পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কাউকে অবহেলা করতে চাই না। মাদরাসা শিক্ষা আমরা সমন্বিত শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। চাকরি বা কাজ পেতে যে শিক্ষা দরকার হয় সে শিক্ষাটা তারা গ্রহণ করবে। মাদরাসায়ও মেধাবী শিক্ষার্থী আছে, তাদের কেন অবহেলা করব? তিনি বলেন, আমাদের কওমী মাদ্রাসাকেও আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওরায়ে হাদিসকে মাষ্টার্স সমমান দিয়েছি। কারণ, তাদেরকেও আমরা সমন্বিত শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। একই ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসতে চাই। দৈনন্দিন জীবনে কর্মক্ষেত্রে বা চাকরি পেতে যে শিক্ষার দরকার হয়, সে শিক্ষাটাও তারা (মাদ্রাসার শিক্ষার্থীগণ) গ্রহণ করবে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ বিতরণকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চেীধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর বাণী উদ্ধৃত করে শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী প্রজন্মের ভাগ্য শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করে। জাতির পিতার এ কথাটা আপনারা মনে রাখবেন। তারা (শিক্ষার্থীরা) যেন সেভাবেই শিক্ষা পায়। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধাবী। প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে তারা আরও মেধাবী হয়ে গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে দেশটা কীভাবে চলবে তার একটা পরিকল্পনা আমরা রেখে যাচ্ছি। আজকে যারা শিক্ষার্থী, আগামী দিনে তারাই দেশটাকে গড়ে তুলবে।
শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠছে এবং সেটা আরো বিকশিত হলে সেখানে আমাদের জনশক্তি লাগবেই। আমাদের জনসংখ্যাকে আমরা যদি কারিগরি, বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে সেইভাবে দক্ষ করে যদি গড়তে পারি তাহলে আমাদের কোন সমস্যাতো কোনদিন হবেই না বরং আমরা অন্য দেশকে সাহায্য করতে পারবো।
সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সেলক্ষ্যে একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা কাউকেই অবহেলা করতে চাইনা। যে কারণে, আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে অনার্স কোর্স চালু এবং প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নবম শ্রেণি থেকেই বিষয় ভিত্তিক বিভাজন (বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য) তুলে দেয়ার বিষয়ে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের (দেশে) ক্লাশ নাইন থেকে কে কোন সাবজেক্টে যাবে সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার কোন দরকারই নাই। কারণ, এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সব সাবজেক্টই তারা পড়তে পারে। শিক্ষার্থীরা সবই পড়–ক তারপর যেখানে সে মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে সেটা করে নেবে। তাহলে অন্তত, তাদের মেধা বিকাশের একটা সুযোগ হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটা নেই, কারণ, বিজ্ঞান না পড়ার ফলে অনেক বিষয়েই শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আর আমাদের দেশে ১৯৬৩ সালে আইয়ুব খান (পাকিস্তান আমলে) সরকারের সময় এটা করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ইউজিসিকে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর ও নির্দেশ দেন। একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় সরকারের প্রচেষ্টার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুল, কলেজ এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন আমাদের মঞ্জুরি কমিশন খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি নিয়োগ সংক্রান্ত একটা অভিন্ন নীতিমালা করা। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত ছাত্র-ছাত্রী থাকবে সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়াটাও জরুরী। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে মান সম্মত শিক্ষা দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর এখন সেটা খুব কঠিন কাজ নয়।
‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস কওে দেওয়ায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের ‘জবাবদিহিতা’ নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে এটা ছিল না। যে যার মতো একখানা বিশ্ববিদ্যালয় করতো। এক বিল্ডিংয়েই দেখা যায় তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়। আমার কাছে অবাক লাগতো সে সময়।
এ সময় প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় ‘আজকালকার শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মেধাবী’- এমন অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। কারণ, বাংলাদেশকে আমরা যেভাবে গড়ে তোলার সুদূর পরিকল্পনা নিয়েছি তার যেন বাস্তবায়ন করে যেতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনটা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করেছি এবং প্রত্যেকটা বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা তৈরী করা হবে। যেখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্য্যালয় ছিল সেখানে কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং বিজ্ঞান শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য ‘৯৬ সালেই ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইন পাশ করে যাই।
সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সর্বোচ্চ নম্বর /সিজিপিএ প্রাপ্তদের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদক-২০১৮’ তুলে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে স্বর্ণ পদক বিতরণ করেন। যাদের মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র এবং ছাত্রী রয়েছে ৮৮ জন। ২০১৭ সালে ১৬৩ জন শিক্ষাথী প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদক লাভ করেছিলেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।