের কাছে ঈদের উপহার তুলে দেন।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত পুলিশের দুই সদস্য গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন খানের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের কাছ থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা ঈদের পোশাক ও খেলনাসামগ্রী গ্রহণ করেন। আহত ২৬ পুলিশ সদস্যের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২০ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন খান নিহত হন। আহত হন আরও ২৬ পুলিশ সদস্য। জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত ওই অভিযানে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উপহারসহ প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ফুল, ফল এবং মিষ্টি পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবি রোড়ে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ এ বসবাসকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ তাদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপ্রিএস)-১ জাহাঙ্গীর আলম, এপ্রিএস-২ সাইফুজ্জামান শেখর এবং প্রটোকল অফিসার খুরশীদ উল আলম বিকেলে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এ সব সামগ্রী পৌছে দেন।
মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ এবং পহেলা বৈশাখসহ প্রতিটি অনুষ্ঠানে তাদেরকে স্মরণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা তাদের পুনর্বাসনের জন্য মোহাম্মদপুরে একটি বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ৮০টি পরিবার এই ভবনে বসবাস করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।