পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্যাংকলরিকে দায়ী করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে আমদানিকৃত পণ্য উত্তরবঙ্গ পাঠাতে হলে রাজধানীর ওপর দিয়েই যেতে হয়।
ভারি যানবাহন রাজধানী অতিক্রমের সময় যে চাপ সৃষ্টি করে তাতেই তৈরি হয় অনেক যানজট। এই যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হয় হাজার হাজার কর্মঘণ্টা। এতে চাপ পড়ে অর্থনীতির ওপর। দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে সড়কপথে যাতায়াত আরো সহজ করে তুলতে জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) ফোরলেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে দেশের চারটি প্রধান মহাসড়কের যানজট অনেকটাই কমবে। কমবে ভোগান্তি। গতি পাবে অর্থনীতি। কারণ যানজটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। অন্য একটি হিসাবে শুধু মাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ২৭৪ কোটি টাকা। অবশ্য এটি পুরনো হিসাব। বর্তমান হিসাবে এর পরিমান ৩শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আর যাতায়াতে সময় অপচয়ের কারণে যাত্রীদের ক্ষতি ১ হাজার কোটি টাকা। দুর্ঘটনা ও ভাঙা সড়কের কারণে যানবাহনের ক্ষতি ৫৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া যানজটে জ্বালানী অপচয় হয় ২ হাজার কোটি টাকা, পরিবেশগত ক্ষতি ১ হাজার কোটি, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ৩০০ কোটি ও অন্যান্য ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতি ৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। অবশ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল কিংবা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কম।
সম্প্রতি রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) ‘দি ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, রাজধানীতে যানজটের কারণে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।
সা¤প্রতিককালের গবেষণার ফলাফল অনুয়ায়ী, যানজটে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। নিঃসন্দেহে একটি দেশ বা শহরের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। বক্তারা আরও বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন লোক সংখ্যা বাড়ছে, বিদ্যমান যানবাহনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। তবে জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) ফোরলেন প্রকল্পের ছয়লেন বিশিষ্ট ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি উত্তরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সংযুক্ত করবে। এর বাইরে ভুলতায় ঢাকা-সিলেট ও ভোগরায় সংযোগ ঘটাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের। প্রায় চার হাজার কোটি টাকায় ব্যয়ে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিক প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২২ সালে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চায়নার বেসরকারী কোম্পানি সিচুয়ান রোড এ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ কর্পোরেশন লিমিটেড, শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড যৌথভাবে ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি স্বাক্ষর করে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের জন্য। পিপিপির আওতায় ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে। এই প্রকল্পের আর্থিক পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ইতিমধ্যে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এই সড়ক নির্মাণ হলে মদনপুর থেকে কড্ডা পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর বাইরে থেকে যেসব যানবাহন প্রতিদিন রাজধানীতে ঢোকে ও বেরিয়ে যায়, তাদের যদি ভিন্নপথে রাজধানী অতিক্রম করানো যেত, তাহলে যানজট সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যেত।
নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে গাজীপুরের কড্ডা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার বাইপাস সড়ককে চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতর চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন করে চীনের এসআরবিজি এবং বাংলাদেশি ইউডিসি ও এসইএলের সঙ্গে। প্রকল্পের আওতায় মদনপুর থেকে কড্ডা পর্যন্ত মূল এক্সপ্রেস সড়ক হবে চার লেনের। এর বাইরে সড়কের দুই পাশে থাকবে আরো দুটি লেন। প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই ব্যয় আরো বাড়তে পারে। এ প্রকল্পে সরকারের অংশগ্রহণ হচ্ছে ২৩০ কোটি টাকা। যা ২৫ বছরে পরিশোধ করবে সরকার। প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের ভোগড়া, মিরেরবাজার, বস্তুল, ধীরাশ্রম ও কাঞ্চন সেতুর আগে নির্মাণ করা হবে পাঁচটি ফ্লাইওভার। ২৫টি আন্ডারপাস। কাঞ্চনে শীতলক্ষ্যা নদীর চার লেনের সেতুসহ তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সবুজ উদ্দীন খান জানান, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে নির্মাণ কাজ শুরুর দিন থেকে চার বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের এ মেয়াদেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ২৫ বছর এটি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ওই সময়ের মধ্যে সড়কের টোল থেকে তারা নির্মাণ ব্যয় তুলে নেবে। এরপর সড়কটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেবে।
সূত্র আরো জানায়, এশিয়ান হাইওয়ে মানের সড়ক মূলত প্রাইমারি বা ধমনি সড়ক নামে পরিচিত। এগুলোয় প্রবেশ সংরক্ষিত থাকে, যাতে অযান্ত্রিক ও ধীরগতির যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে। স্থানীয় ধীরগতির ও অযান্ত্রিক (স্কুটার, সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেল) যানগুলোর জন্য পৃথক সড়ক (সার্ভিস রোড) থাকবে। প্রতি কিলোমিটার পরপর উল্লেখ থাকবে পরবর্তী জেলার নাম ও দূরত্ব। সড়কটি উত্তরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সংযুক্ত করবে। এর বাইরে ভুলতায় ঢাকা-সিলেট ও ভোগরায় সংযোগ ঘটাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আফসার এইচ উদ্দিন বলেন, এ প্রকল্প বাংলাদেশে জনসেবার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা এনে দেবে। এটি দেশের প্রথম প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, রাজধানীর যানজট কমাতে কাজ করবে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেস সড়ক। এই বাইপাস সড়ক নির্মিত হলে পণ্য নিয়ে ট্রাক এবং ট্যাংক-লরির মতো ভারি যানবাহন আর ঢাকায় ঢুকবে না। ফলে ভারি যানবাহন রাজধানী অতিক্রমের সময় যে চাপ সৃষ্টি করে তা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।