পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মুসলমানের এই দেশে সেন্ট পার্সেন্ট নাগরিক যে কোন ধর্মে বিশ্বাসী। সাংবিধানিকভাবে এদেশ সকল ধর্মবিশ্বাসী মানুষের শান্তি ও সম্প্রীতির মাতৃভূমি। এদেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলেও অসাধারণ নৈপুণ্যে এবং প্রাজ্ঞ বাক্যবিন্যাসে অন্যসকল ধর্মও সমান মর্যাদা প্রাপ্ত হইবে, এমন কথা আমাদের সংবিধানকে বিশিষ্ট করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার প্রজ্ঞায় দূরদর্শিতায় এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত দক্ষতায় মন্ত্রিসভা সাজিয়েছেন। স্মার্ট ও চৌকস কেবিনেট হয়ে থাকে সফল। যার অবয়ব হবে ছোট বোঝাপড়া হবে বেশি। তৎপরতা ও গতিশীলতা হবে ঈর্ষণীয়।
সম্প্রতি এডভোকেট শেখ আবদুল্লাহকে ধর্ম বিভাগ দেওয়ায় অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দেশের সংশ্লিষ্ট মানুষেরা প্রীত ও আনন্দিত। কারণ তিনি আক্ষরিক অর্থেই নেত্রীর আপন মানুষ। সেই তরুণ বয়স থেকে কোনরকম ওঠানামা ছাড়া তার গ্রাফ একই রকম উচ্চতায় বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমান আন্তরিক অনুগত ও শুভকামনায় সমৃদ্ধ। তিনি নেত্রীর সংসদীয় এলাকার স্বীকৃত কর্মী এবং এমপি শেখ হাসিনার স্থানীয় কর্মসম্পাদক হিসেবে মানুষের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর অন্তিম শয্যায় যত ভক্তকুল বিগত সময়ে সুদিনে-দুর্দিনে গিয়েছেন তারা সবাই শেখ আবদুল্লাহ সাহেবকে ভালোবাসেন। অনেকে তাকে শ্রদ্ধাভরে সালাম করেন, বুকে টেনে নেন, শ্রেণিমত শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ তার কদমবুসিও করেন। এসবই আমাদের বাস্তবে দেখা। সত্তরোর্ধ্ব এই ব্যক্তিটি আজ তার পাওনা হিসেবেই বুঝে পেয়েছেন ধর্মমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তবে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার ব্যক্তিত্ব সিনিয়রিটি ও মর্যাদার অবস্থানটি কেন জানি সঠিক যায় না। তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগের ধর্মসম্পাদক, দলের সব নেতা কর্মী তার আদর আপ্যায়ন স্নেহ মমতায় আপ্লুত।
ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছের মানুষ হিসেবে তার উদারতা প্রাণখোলা আচরণ ও দিলখোলা মেহমানদারি দেখে মানুষ মনে করে এসবই জাতির পিতার এবং তার কন্যার অতুলনীয় ঔদার্য ও সামাজিকতারই প্রভাব। অন্যতম বৃহৎ মুসলিম দেশ হিসাবে অন্য মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেখে বিব্রতবোধ করে। পৃথিবীর অনেক সমাজের দৃষ্টিতেই এতে বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব কম বলে মনে হয়। কারণ, আরব ও মুসলিম দেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কেবল পূর্ণ মন্ত্রী নয় বরং শাসকের পরের প্রভাবশালী দু’য়েকজনের মধ্য থেকে একজনকে ধর্মমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এমন একজন আস্থাভাজন ও সকল মহলে পরিচিত আর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ধর্ম বিভাগের জন্য মনোনীত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি উত্তম নজির স্থাপন করলেন। শুধু পূর্ণ মন্ত্রী করে নিলেই সৌন্দর্য পূর্ণ মাত্রা লাভ করতে পারে।
বাংলাদেশে কোন ধর্মের লোক এমন নেই যারা শেখ আবদুল্লাহ সাহেবকে দূরের মনে করেন। মুসলমানরাও রুচি ভাবনা বা স্কুল অব থট ভেদে এই ব্যক্তিটিকে পঞ্চাশ বছর ধরে চিনেন। এমন কোন পীর মাশায়েখ বা দরবার নেই যেখানে সুদিন-দুর্দিনে শেখ আবদুল্লাহ সাহেবের যাতায়াত ছিল না। দেশের এমন কোন দীনী প্রতিষ্ঠান কিংবা বড় ওলামা মাশায়েখ নেই যাদের সাথে শেখ আবদুল্লাহ সাহেবের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ নেই বা ছিল না। ধর্মীয় অঙ্গনের সঙ্গে যোগাযোগে নিয়োজিত ও আদিষ্ট যে কোন দায়িত্বশীলের চেয়েও এডভোকেট শেখ আবদুল্লাহ সাহেবের কললিস্টে দেশসেরা ওলামায়ে কেরামের নাম্বার বেশি। অন্তত তার ব্যক্তিত্বের জনপ্রিয়তার গ্রহণযোগ্যতার ও সিনিয়রিটির কারণেও তাকে পূর্ণ মন্ত্রী করা উচিত। তাছাড়া বিগত হজে তার দক্ষতা ও আন্তরিকতা বাংলাদেশে এমন একটি নির্ঝঞ্ঝাট হজ ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয়েছে যা বিগত বহু বছরে দেখা যায়নি। গত হজই ছিল অসহায় ও ভোগান্তিগ্রস্ত হজযাত্রী প্রবীণ নারী ও পুরুষের চোখের পানিমুক্ত হজ। সৌদি কর্তৃপক্ষও এবারকার সৌন্দর্য লক্ষ করে প্রশংসা করেছেন। তবে ধর্মমন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী থাকায় প্রতিপক্ষের সাথে ডিল করতে তাদের সমস্যা হয়েছে। কেননা সৌদি আরবে কয়েক বছর যাবৎ ধর্ম বিষয়ে দুইজন পূর্ণমন্ত্রী কাজ করে থাকেন। একজন আওকাফের দায়িত্বে অন্যজন শুধু হজ। আমাদের দেশে ধর্ম আওকাফ ও হজ সবমিলিয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী। তবুও ব্যক্তিটি তার সম্পর্ক যোগাযোগ মর্যাদা ও পাবলিক পারসেপশান বিচারে কম করে হলেও মন্ত্রী হওয়ার কথা। প্রতিমন্ত্রী কিছুতেই নয়। প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রে আওকাফ ও ধর্ম বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ একজন পূর্ণমন্ত্রী দেখেন। ধর্মপ্রাণ মানুষের বাংলাদেশেও ধর্মমন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রীই শোভনীয়।
গত হজে এদেশের ইতিহাসে এক অভ‚তপূর্ব সম্ভাবনাকে মাননীয় মন্ত্রী এডভোকেট শেখ আবদুল্লাহ তার প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতায় সফল করে দেখিয়েছেন। বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিত্বশীল অর্ধশতাধিক আলেমকে তিনি হজের সফরে শামিল করে বলা চলে বাংলাদেশের গোটা ধর্মীয় অঙ্গনকেই গভীরভাবে স্পর্শ করেছেন। ক্ষমতাবান রাজনীতিক এমপি মন্ত্রী আমলা আর্মি ও পেশাজীবীদের এ সুযোগে হজে যাওয়ার সুবিধা থাকলেও ওলামায়ে কেরামের জন্য ছিল এ এক সোনার হরিণ। শেখ আবদুল্লাহ সাহেব এই উদ্ভাবনী চিন্তার দ্বারা অসংখ্য আলেমভক্ত জনগণকে নেত্রীর আরো কাছে নিয়ে এসেছেন। অনেক মানুষের দোয়া হাসিল করেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ ধর্মমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্বের আসনে যে কোন বিচারে নেত্রীর বর্তমান সিলেকশান এডভোকেট শেখ আবদুল্লাহ সাহেবই তুলনাহীন সুযোগ্য। এ বিষয়ে মতামত দিতে পারেন এমন অভিজ্ঞ মহলের সাথে এই ভাষ্যকার কথাবার্তা বলেও বিষয়টির পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ যুক্তি ও সমর্থন পেয়েছেন। বাংলাদেশের বড় বড় পাঁচটি দরবারের প্রধান ব্যক্তির সাথে কথা বলে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন এই প্রস্তাবনার পক্ষে পাওয়া গেছে। যারা ধর্মীয় হিসেবে বাংলাদেশের আট দশমাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। কওমী অঙ্গনের সর্বোচ্চ অথরিটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রধান মুরব্বির সাথে আলাপচারিতায় এ প্রস্তাবনার স্বপক্ষে প্রাণখোলা সমর্থন ও দোয়া পাওয়া গেছে।
আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে এর সভাপতি জনাব আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেবের সাথে কথা বলে এ চিন্তাটির পক্ষে সুস্পষ্ট সমর্থন ও ইতিবাচক মতামত পাওয়া গেছে। তিনি একথাও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম বিষয়ক আন্তরিক মনোভাবের একটি প্রতিফলন শেখ আবদুল্লাহ সাহেবের মধ্যে দেখা যায়। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কওমী সনদের স্বীকৃতি, ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণসহ বহু ধর্মপ্রিয় কাজ থেকে আওয়ামীলীগের গণমুখী ধর্মপ্রাণ অংশটি যে বার্তা পায়, তাদের চোখে নেত্রীর পর শেখ আবদুল্লাহ সাহেবও দলটির এই উদার ধর্মপ্রিয় ও সৎ চিন্তার অন্যতম ধারক।
আওয়ামীলীগের কিছু মন্ত্রী এমপি জাতীয় ও স্থানীয় নেতা এই ভাষ্যকারের কাছে তাদের যতদূর সম্ভব সতর্ক ও সংযত মতামত দিয়েছেন। কিছু কুটনীতিকের সাথেও এ মর্মে আলাপচারিতার সময় পূর্ণমন্ত্রীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা গেছে। যা না হলে অনেক ক্ষেত্রে কারিগরি অসুবিধা দেখা দেয়। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের কেবল হজ ও ধর্মীয় কাজকর্মই নয় বরং দেশের প্রায় অর্ধেক প্রবাসী সেসব দেশেই বসবাস করেন। তাদের সুখ সুবিধা দেখাও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর অলিখিত দায়িত্ব হিসেবে এসে যায়। এসবই মিডিয়ার মানুষ হিসেবে আমাদের জানতে শুনতে ও বুঝতে হয়।
এখানে সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা দক্ষতা প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাকে বাইরে থেকে কেউ কিছু বলে দেওয়ার অবকাশ নেই। আমরা কেবল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বহু কাজ, বিশিষ্ট সমাজের সাথে গণসংযোগ বিশেষায়িত সমাজের সাথে সুসম্পর্ক হজ সম্পাদনা মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের স্বার্থ লাভ করাসহ অসংখ্য বিষয় আরো সুচারুরূপে করার সুবিধা হতে পারে ভেবেই ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ আবদুল্লাহ সাহেবকে পূর্ণমন্ত্রী করার বিনীত আবেদন রাখলাম। কিছু কারণও উল্লেখ করেছি যাতে বোঝা যায় যে কেন তাকে পূর্ণমন্ত্রী করা দরকার। আর বলার চেষ্টা করেছি, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের ধর্মমন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী থাকাই শোভনীয়। এখন এ যুক্তি আলোচনা মতামত ও প্রস্তাবনা শোনার দায়িত্ব শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। আশা করি, তিনি এ নিবেদন বিবেচনায় নেবেন। একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকারের নিঃস্বার্থ ও নির্মোহ আকুতি শুনবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।