Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

এত বিদ্যুৎ যায় কোথায়?

প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৭ এএম, ৫ জুলাই, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের সাথে কোনো ব্যবধান নেই, সমানে সমান। এরপরও চলছে লোডশেডিং। রাজধানীতে যেমন-তেমন, গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি একেবারেই ভয়াবহ। এতে করে ঈদের ছুটিতে ঘরে ফেরা মানুষকে চরম ভোগান্তির কবলে পড়তে হয়েছে। যারা বিদ্যুৎ নিয়ে নানা উন্নয়নের কথা শুনেছেন রাজধানীতে থেকে, তারাই গ্রামে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছেনÑতাহলে এত বিদ্যুৎ যায় কোথায়?
রমজানে ঈদ করতে বরিশাল গেছেন আসাদুজ্জামান স¤্রাট নামে এক গণমাধ্যম কর্মী। তিনি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার এলাকার লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা জানিয়ে। তিনি তার ওয়ালে লিখেছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন নিয়ে সরকারের বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার কতটা অমিল, এটা গ্রামে না এলে বোঝা যাবে না। বিদ্যুতের এই দুরবস্থা শুধু বরিশালেই নয়; বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, নিলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ দেশের প্রতিটি এলাকার।
চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না গ্রামাঞ্চলের মানুষ। দিনে চার থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং সহ্য করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিদ্যুৎই এখন গ্রাম বাংলার মানুষের অন্যতম ভোগান্তির কারণ। অথচ এ বঞ্চনা দেখার কেউ নেই। গ্রাহকদের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। রাত ৯টার আগে বিদ্যুৎ আসে না। অথচ এই সময়টাতেই বিদ্যুতের প্রয়োজন বেশি। পুরো রমজান জুড়েই গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকা নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ সময় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে। বাড়িতে ফ্যান, বাতি, কম্পিউটারসহ বিদ্যুৎনির্ভর সব কাজ করা হয়। একই সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। অথচ এই সময়টাতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে লোডশেডিং। এ কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন।
গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আরইবি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। এছাড়া জরাজীর্ণ সরবরাহ লাইন ও ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার লোডশেডিংয়ের অন্যতম কারণ।
গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে স্বীকার করে সম্প্রতি আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে গ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি। আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছি না। দুর্বল সরবরাহ লাইন, ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের কারণেও লোডশেডিং হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরইবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে সারা দেশে ৭০ হাজার ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড আছে। এছাড়া সরবরাহ লাইন রয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার কিলোমিটার। জাইকা ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় এগুলোও মেরামতের কাজ চলছে।
দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার সন্নিকটে নরসিংদীর গ্রামাঞ্চলে দিনে-রাতে মিলে দৈনিক ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। বন্ধের দিনেও একই অবস্থা।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দিনে কয়েক দফা লোডশেডিং হয়। আর সন্ধ্যায় একবার বিদ্যুৎ গেলে দুই-আড়াই ঘণ্টায় আর পাওয়া যায় না। লোডশেডিংয়ের কারণে এখানে ব্যবসাতেও মন্দা যাচ্ছে। অন্ধকার দোকানে ক্রেতা আসে না।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় প্রতিদিনই সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। আর দিনে চার-পাঁচবার লোডশেডিং হয়। প্রতিবারই এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের কারণে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যপারে পিডিবি’র এক কর্মকর্তা জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। একই সময়ে উৎপাদন বাড়ে ৬২ শতাংশ। অথচ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন বাড়ানো হয় যথাক্রমে ১৭ ও ১১ শতাংশ। একই ধারাবাহিকতা গত দুই বছরও অব্যাহত ছিল।
ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে গ্রীষ্মের শুরু থেকেই নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে লোডশেডিং। সঞ্চালন ও বিতরণ সক্ষমতা না বাড়ালে ২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ২৫ শতাংশ অব্যবহৃত থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার দ্বিগুণ সঞ্চালন ও বিতরণ সক্ষমতা থাকতে হয়। বর্তমানে এটা সমান সমান রয়েছে। এজন্য কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বেশকিছু লাইন অনেক পুরনো। এগুলো বাড়তি লোড নিতে সক্ষম নয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তবে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন করা হচ্ছে। এগুলো সম্পন্ন হলে বিতরণ ও সঞ্চালন সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।

 



 

Show all comments
  • আল আমিন ৫ জুলাই, ২০১৬, ৩:০৪ পিএম says : 0
    উৎপাদন বাড়ানোর সাথে সাথে মানুষের প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এত বিদ্যুৎ যায় কোথায়?
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ