Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লঞ্চ ও ট্রেনে স্বাচ্ছন্দ্য যাত্রা

প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের কাছে এবারের ঈদ যাত্রাটা হয়ে উঠেছে স্বস্তির। প্রতিবারের মত এই ঈদেও বাড়ী ফেরা নিয়ে মানুষের মধ্যে ছিল অনেকটা ভোগান্তির আশংকা। ঈদের ছুটির সাথে যোগ করে গতকাল সোমবার ছুটি ঘোষণা করার মধ্যে দিয়ে ঈদের ছুটি হয় ৯ দিনের। এতে করে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ী ফেরার সুযোগ পায়। টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত যাত্রীবাহনের ঝুঁকি এসব কোন কিছুর অভিযোগ নেই এবারের ঈদে। নেই গ্রামমুখি মানুষগুলোর ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে লম্বা যানজটে পরে থাকার ভোগান্তি; কিংবা মাইলের পর মাইল লম্বা যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তির চিত্র। গত ক’দিন ধরেই রাজধানী ঢাকা থেকে ঘরে ফেরা মানুষের অবিরাম স্রোত চলছেই। তবে এখন পর্যন্ত অনেকটাই দুর্ভোগহীনভাবে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারছেন বলেই শোনা যাচ্ছে। ঈদের ছুটির শুরুর আগে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়ে যাওয়ায় মানুষের ঘরে ফেরার চাপ এক কিংবা দুই দিনে না পড়ার কারণে এবারের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছুটি রোজার প্রথম দিন থেকে। ফলে যাত্রার ভোগান্তি এবার কম বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
ঈদ ছুটির চতুর্থ দিন গতকাল সোমবারও কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের চাপ ও ভোগান্তি ছিলো না। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যারা বাড়ির উদ্দেশ্যে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন তারা কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছান। তবে লোকাল ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি ছিলো একটু বেশি।
সোমবার কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে এ দৃশ্য দেখা গেছে। তবে শেষ বিকেল ও সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীদের উপস্থিতি বেড়ে যায়।
এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ট্রেনে যাত্রী কম থাকায় হকার, মুচি ও কুলিদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক হকার।
সিলেটের হবিগঞ্জের যাত্রী উত্তরা টাউন কলেজের সমাজ কর্মবিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাহিদা খাতুন জানান, কেবল ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে প্রতিবছর গ্রামের বাড়িতে যান তারা। তিনি বলেন, অন্যবার ট্রেনে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যায় না। কিন্তু আজ ট্রেনে কোনো ভিড় নেই, সিটের অতিরিক্ত লোক নেই, অনেক ভালো লাগছে।
ফরিদপুর সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির জানান, বৃদ্ধ-বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করতেই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। তিনি বলেন, অবাক করা বিষয়, প্রতিবছর এ দিনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু আজ সকাল ১০টায় ট্রেনের টিকিট কিনেছি। সিট পেয়েছি। আশা করছি আরামে বাড়ি ফিরতে পারবো।
ট্রেন যাত্রী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হেলাল আহমেদ জানান, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করার পাশাপাশি বাচ্চাদের গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত করাতে বাড়িতে যাচ্ছি।
সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের কেন্টিন স্টাফ বখতিয়ার রানা জানান, লোক কম, সিটও ফাঁকা। অতিরিক্ত লোক নেই বললেই চলে।
সার্বিক বিষয়ে স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, লম্বা ছুটির কারণে এবার ট্রেনে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় কম। দীর্ঘদিন সময় পাওয়ার ফলে মানুষ একটু আরাম-আয়েশ করে বিভিন্নভাবে বাড়ি ফিরছেন। এজন্য ট্রেনে অন্যান্যবারের চেয়ে ভিড় কম। গার্মেন্ট ছুটির পর সন্ধ্যা থেকে স্টেশনে লোক বাড়তে শুরু করে।
রাজধানীর সদরঘাটে বিগত বছরগুলোতে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবার তেমন ভিড় নেই। যাত্রীদের অপেক্ষায় ঘাটে নোঙর করা রয়েছে কম কমপক্ষে ৩৫ লঞ্চ। সবগুলো লঞ্চের করণিক ও খালাসিরা যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। কিন্তু যাত্রীদের তেমন সাড়া নেই।
সোমবার দুপুর বারটার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে এ দৃশ্যই দেখা যায়।
লঞ্চ টার্মিনালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এবার দীর্ঘ ছুটি আর বর্ষার কারণে নৌপথে যাত্রী কম। গতকাল সোমবার যে যাত্রী পাওয়ার কথা ছিলো সে রকম যাত্রির দেখা নাই।
এদিকে যে সকল লঞ্চ সন্ধ্যা ৭টায় সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাবে সেগুলোও দুপুর থেকেই নোঙর করে বসে আছে। যদি আগে থেকে যাত্রী পায় এই আশায়।
কয়েকটি লঞ্চের খালাসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর সন্ধ্যা সাতটার লঞ্চ দুপুর বারটা একটার মধ্যেই বোঝাই করে রওনা হতে বাধ্য হয় যাত্রীদের চাপের জন্য। এবার নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ ছাড়লেও যাত্রী সংখ্যা আসন সংখ্যার চেয়েও কম।
ঘাটের টিআই মোহাম্মদ শরীফদ্দিন বলেন, এমনিতে প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী কম, আবার পরিবেশও বৈরী। সন্ধ্যার লঞ্চগুলো ঘাটে দুপুর থেকেই যাত্রী তুলছে।
এ কর্মকর্তার তথ্যানুযায়ী দুপুর বারটা পর্যন্ত ঘাট ছেড়ে গেছে ১৮টি লঞ্চ। ঘাটের সার্বিক বিষয়ে বিআইডবিøউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক বলেন, যাত্রী সংখ্যা কম। তবে আশা করছি বিকেলে বাড়বে। কখন বাড়বে তা তিনি বলতে পারেননি।
সদরঘাটে কথা হয় মিরপুরের একটি গার্মেন্টে কর্মরত সাকির আহমদের সাথে। তার গ্রামের বাড়ী নোয়াখালীর হাতিয়ায়। সদরঘাটে লঞ্চে তুলে দিতে এসেছেন পরিবারের সদস্যদের। তিনি যাবেন আগামীকাল (আজ মঙ্গলবাল)। তার মতে, অন্যান্যবার লঞ্চে জায়গা পেতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হতো। এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতিরিক্ত যাত্রী নেই। তিনি বলেন, টানা নয় দিনের ছুটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবার গার্মেন্টসগুলোও পর্যায়ক্রমে বন্ধ দেয়া হয়েছে। এতে করে নাড়ির টানে এবারের ঘরে ফেরাটা হবে অনেকটা স্বস্তির ও আনন্দদায়ক। ঈদের মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবার বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে ছুটির শুরু থেকেই।
সরজমিন সদরঘাট টার্মিনালে দিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ যাত্রীদের মাঝে কোন রকম হুড়োহুড়ি নেই। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার প্রবণতাও নেই। যাত্রীরাও লম্বা ছুটি পাওয়ায় সুবিধামত বাড়ী ফেরার সিডিউল তৈরি করে নিয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে কমলাপুল রেল স্টেশনে গিয়েও তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। বেলা ১২টা পর্যন্ত স্টেশন থেকে ১৪টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সোয়া এক ঘণ্টা এবং খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে ঢাকা ছেড়েছে বলে এক কর্মকর্তা জানান। কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, সোমবার বিভিন্ন ধরনের ১৩২টি ট্রেন কমলাপুর আসা-যাওয়া করবে। তিনি জানান, দেরিতে স্টেশনে পৌঁছায় দুটি ট্রেন দেরিতে ছাড়তে হয়েছে।
শুক্রবার থকে টানা নয় দিনের ছুটি শুরু হলেও কমলাপুর রেল স্টেশনে সকালে দেখা যায়নি তেমন ভিড়; কেউ কেউ দুপুরে স্টেশনে এসেও ঈদের টিকেট পেয়েছেন। অবশ্য দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের ভিড় খানিকটা বেড়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লঞ্চ ও ট্রেনে স্বাচ্ছন্দ্য যাত্রা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ