Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদুল ফিতর ঘিরে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা

প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় জমে উঠেছে রাজশাহীর ঈদ বাজার। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে কেনাকাটা। চিরচেনা টানাপোড়েনের মধ্যে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ছোট-বড় বাজার, শপিংমল, ফুটপাত, আর শোরুম সর্বত্র ভিড়। দরজিবাড়িগুলো ব্যস্ত অর্ডার নেয়া কাপড় বুঝিয়ে দিতে। কোথাও কোথাও মনমতো সেলাই হয়নি বলে কথা বিনিময়ও হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় ফুটপাতে। মধ্যবিত্ত আর নি¤œবিত্তরা সাধ্যমতো কেনাকাটার চেষ্টা করছেন। ভিড় জুতা-স্যান্ডেল আর কসমেটিক্সের দোকানগুলোয়। বিউিটি পারলার সেলুনগুলোতে লাইন। কাপড় ধোয়ার লন্ড্রিগুলোতে ভিড় কম নয়। ঈদের নতুন জামা-কাপড় হয়নি। তাই বলে তো আর ঈদের দিন ঘরে বসে থাকা যায় না। পুরানোটা ধুয়ে ইস্ত্রি করে নেয়া। ভিড় আতর-সুরমা-টুপির দোকানেও। পোশাক জুতা স্যান্ডেল প্রশাধন সামগ্রীর পর এখন গৃহকর্তারা ছুটছেন বিভিন্ন কনফেকশনারী আর মুদি দোকানে। বিত্তবানরা কিনছেন বিদেশ থেকে আসা সেমাই, সুগন্ধী চাল, বিরানীর মশল্লাসহ রকমারী পণ্য। অন্যরা যাচ্ছেন মুদি দোকানে। সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে অন্যান্য জিনিসের সাথে সেমাই, চিনি, তেল সবই। ভিড় কাঁচা বাজারেও। পেঁয়াজ, আদা, রসুন, গরম মশল্লা সবই বেচাকেনা চলছে। তবে আরেক দফা দাম বেড়েছে সব জিনিসের। এলাচ, জিরে, পেস্তাবাদাম বা গরম মশল্লা বলে পরিচিত সেই বাজারেও গরম কম নয়। ঈদের আগ দিনের রাত পর্যন্ত এমন ধারা থাকবে বলে বিক্রেতারা জানান। তৈষযপত্রের বাজারও জমজমাট। যাদের সাধ্য আছে তারা কিনছেন নতুন নতুন ফিরনী সেমাই সেট, প্লেট গøাস ট্রে গামলা চামচ ইত্যাদি। মেহমানদের সামনে নতুনভাবে সেমাই মিষ্টি পোলাও উপস্থাপন করাই লক্ষ্য। ভিড় কম নেই পর্দা আর সোফার কাপড়ের দোকানে। ঘরে নতুন পর্দা আর সোফার কভার বদলানোর জন্য। সোনার দোকান আর টিভি ফ্রীজের শোরুমগুলোতে ভিড়। এবার বেশী বিক্রি হচ্ছে স্মার্ট ফোন। এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা ঝুঁকে পড়েছে। কোম্পানীগুলো অনেক ছাড় দেয়ায় উপহার হিসাবে ব্যবহার বেড়েছে।
এদিকে রাজশাহী ফাঁকা হতে শুরু করেছে। আবার আসছেও। আসা-যাওয়ার ভিড় নজরে পড়ে রেলষ্টেশন আর বাস টার্মিনালে গেলে। লোকের পদভারে মুখরিত এসব স্থান। এমনিতে শিক্ষা নগরী হবার কারনে এখানে বাইরে থেকে পড়তে আসে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। এসব ছেলে মেয়েদের প্রাণ চাঞ্চল্য মুখর থাকে সর্বত্র। স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ওরা বাড়ি ফিরে গেছে। ফলে বেশ ফাঁকা নগর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মতিহার চত্ত¡র এখন শুনসান। ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজও একই অবস্থা। মেস আর ছাত্রী নিবাসগুলো খালি।
বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে আরো কয়েক হাজার মানুষ। উত্তরের রংপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে রমজানের শুরুতে এসব শ্রমজীবী মানুষ ভিড় করে কাজের জন্য। এক মাস তারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কাজ করে। কেউ রিক্সা চালায় কেউ বিভিন্ন মার্কেটে কাজ নেয়। কেউ ফেরী করে। এ সময় ব্যবসায়ীদের বাড়তি লোকের প্রয়োজন হয়। এরা সে প্রয়োজন মেটায়। বছরের সিংহভাগ সময় ভাঙ্গাচোরা রিক্সাগুলো গ্যারেজ বন্দী হয়ে থাকলেও ঈদের সময় তা সচল হয়। সারা মাস কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে গ্রামে থাকা পরিবার পরিজনদের জন্য সাধ্যমত বাজার সদাই করে ফিরে যায় ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। এবারো তার ব্যাতিক্রম নেই। আবার অনেকে ছুটে আসে যাকাত ফিতরার টাকা কাপড় সংগ্রহের জন্য। তারাও ফিরে যায় নিজ নিজ ঠিকানায়।
এদিকে পুরো রমজান জুড়ে আবহাওয়া দাপট দেখিয়েছে। আষাঢ় এসেছে নামেনি কাংখিত বর্ষন। ভ্যাপসা গরম সবাইকে ভুগিয়েছে। সেই মুখ গোমড়া করা আষাঢ় মধ্যভাগে এসে ঝুপঝাপ বৃষ্টি দিয়ে জানান দিচ্ছে তার কথা। চলছে এ রোদ্র এই মেঘের লুকোচুরি খেলা। হঠাৎ হঠাৎ ঝুপঝাপ বৃষ্টি ছন্দপতন ঘটাচ্ছে ঈদের শেষ মুহুত্তের কেনাকাটায়। সিটি কর্পোরেশন বসে নেই। নগরীর ঈদগাহগুলো নিয়ে চলছে তাদের প্রস্তুতি। মাঠ পরিস্কার ঈদ মোবারক সম্বলিত তোরণ বানানোয়। ঈদগাহ কমিটিগুলো তাদের মত করে সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সব মিলিয়ে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে ঘিরে এখন সর্বত্র ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। গৃহবধুদের ব্যস্ততাও কম নয়। ঘরদোর সাফ সুতরো করা। ঈদের দিনের খাবার মেনু তৈরী। এরপর লিষ্ট ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে কর্তার হাতে এটা আনো ওটা আনা হয়নি। থলে হাতে বাজার দৌড়াচ্ছেন কর্তারা। ভাবছিলেন ঈদের লম্বা ছুটি পেয়ে একটু আয়েস করবেন। তার উপায় বুঝি নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদুল ফিতর ঘিরে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ